পিযুষ বাউলিয়া পিন্টু
সুন্দরবন সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনভূমি হিসেবে পরিচিত। এটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে ৬ হাজার বর্গ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। সুন্দরবনকে ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। সুন্দরবনে জালের মত ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য নদ-নদী। বনভূমিটিতে ২৬০ প্রজাতির পাখি, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রল হরিণ, কুমির ও ডলফিনসহ অসংখ্য প্রাণির আবাসস্থল এ সুন্দরবন। উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসরত জনগোষ্ঠিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষা করতে সুন্দরবন ম্যানগ্রোভ বনভূমি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। স্থানীয় জনগণের জীবিকা নির্বাহের প্রধান উৎস হিসেবেও কাজ করে থাকে। বর্তমানে বিভিন্ন কারণে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র হুমকির সম্মুখীন। এমতাবস্থায় স্থানীয় জনগণের জন্য ইকোট্যুরিজমকে জীবিকা নির্বাহের উৎস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে ত্বরান্বিত করতে পারে। উপকূলবাসির সম্ভাবনায় সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগে পর্যটকগণ গাড়ী থেকে নেমেই সুন্দরবনের অপরুপ সৌন্দার্য উপভোগ করতে পারেন। এই বনে প্রচুর প্রাণি বৈচিত্রের সমাহার। এখানে নতুন নতুন দ্বীপ গড়ে উঠেছে যেগুলোকে পর্যটনের আওতায় নিয়ে আসা দরকার। সুন্দরবন এলাকায় গড়ে উঠেছে নতুন নতুন ফ্যাক্টরি, তার কাছাকাছি গড়ে উঠেছে গেস্টহাউজ ও বাংলো, হাটেল-মোটেল। এছাড়াও সরকারি বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন নতুন করে ছোট আকারে হোটেল-মোটেল গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করছে। সাতক্ষীরা রেঞ্জ সুন্দরবন পশ্চিম বনবিভাগ তথ্য সূত্রে ২০১৭ সালের জুন থেকে ২০১৮ সাল মার্চ পর্যন্ত দেশী পর্যটকের সংখ্যা ৪৯,৯৩৫ জন, বিদেশী পর্যটকের সংখ্যা ২২৮ জন। মোট পর্যটকদের থেকে রাজস্ব আদায় হয় ১৮,১৭,৮৪০ টাকা। নিরাপত্তা প্রহরী সহযোগিতা করে ৭৩৩ জন। নিরাপত্তা রাজস্ব গ্রহণ করেন ২,৮৪,১০০ টাকা। বিগত বছরগুলোর তুলনায় এ বছর পর্যটকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান বনবিভাগ কর্মকর্তা।
পর্যটন সম্ভাবনায় উপকূলবাসীর প্রাণের দাবি:
*সুন্দরবন গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করা *সুন্দরবন এলাকায় সকল রাস্তা ঘাট সংস্কার করা *অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠা করা *অবিলম্বে পর্যটন এলাকা ঘোষণা করা *কমিউনিটি বেইজড উদ্যোক্তাদের ক্ষুদ্র ঋনের মাধ্যমে উৎসাহিত করা *স্থানীয় কমিউনিটির মাধ্যমে ইকো গাইড প্রতিষ্ঠা করা * নৌ-পোর্ট স্থাপন ও রেল লাইনের কাজ দ্রুত বাস্তবায়ন *পৃথক সুন্দরবন উপজেলা প্রতিষ্ঠা করা *স্যাটালাইট টাউন স্থাপন করা *বন্য প্রাণীর মিনি চিড়িয়াখানা স্থাপন *পর্যাপ্ত হোটেল-মোটেল গড়ে তোলা *স্থানীয় সিবিওদের সুন্দরবন সুরক্ষায় ও পর্যটন শিল্প বিকাশের অগ্রাধীকার প্রদান করা *সুন্দরবন ক্রোকডাইল ফার্ম প্রতিষ্ঠা করা *সুন্দরবন সুরক্ষায় গৃহীত পদক্ষেপ গুলো কার্যকারী করা *দক্ষ যুবকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ট্যুরিজম এর আওতায় নিয়ে আসা *উপকুলীয় এলাকায় কমিউনিটির মাধ্যমে সাংস্কৃতিক চর্চা বাড়ানো *ট্যুরিজমের সাথে যুক্ত এলাকায় সুন্দরবন সংস্কৃতি, শিল্পী, নাট্যকর্মী, গীতিকার সুরকারদের সামাজিক সুরক্ষার আওতায় নিয়ে আসা।
অপরুপ নৈস্বর্গের সৌন্দর্যের লীলাভূমি সুন্দরবন পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নিতে হলে সমন্বিত সকলের প্রচেষ্টার ও সরকারের সদয় দৃষ্টিতেই সম্ভব। উপকূলীয় এলাকার সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল বনজীবিরা মাছ, কাঁকড়া, মধু, গোল পাতা ও কাঠ কেটে জীবন জীবিকা নির্বাহ করতো, সেই সকল বনজীবিরা সুন্দরবন সুরক্ষায় বিকল্প পেশা হিসেবে ট্যুরিজমের মাধ্যমে জীবন জীবিকা নির্বাহ করতে পারবে বলে আমাদের সকলের বিশ্বাস। লেখক: সুন্দরবন বিষয়ক গবেষক