যুবলীগ নেতা মান্নান গ্রেপ্তারে আওয়ামী লীগে নীরবতা!

গত ২৬ মার্চ সাতক্ষীরা পৌর আওয়ামী লীগের স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা সভায় যুবলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষের পর জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা নীরবতা পালন করে চলেছেন। যুবলীগের একাংশ ঘটনার পর দিন ২৭ মার্চ এবং ২৯ মার্চ পৃথক দুটি কর্মসূচি পালন করে জেলা যুবলীগের আহবায়ক আব্দুল মান্নানকে সংগঠন থেকে বহিস্কারের দাবি জানান। অন্যদিকে গ্রেপ্তারকৃত যুবলীগ নেতা আব্দুল মান্নানকে মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে আশাশুনি উপজেলা যুবলীগ। এ বিষয়ে জেলার নেতৃবৃন্দ মুখ বন্ধ রাখায় ক্ষোভ দানা বাঁধছে জেলার পোড় খাওয়া তৃণমূল আওয়ামী লীগে।
ফোনে অনেকেই প্রশ্ন করে জানতে চান জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা চুপ কেন? আব্দুল মান্নান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের একজন পরীক্ষিত সৈনিক। ২০১৩ সালে সাতক্ষীরাবাসি যখন জামাত-বিএনপির নৈরাজ্য নাশকতায় এক প্রকার গৃহবন্দী ছিলেন তখন আব্দুল মান্নানের নেতৃত্বে যুবলীগের নেতাকর্মীরা গ্রামে গ্রামে গিয়ে সাধারণ মানুষের মনে শক্তি ও সাহস যুগিয়েছেন। ঘরের কোণ থেকে সেদিন বেরিয়ে এসে প্রতিবাদ মিছিলে অংশ নেন অনেকে। মান্নানের চাষ করা ক্ষেতে আজ মই দিচ্ছে মহি। তারা প্রশ্ন রেখে বলেন, সেদিন কোথায় ছিলেন কথিত যুবলীগের আজকের নেতারা? তৃণমূল নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দুধের মাছি এসব নেতাদের সাধারণ জনগণ কোনো দিন পাশে পায়নি। ভবিষ্যতেও পাবে না। কারণ তারা সুবিধাবাদী।
জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি তানভীর হুসাইন সুজন বলেন, পচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপরিবারে নিহত হওয়ার পর সাতক্ষীরায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের আর কোন সাংগঠনিক কার্যক্রম ছিল না। আশির দশকে সারাদেশে এরশাদ বিরোধী আন্দোলন শুরু হলে সাতক্ষীরাতেও তার ঢেউ লাগে। এসময় শেখ সাহিদ উদ্দিন, মাহমুদ আলী সুমন ও আব্দুল মান্নানের নেতৃত্বে সাতক্ষীরায় নতুন করে ছাত্রলীগ যুবলীগের কার্যক্রম শুরু হয়। আব্দুল মান্নান সে আন্দোলনে সব সময় সামনেই ছিলেন। সুজন আরো বলেন, ১৯৮৪ সালে সিটি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি দায়িত্ব পালন করেন আব্দুল মান্নান। সংগঠনিক দক্ষতার মধ্যে দিয়ে ১৯৮৬ সালে জেলা ছাত্রলীগের সদস্য ও ১৯৮৮ সালে জেলা ছাত্রলীগের সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বের পাশাপাশি শহর ছাত্রলীগের সভাপতি দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯০ সালে যখন রাজনীতির মাঠ উত্তাল তখন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব কার কাঁধে পড়ে। ১৯৯০ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। সাতক্ষীরা সিটি কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। ২০০৪ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে। ২০১৩ সাল থেকে আজ পর্যন্ত যুবলীগের আহবায়কের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী দলে গেলেও তিনি কখন রাজনীতির মাঠ থেকে পালায়ন করেননি। একাধিকার হামলা মামলার শিকার হয়েছেন তার পর তিনি রাজনীতির মাঠ থেকে সরে দাঁড়ানানি। সব সময় আওয়ামী লীগকে সু সংগঠিত করতে কাজ করেছেন।
ঘটনার পর থেকে আত্মগোপনে থাকা পৌর যুবলীগ নেতা মনোয়ার হোসেন অনু বলেন, পচাত্তরের ১৫ আগস্টের আগেই যারা সাতক্ষীরা থেকে পালিয়েছিলেন, পরবর্তীতে ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীর রায়কে কেন্দ্র যখন সাতক্ষীরায় জামাত-শিবিরের তান্ডব শুরু হয়েছিলো তখন আবার পালিয়েছিলেন- তারাই এখন নেতৃত্ব দখল করতে মরিয়া। অনু বলেন, এইসব সুবিধাবাদীরা আবার পালাবে। কিন্তু তার আগে তারা দলকে ধ্বংস করার জন্য প্রকৃত ত্যাগী নেতাকর্মীদের তাড়িয়ে হাইব্রিডদের ভিড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে আব্দুল মান্নানের স্ত্রীর রাবেয়া খাতুন অভিযোগ করে বলেন, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সাতক্ষীরা পৌর আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভা চলাকালে আমার স্বামী মঞ্চে বক্তব্য রাখতে শুরু করলে তার প্রতিপক্ষরা হট্টগোল শুরু করে এবং তাকে আহত করার জন্য চেয়ার ছুড়ে হামলা করে। তখন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনসুর আহমেদ, সদর এমপি মীর মোস্তাক আহমেদ রবিসহ অনেক নেতা। আমার স্বামী দোষী হলে তারাও দোষী। তিনি বলেন, আমার স্বামী সারা জীবন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। তার বিনিময়ে তাকে আজ জেলে পঁচে মরতে হচ্ছে।
২৬ মার্চের ঘটনার পর পুলিশী অভিযানে গ্রেপ্তারের পূর্বে জেলা যুবলীগের আহবায়ক আব্দুল মান্নান পাল্টা অভিযোগ করে বলেছিলেন, আলোচনা সভায় আমি বক্তব্য রাখছিলাম। তখন সদর এমপি সাহেবের ভাই যুবলীগের সদস্য মীর মহিতুল আলম মঞ্চের নিচে হট্টগোল করতে থাকে। তখন আমার নেতাকর্মীরা প্রতিবাদ করলে মহিতুল আলম আমাকে চেয়ার ছুড়ে মারে। পরে তারা লোহার রড, হকিস্টিক, রামসহ দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আমার নেতাকর্মীর উপর হামলা করে। এঘটনায় পৌর যুবলীগের ৮জন নেতাকর্মী আহত হন।
এদিকে ঘটনার পর ৩দিন অতিবাহিত হলেও আওয়ামী লীগসহ দলের দায়িত্বশীল কোন মহল এখনও এব্যাপারে মুখ খোলেন নি। এমন কি মান্নানের গ্রেপ্তার ও পুলিশের রিমান্ড চাওয়ার ঘটনা নিয়েও আওয়ামী লীগের সব পক্ষই নীরবতা পালন করে চলেছেন। এর রহস্য কী ? তা জানার জন্য অধীর অপেক্ষায় জেলাবাসি।

Check Also

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই তত্ত্বাবধায়ক সরকারে রূপান্তরিত হতে পারে : অ্যাটর্নি জেনারেল

র্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারে রূপান্তরিত হতে পারে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।