আবু সাইদ বিশ্বাস: মুখে লম্বা দাঁড়ি, হাতে একটি লাঠি,ঘাড়ে একটি ব্যাগ দেখলে মনে হয় দরবেশ। আসলে ভিক্ষারি। বাপ-দাদার পেশা রক্ষার্থে ভিক্ষাবৃত্তি করেন তিনি। নাম আতিয়ার রহমান। বয়স আশির উর্ধ্বে। বাড়ি তালা উপজেলার মাগুরা ইউনিয়নের বলরামপুর গ্রামে। বাবা আয়েজউদ্দীন,দাদা তফিরদার পেশায় ছিলেন ভিক্ষারি। ছোট বেলা থেকেই ভিক্ষা করেন আতিয়ার। দুই ছেলে এক মেয়ের জনক তিনি। ছেলে মেয়ে সাবাই বিবাহিত। স্ত্রী নাবিয়াকে নিয়ে সংসার চালান আতিয়ার। ভিক্ষা করে একটি গরু ও কিনেছে আতিয়ার।
প্রতিদিন আতিয়ার ৫-৬টি গ্রাম ঘুরে দুই থেকে তিন কেজি চাল সংগ্রহ করে। সারাদিন সে থাকে হাসি খুশিতে। নেই রোগ ব্যাধি। নেই বাধ্যর্কের চিন্তা। সারাজীবন যেন ভিক্ষা করে যেতে পারেন এমন প্রতাশা তার।
স্ত্রীর নাম রাবেয়া,কিন্তু ভিক্ষুক আতিয়া নাবিয়া বলে। নাবিয়া প্রতিদিন তাকে ৪শ থেকে ৫শ টি তালপাতার টোকেন ধরিয়ে দেন। কতটি বাড়ি আতিয়ার গেল তার প্রমাণ রাখার জন্যে। এছাড়া অঞ্চল হিসেবে ভিক্ষা করেন তিনি। বার বার একই এলাকাতে যান না। ১৫ থেকে ২০ দিন পর পর এক একটি বাড়িতে যান ভিক্ষা করতে। ভিক্ষা নেয়ার সময় আতিয়ার একটি করে তাল পাতার টোকেন দিয়ে আসেন সেই বাড়িতে। এতে যারা ভিক্ষা দেন তারা আতিয়ার এবং তার স্ত্রীকে নিয়ে মশকরা করেন। আতিয়ার তাতে খুশি হন। যারা ভিক্ষা দেন তারাও আনন্দ পায়।
আতিয়ারের ছেলে মেয়েরা তাকে ভিক্ষা করতে নিষেধ করেন। কিন্তু আতিয়ার তার বাপ দাদার পেশা ছাড়তে চায় না।
আতিয়ারের স্ত্রী রাবেয় জানান,হো লোক একটু কম বোঝে শোনে। এক রকম বললে অন্যরকম করে। তাই তাল পাতার টোকেন দিয়ে দি। আর গ্রাম ভাগ করে দিই। তার ভিক্ষার টাকা দিয়ে তারা একটি গরুও কিনেছে। গরুটার দেখাশুনা করেন আতিয়ারের স্ত্রী।
স্থানীয় ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বর তানিয়া খাতুন জানান,তার নামে একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড আছে। মাসে সরকারী ভাবে ৬শ টাকা করে পেয়ে থাকে। তবে ভিক্ষুক কার্ড তাকে দেয়া হয়নি। এলাকাতে সরকারী ভাবে ভিক্ষুক কার্ড দেয়া হচ্ছে। তিনি আরো জানান, ভিক্ষা বন্ধে সরকার নানা মুখি উদ্যোগে গ্রহণ করেছে।
এখান থেকে ২৫ বছর আগের কথা। এ প্রতিবেদকের বাড়িতে আতিয়ার ভিক্ষা নিতে আসতে। গতকাল যখন তার সাথে দেখা তখনও ঠিকই আগের মতই মনে হচ্ছিল ভিক্ষারি আতিয়ারকে দেখে। মনে হচ্ছিল তার সাথে কোন এক দিনের সম্পর্ক ছিল। তাকে কিছু টাকা দিয়ে কয়েকটি ছবি তুলা হলো। এতে ভিক্ষারি বেজায় খুশি। জীবনে এই প্রথম কোন সাংবাদিক তার ছবি তুলায় সে আনন্দে আতœহারা ।
বললো আজ আর বেশি ঘুরবো না। তাকে জ্ঞগাসা করা হলো কম চাল নিয়ে বাড়িতে বাড়িতে গেলে কেউ কিছু বলবে না। বললো মাঝে মাঝে স্ত্রীর বকা ক্ষেতে হয়।
সরকার ভিক্ষুক বন্ধে খাতা কলমে নানা মুখি উদ্যোগে গ্রহণ করলেও বাস্তবে তা ভিন্ন। কয়েকজন ভিক্ষুক জানালেন,পর্যাপ্ত সহযোগীতা না পেয়ে তারা ভিক্ষা করে।
Check Also
সাতক্ষীরায় ৪ গ্যালন ফরমালিন পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার
নিজস্ব প্রতিনিধি: সাতক্ষীরা থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৪ গ্যালন ফরমালিন পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করেছে। তবে এসময় …