স্টাফ রিপোর্টার : আজ শুক্রবার ২৩ মার্চ। ঊনিশশ একাত্তারের এ দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি মাইলফলক। পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবসেই শতকরা ৫৬ ভাগ জনঅধ্যুষিত পূর্ব বাংলার জনগণ পাকিস্তানকে সম্পূর্ণরূপে বাতিল করে দিয়ে স্বাধীনতার প্রশ্নে আবার উদ্দীপ্ত হয়ে উঠলো। এদিন কেবল পাকিস্তানী সৈন্যদের আবাসস্থল ক্যান্টনমেন্টগুলো ছাড়া আর কোথাও পাকিস্তানের পতাকা ওড়েনি। সচিবালয়সহ সকল সরকারি অফিসেও বাংলাদেশের পতাকাই পত্পত্ করে উড়েছে। রাজধানী ঢাকা এদিন আবেগাপ্লুত অযুত জনতার মিছিলে ঊর্মিমুখর। ভোররাতে পাকিস্তানী সৈন্যরা রাস্তায় তাদের টহলদান জোরদার করাসহ বিভিন্ন কর্মপন্থা গ্রহণ করবে বলে আগের দিন আশঙ্কা করা হয়েছিল। তা না হওয়ায় জনতার প্রাণচাঞ্চল্য এবং আত্মবিশ্বাস আরো বেড়ে গিয়েছিল। তাই এতো মিছিল। প্রায় প্রতিটি মিছিলের সামনে এসেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেশ উৎফুল্ল অথচ দৃঢ়তার সাথেই একটি কথা বার বার বলেছিলেন, ‘সংগ্রাম আর স্বাধীনতা আমার জীবনের মূলমন্ত্র। সংগ্রাম করে, যুদ্ধ করেই দেশ স্বাধীন করতে হবে।’ বেলা তিনটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত মিছিল কিছুটা কমে আসে। সে সময় শেখ মুজিব তার বাসভবনে উপস্থিত দেড় শতাধিক দেশী-বিদেশী সাংবাদিকের সাথে লনে বসে কথাবার্তা বলেন। বিকেল পাঁচটায় আবার মিছিলের ঢল নামে এবং তা প্রায় রাত নয়টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। এদিনও খান আবদুল ওয়ালী খান, মিয়া মমতাজ দওলতানা, এয়ার ভাইস মার্শাল (অবঃ) আসগর খান, মাওলানা শাহ আহমদ নূরানী ও পশ্চিম পাকিস্তান আওয়ামী লীগের নেতা গোলাম মোহাম্মদ খান লুননোর প্রমুখ পশ্চিম পাকিস্তানী নেতা এবং অধ্যাপক মোজাফফর আহমদসহ ক’জন বাঙালি নেতা শেখ মুজিবের সাথে সাক্ষাৎ করেন। দুপুর সাড়ে ১২টায় নিজ বাসভবনের সামনে আগত মিছিলের উদ্দেশে শেখ মুজিব বলেন, ‘আমি শান্তিপূর্ণভাবে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে চাই। প্রয়োজনে রক্ত দিতে প্রস্তুত। সাড়ে সাত কোটির একটি আত্মা জীবিত থাকতেও দাবি আদায়ের সংগ্রাম চলবে।’ ঢাকা পতাকার নগরীতে পরিণত হয়। শহরের প্রতিটি যানবাহন, দোকানপাট, সরকারি, আধাসরকারি-বেসরকারি ভবনে স্বাধীন বাংলার পতাকা শোভা পায়। সুপ্রিমকোর্ট, হাইকোর্ট, বেতার কেন্দ্র, বিএনআর, জিপিও ভবন এবং কতিপয় দূতাবাসেও পতাকা উত্তোলন করা হয়। স্বাধীন বাংলার পতাকার সাথে সাথে প্রতিরোধ দিবসের কালো পতাকাও ঘরে ঘরে উত্তোলন করা হয়। পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টোর অবস্থানকালে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালেও (বর্তমান শেরাটন) স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হয়। প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে জয় বাংলা বাহিনী পল্টন ময়দানে কুচকাওয়াজ করে। ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ জাতীয় সঙ্গীত ও বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে কুচকাওয়াজ শুরু হয়। দুপুর ১২টায় রৌদ্রোজ্জ্বল স্নিগ্ধ পরিবেশে শেখ মুজিব জয় বাংলা বাহিনীর আনুষ্ঠানিক অভিবাদন গ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশের পতাকা আন্দোলিত করে এবং গণবাহিনীকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, সাড়ে সাত কোটি মানুষের দাবির প্রশ্নে আপোষ নেই। স্বাধীন বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও স্বাধীন বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের যৌথ উদ্যোগে বায়তুল মোকাররমে এক গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন ছাত্রনেতা আ স ম আব্দুর রব, আবদুল কুদ্দুস মাখন, নূরে আলম সিদ্দিকী প্রমুখ। এছাড়া পশ্চিম পাকিস্তানের ছয়জন পার্লামেন্টারি নেতা এদিন বিকেলে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাসভবনে শেখ মুজিবের সাথে দেখা করেন। দেড় ঘণ্টাব্যাপী এ আলোচনা চলে। বৈঠকের পর অন্যতম নেতা মিয়া মমতাজ দওলতানা অপেক্ষমান সাংবাদিকদের বলেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকট নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং শেখ মুজিব ও পশ্চিম পাকিস্তানী নেতাদের আলোচনার অগ্রগতি ঘটেছে। এদিকে রণপ্রস্তুতির ষড়যন্ত্রের জাল বুনতে প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান এদিন সকাল সাড়ে ১১টায় কুর্মিটোলা ক্যান্টনমেন্টে যান কঠোর সেনা প্রহরায়। গত ১৫ মার্চ ঢাকা আগমনের পর প্রথমবারের মতো প্রেসিডেন্ট হাউজের বাইরে ক্যান্টনমেন্টে যান। প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা অবস্থানের পর জেনারেল ইয়াহিয়া ক্যান্টনমেন্ট ত্যাগ করে স্বীয় ভবনে প্রত্যাবর্তন করেন। পিপিপি প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো প্রেসিডেন্ট হাউজে লে. জেনারেল পীরজাদার সাথে ৭৫ মিনিট আর দলীয় লোকদের সাথে গভীর রাত পর্যন্ত পৃথকভাবে বৈঠক করেন।
Check Also
বিজয় দিবসে বিএনপির দিনব্যাপী কর্মসূচি
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে দিনব্যাপী কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল ৭টায় ঢাকা থেকে …