মাদক মামলার আসামির পরিবর্তে ১৫ দিন কারাভোগের পর ধরা খেলেন সেলিম মিয়া (৪৫) নামের এক ব্যক্তি। দীর্ঘদিনের পলাতক আসামি আখাউড়া পৌর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি সদস্য হান্নান মেম্বারকে বাঁচাতে সেলিম মিয়া বিনা দোষে জেলহাজতে।
গতকাল রোববার জেলা জজ আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়ার সময় এই চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ পেয়েছে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ৫নং আখাউড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের সদস্য, আখাউড়া পৌর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক হান্নান মেম্বার (৩৫) মাদক মামলায় অনেক দিন ধরে পলাতক রয়েছেন। মামলা নম্বর জিআর ৫১১/১৪ মূলে তার পরিবর্তে গত ১১ মার্চ আখাউড়া কুড়িপাইকা (নুরপুর বন্দের বাড়ি) গ্রামের ফায়েজ মিয়ার পুত্র রিকশাচালক সেলিম মিয়া হাজিরা দিতে গিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে আটক হন।
৭৩১ নম্বর মিস কেইস মূলে গতকাল রোববার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জজ আদালতে জামিনের জন্য সেলিম মিয়াকে হাজির করা হলে আইনজীবীদের মধ্যে প্রথমেই কানাঘুষা শুরু হয়। এক পর্যায়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দরা বিষয়টি আদালতকে অবগত করালে আদালত ১৬৪ ধারায় সেলিম মিয়ার জবানবন্দি রেকর্ড করে।
সেলিম মিয়া তার জবানবন্দিতে বলেছেন, একটি রিকশা কিনে দেয়ার লোভ দেখিয়ে হান্নান মেম্বার তার নিজের স্থলে সেলিম মিয়াকে আদালতে হাজির করেন।
আদালত তার জবানবন্দি গ্রহণ করে সেলিম মিয়াকে জেলহাজতে পাঠায় এবং সংশ্লিষ্ট ধারায় সেলিম ও হান্নান মেম্বারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আইনজীবী সমিতি বিষয়টি জেলা জজ আদালতকে মৌখিকভাবে জানালে আদালত সেলিম মিয়ার জবানবন্দি নেয় এবং সংশ্লিষ্ট আইনজীবীকে শোকজ করা হয়।
ঘটনাটিকে দুঃখজনক ঘটনা উল্লেখ করে শফিউল আলম বলেন, হান্নান মেম্বার মাদক মামলায় পলাতক আসামি হলেও আখাউড়ায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়িয়েছেন। প্রশাসন থেকে শুরু করে রাজনৈতিক মহলগুলোতে তার ছিল অবাধ বিচরণ।
সেলিম মিয়ার বাবা ফায়েজ মিয়া (৮০) জানান, ‘অর্থের লোভ দেখিয়ে আমার সন্তানকে হান্নান মেম্বার জেলে পাঠিয়েছে।’ তিনি আইনজীবী ও হান্নান মেম্বারের সাথে যোগাযোগ করেও নির্দোষ সন্তানকে জামিনে মুক্ত করতে পারেননি বলেও জানান।
এদিকে হান্নান মেম্বারের এই অপকর্মের ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনা টের পেয়ে হান্নান মেম্বার কয়েক দিন আগেই দেশ ছেড়ে ভারতের ত্রিপুরায় পালিয়েছে বলে এলাকায় প্রচার রয়েছে।
একাধিক মাদক মামলার পলাতক আসামি এই হান্নান মেম্বার সম্পর্কে আখাউড়ায় আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে। সম্প্রতি এই হান্নান মেম্বার দক্ষিণ ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি প্রার্থী হিসেবে এলাকায় পোস্টার ফেস্টুন ব্যানার লাগিয়ে প্রচারে নেমেছিল।
এ ব্যাপারে হান্নান মেম্বারের সাথে যোগাযোগ করতে গেলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
আখাউড়া দক্ষিন ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো: জালাল উদ্দিন জানায়, লোকমুখে তার এই ঘটনা তিনি শুনেছেন। কয়েক বার ফোনেও কথা হয়েছে কিন্তু অফিসিয়ালভাবে তাকে এ ব্যাপারে কিছু জানানো হয়নি। ইউনিয়ন পরিষদের গত মাসিক সভায় হান্নান অংশ নেননি বলেও জানান চেয়ারম্যান।
এ ব্যাপারে আখাউড়া পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক তাকজিল খলিফা কাজল জানায়, হান্নান মেম্বার পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক হলেও তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সম্পর্কে তাদের জানা নেই। অভিযোগ প্রমাণ হলে দলীয়ভাবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামছুজ্জামান জানান, ইউপি সদস্য হান্নান মেম্বারের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পর্কে তার কার্যালয়ে কোনো তথ্য দেয়া হয়নি। তবে এমন অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।