বগুড়া আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক (এডি) সাহজাহান কবিরকে প্রকাশ্যে দিবালোকে মুখোশধারী দুর্বৃত্তরা কুপিয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৫টা দিকে তাকে বগুড়া শজিমেক হাসপাতাল থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
বগুড়া শজিমেক হাসপাতাল উপপরিচালক ডা. নির্মলেন্দু চৌধুরী জানান, সাজাহান কবিরের অবস্থা আশঙ্কামুক্ত ছিল। তারপরও পাসপোর্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ইচ্ছায় তাকে স্থানান্তর করা হয়েছে। তাকে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হবে।
বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে পাসপোর্ট কর্মকর্তা সাহজাহান কবির গ্রামের বাড়ি যাওয়ার জন্য খান্দার এলাকার অফিস থেকে রিকশায় বাসস্ট্যান্ডে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে শাজাহানপুর উপজেলার কৈগাড়ি এলাকায় ৩-৪ জনের একদল দুর্বৃত্ত পথরোধ করলে তিনি দৌড়ে পার্শ্ববর্তী বন বিভাগের কার্যালয়ের একটি কক্ষে ঢুকে পড়েন। সেখানে গিয়ে তার মাথা, ডান হাত ও পায়ে উপর্যুপরি কুপিয়ে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
বগুড়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নুরে আলম সিদ্দিকী জানান, এডি সাহজাহান কবির খুব ভালো কর্মকর্তা। হামলাকারীদের গ্রেফতারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বগুড়া পুলিশের ছিলিমপুর ফাঁড়ির ইনচার্জ টিএসআই আবদুল আজিজ মণ্ডল ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত মঙ্গলবার অফিস চলাকালে কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে এডি সাহজাহান কবিরের বাগ্বিতণ্ডা হয়। তিনি বৃহস্পতিবার দুপুরে নিজ গ্রামের বাড়ি যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট অফিসের কোয়ার্টার থেকে রিকশায় শাকপালা বাসস্ট্যান্ডের দিকে যাচ্ছিলেন।
দুপুর দেড়টার দিকে তিনি কৈগাড়ি এলাকায় বন বিভাগের সামনে পৌঁছলে ৩-৪ জন মুখোশধারী তার ওপর হামলা চালায়। প্রাণরক্ষায় তিনি দৌড়ে বন বিভাগের একটি রুমে ঢুকে পড়েন। সেখানে গিয়ে দুর্বৃত্তরা তার মাথা, ডান হাত ও ডান পায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপাতে থাকে। তার আর্তচিৎকারে পাশের একটি মসজিদ থেকে মুসুল্লিরা বের হলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। সেখান থেকে সাহজাহান কবিরকে উদ্ধার করে বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিকাল সাড়ে ৩টার পর তাকে অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করে পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে নেয়া হয়েছে।
হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, সাহজাহান কবিরের ডান হাঁটু, ডান হাত এবং মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এর মধ্যে হাঁটু এবং হাতের জখম গুরুতর। তবে তিনি আশঙ্কামুক্ত।
শাজাহানপুর থানার ওসি জিয়া লতিফুল ইসলাম জানান, প্রাথমিকভাবে এ হামলার কারণ ও এর সঙ্গে কারা জড়িত তা জানা যায়নি।
সদর থানার ওসি এমদাদ হোসেন জানান, ঘটনাস্থল পার্শ্ববর্তী থানায় হলেও তারা হামলাকারীদের চিহ্নিত ও গ্রেফতারে মাঠে রয়েছেন।
তাৎক্ষণিকভাবে এ হামলার কারণ ও এর সঙ্গে কারা জড়িত সে সম্পর্কে পুলিশ কিছু বলতে না পারলেও পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক পাসপোর্ট অফিসের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, তাদের কার্যালয় দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছিল। টাকা ছাড়া এখানে কোনো কাজ হতো না। জনগণকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হতো।
সাহজাহান কবির সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগদানের পর তিনি অফিসকে দুর্নীতিমুক্ত ও সেবামুখী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার উদ্যোগ নেন। অফিসে জবাবদিহি বক্স স্থাপন করেন। অফিসকে দালালমুক্ত করেন। এতে আশপাশের প্রভাবশালী দালাল ও অফিসের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্ষুব্ধ হয়। গত ২-৩ দিন আগে সরকারদলীয় স্থানীয় এক পৌর কাউন্সিলর দলবল নিয়ে অফিসে এসে এডিকে হুমকি দিয়ে যান। তাদের ধারণা, তারাই এ হামলার সঙ্গে জড়িত।