ভোলা : ভোলার মনপুরায় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক সহকারী শিক্ষিকাকে স্কুলের ভেতর একটি কক্ষে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে। ওই ঘটনা ফাঁস না করতে তাকে হুমকি দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী। আর ওই শিক্ষিকা ভয়ে স্কুলে যাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন।
যে ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, সেই নেতা ওই স্কুলের একটি কক্ষও দখল করে রেখেছেন। তার প্রভাবের কারণে শিক্ষকরা তাকে কিছু বলতেও পারেন না।
শনিবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে উপজেলার ওই বিদ্যালয়ের পাঠাগারে এই ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ করেছেন ওই শিক্ষিকা। এই ঘটনায় তিনি উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি এনাম হাওলাদারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে।
যাদের কাছে অভিযোগ দেয়া হয়েছে তারা হলেন, মনপুরা উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি ও ইউপি চেয়ারম্যান।
এই ঘটনার বিচার দাবিতে সোমবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, থানা প্রশাসন, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন সরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির নেতারা।
অভিযোগকারী শিক্ষিকার অভিযোগ, শনিবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে তিনি স্কুলের পাঠাগারে অবস্থান করছিলেন। এ সময় ছাত্রলীগ নেতা এনাম হাওলাদার বিস্কুট নেওয়ার কথা বলে ভেতরে ঢুকে তাকে কু-প্রস্তাব দেন।
পরে পাঠাগার থেকে চলে যেতে বললে ছাত্রলীগ নেতা দরজা বন্ধ করে ধাক্কা দিয়ে মেঝেতে ফেলে দিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ ওই শিক্ষিকার। এক পর্যায়ে ছাত্রলীগ নেতাকে ঝাপটা দিয়ে ফেলে তিনি বের হয়ে আসেন এবং নিচে এসে স্কুলের গেটে তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখতে পান।
এ সময় স্কুলের ছাত্র/ছাত্রীদের কান্নাকাটির শব্দ শুনে এলাকার একজন প্রবীণ ব্যক্তি এসে ছাত্রলীগ নেতাকে স্কুল থেকে বের করে নিয়ে যান। যাওয়ার সময় ওই ছাত্রলীগ নেতা এ ঘটনায় কারো কাছে বলতে নিষেধ করেন। এমনকি শিক্ষিকাকে মেরে ফেলারও হুমকি দেন বলেও অভিযোগ ওই শিক্ষিকার।
পরে ওই শিক্ষিকা তার দুই সহকর্মীকে সব খুলে বলেন এবং তাদের পরামর্শে প্রধান শিক্ষককে বিষয়টি জানান। আর ওই ছাত্রলীগ নেতার বাবা ঘটনা শুনে সুরাহা করে দেবেন বলে শিক্ষিকাকে আশ্বাস দেয়।
স্কুলের শিক্ষকরা জানান, ছাত্রলীগ নেতা এনাম হাওলাদার গত দেড় বছর যাবত স্কুলের ছাদের চিলেকোঠা দখল করে রাতে সেখানে অবস্থান করে আছেন। ভয়ে স্কুলের কেউ তাকে বাধা দিতে পারে না। এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত এনাম হাওলাদারের মুঠোফোন গত দুই দিন ধরে একাধিকবার চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি সেটি বন্ধ থাকায়।
ছাত্রলীগ নেতার বাবাা দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর মেম্বারের দাবি, ঘটনাটি এমন নয়। তিনি বলেন, ‘সেখানে কথা কাটাকাটি হয়েছে, অন্য কিছুই হয়নি। আমি বিষয়টি সুরাহা করে দেব বলে শিক্ষিকাকে বলেছি।’ ছেলের স্কুল কক্ষ দখল করে অবস্থান নেওয়ার বিষয়টি অবশ্য এড়িয়ে গেছেন জাহাঙ্গীর মেম্বার।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শামসুদ্দিন সাগর বলেন, ‘ঘটনার প্রমাণ পাওয়া গেলে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
অভিযোগকারী শিক্ষিকার স্বামী জানান, ছাত্রলীগ নেতার হুমকিতে তার স্ত্রীর স্কুলে যাওয়া বন্ধ রয়েছে। তিনি নিজেও এই ঘটনার বিচারের দাবিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ থানার সব দপ্তরে লিখিতভাবে জানিয়েছেন।
উপজেলা সরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘এই ঘটনায় শিক্ষক সমাজ মর্মাহত। আমরা এই ঘটনায় বিচারের দাবিতে উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও শিক্ষা অফিসে স্মারকলিপি দিয়েছি। এতে ব্যবস্থা নেয়া না হলে পরবর্তীতে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ‘অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে মামলার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ছাত্রলীগ নেতার কাছ থেকে স্কুল দখলমুক্ত করতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল আজিজ ভূঁঞা বলেন, ‘শিক্ষিকার লিখিত অভিযোগ ও শিক্ষক নেতাদের স্মারকলিপি পাওয়ার পর দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য লিখিতভাবে মনপুরা থানা পুলিশকে জানানো হয়েছে।’
মনপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীন খান বলেন, ‘ঘটনাটি শিক্ষিকার কাছ থেকে মৌখিক শুনেছি। এছাড়াও ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিখিতভাবে জানিয়েছেন। শিক্ষিকার লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’