সংবিধান প্রণেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, এদেশ কোনো ব্যক্তির নয়, কোনো গোষ্ঠীর নয়, কোনো দলের নয়-এদেশ জনগণের।
এদেশে অন্যায় করে কেউ পার পায়নি। অন্যায় ভাবে কোনো দিন ক্ষমতায় থাকা যায় না। গত ৪৭ বছরে অনেকেই ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার চেষ্টা করেছে, কেউ পারে নাই। ভবিষ্যতেও কেউ পারবে না।
রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স রুমে মঙ্গলবার গণফোরাম আয়োজিত স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ‘গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই’ শীর্ষক আলোচনা সভার সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. কামাল হোসেন আরও বলেন, নিজের দলের প্রতি এক রকম বিচার, বিরোধী দলের প্রতি আরেক রকম বিচার-এটা আইনের শাসন হয় না।
এটা স্বৈরশাসন। বঙ্গবন্ধু স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। বঙ্গবন্ধু গণতন্ত্রের কথা বলে গেছেন, রাজতন্ত্রের কথা বলেননি। বঙ্গবন্ধু লিখে দিয়েছেন এদেশ চলবে গণতন্ত্রে-রাজতন্ত্রে নয়। এদেশ কখনো রাজার অধীনে থাকবে না। জনগণের প্রতিনিধিরা দেশ চলাবে। জনগণের প্রতিনিধি কারা-যারা সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হবে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আমাদেরকে যে সংবিধান দিয়ে গেছেন সে সংবিধানের মূল কথা দেশের মালিক জনগণ। একজন জনগণ হিসেবে আমি দেশের মালিক, আমার অধিকার আছে ভোট দিয়ে আমার প্রতিনিধি নির্বাচন করার। সে অধিকার থেকে আজ জনগণকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
ড. কামাল বলেন, বঙ্গবন্ধুর লিখিত দলিলে (সংবিধানে) জনগণের যে স্বপ্নের কথা লেখা আছে, তা বাস্তবায়ন করতে হবে। যারা শোষণ করে, অর্থ আত্মসাৎ করে, দুর্নীতি করে-তারা সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে অন্তরায় সৃষ্টি করছে? কেউ যদি অন্যায়ভাবে দেশের সম্পদ আত্মসাৎ করে, পাচার করে-ক্ষমতায় থাকলেই তা কি কখনো বৈধ হয়ে যায়?
তিনি বলেন, স্বাধীনতার আগে পাকিস্তানী শাসকরা যা করেছে, এখন যারা দেশ থেকে পুঁজি পাচার করছে, তারা কী একই কাজ করছে কী-না? উপস্থিত জনতা তখন স্বতঃস্ফুতভাবে হ্যাঁ বলে ওঠেন।
এ সময় তিনি জানতে চান আমার বক্তব্য কোনো দলের সাথে বিরোধীতা নয়, তবে বঙ্গবন্ধু যে দায়িত্ব দিয়ে গেছেন সে দায়িত্ব থেকে আমরা কী মুক্ত থাকতে পারি? আমরা কী জনগণের সাথে বেঈমানী করতে পারি? উপস্থিত জনতা তখন সমস্বরে না বলে তাদের প্রতিক্রিয়া জানান।
ড. কামাল বলেন, আর ঘরে বসে থাকার সময় নেই। মানুষের মাঝে যেতে হবে, তাদের অধিকারের কথা বলতে হবে। বঙ্গবন্ধু বলতেন, বড় অর্জনের জন্য প্রয়োজন ঐক্যবদ্ধ জাতি, এখন ঐক্যর ডাক পৌঁছে দিতে হবে। সবাই মনে করছে পেয়ে গেছি, হয়ে যাবে।
কিন্তু এসব করে কেউ সাময়িকভাবে পার পেয়েছে-ভোগ করার সুযোগ পায়নি। মনে রাখবেন ঐক্যবদ্ধ হলে জনগণের জয় হবেই। এ সময় তিনি বলেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করে ন্যায় প্রতিষ্ঠার কাজ করে যেন মরতে পারি।
আলোচনা সভায় কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দকী বীর উত্তম বলেন, এই সরকার বৈধ নয়, সরকারকে যে মনোনীত করে সেই সংসদও বৈধ নয়। সংবিধানে পরিষ্কার লেখা আছে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে সংসদ গঠিত হবে।
১৫৪ জন তো প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হননি। খালেদা জিয়াকে নখড়া করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বড় লজ্জা হয়, যখন দেখি সরকারের এটর্নি জেনারেল বেগম খালেদা জিয়ার আপিলের বিরোধীতা করছে। এটা তো দুদকের মামলা, সরকার দাঁড়াবে কেন? এজন্যই জার্মান না কোন দেশ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে স্বৈরশাসন চলছে। তিনি আরো বলেন, যে টাকা খরচ হয়নি, সেই টাকার জন্য মামলা দিয়েছেন। এটা হতে পারতো টাকা কেন খরচ হয়নি।
তিনি আরো বলেন, আমাদের রাজনীতির দুর্ভাগ্য হলো বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে আওয়ামী লীগকে মারে, আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গিয়ে বিএনপিকে মারে। এটা থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ আওয়ামী লীগ-বিএনপিকে বাদ দিয়ে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় সরকার কায়েম করা।
মুক্তিযুদ্ধে তার লড়াইয়ের কথা উল্লেখ করে কাদের সিদ্দকী বলেন, যুদ্ধচলাকালীন মেঘালয়ের পাড়াড়ে বসে ছাত্রলীগের কতিপয় নেতা আমাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলো। সেদিন আব্দুর রাজ্জাক তাদেরকে বলেছিলেন, মারামারি পরো করো, আগে দেশটা স্বাধীন করতে দাও।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ড. জাফরউল্লাহ চৌধুরী বলেন, যুদ্ধ করতে বিদেশ থেকে দেশে ফিরেছিলাম। বর্তমান সরকারকে স্বৈরাচারী সরকার আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, এবার ২০০১৪ সালের নির্বাচন সম্ভব নয়। তারপরও কোনভাবে ক্ষমতা দখল করতে পারলেও আওয়ামী লীগ দেশ চালাতে পারবে না।
দেশ সিরিয়ায় পরিণত হবে। আগামীতে বিএনপি জিতলেও বিশৃঙ্খলা হবে, নৈরাজ্য হবে। খালেদা জিয়াও তা ঠেকাতে পারবেন না। সে জন্য দেশ বাঁচাতে হলে দরকার ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যর সরকার।
ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মাদ মুনসুর বলেন, একজন শেখ মুজিবকে বঙ্গবন্ধু এবং বঙ্গবন্ধু থেকে জাতির পিতা তৈরি করার পেছনে বহু মানুষের শ্রম-ঘাম আছে। আজ বড় দুখ হয় যখন দেখি সেই বঙ্গবন্ধুকে রাজনীতির পণ্যে পরিণত করা হচ্ছে। মহল্লার মাস্তান, চাদাঁবাজরা পোস্টারে বঙ্গবন্ধুর ছবি ব্যবহার করে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন গনফোরাম সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসিন মন্টু, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, আবম মোস্তফা আমিন প্রমুখ।