সুন্দরবনে মধু আহরণ মৌসুম শুরু:

শ্যামনগর (সদর) প্রতিনিধি: প্রতি বছরের ন্যায় সুন্দরবনে মধু আহরণ মৌসুম শুরু হয়েছে। রবিবার সকাল সাড়ে ১০টায় বুড়িগোয়ালিনী ফরেস্ট প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এক অনাড়ম্বর পূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মধু আহরণ মৌসুম উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি খুলনা বিভাগীয় বন সংরক্ষক সিএফ আমির হুসাইন। খুলনা বন সংরক্ষক (পশ্চিম) ডিএফও বশিরুল আল মামুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান, উপজেলা চেয়ারম্যান মহসনি উল মুলক ও বুড়িগোয়ালিনী ইউপি চেয়ারম্যান ভবতোষ কুমার মন্ডল। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সাতক্ষীরার সহকারী বন সংরক্ষক এসিএফ রফিক আহম্মেদ। সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন, জাফর আহম্মেদ।

উল্লেখ্য, চলতি বছর সাতক্ষীরা রেঞ্জে মধু আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ১হাজার ৫০ কুইন্টাল এবং মোম ৫৬৫ কুইন্টাল নির্ধারিত হয়েছে। প্রতি কুইন্টাল মধুর জন্য ৭৫০ টাকা এবং মোম ১ হাজার টাকা রাজস্ব নির্ধারিত হয়েছে। ১টি নৌকায় সর্বোচ্চ ৮জন মৌয়াল অবস্থান করতে পারবেন। ১জন মৌয়াল ১৪ দিনে নুন্যতম ৫০ কেজি মধু আহরণ করতে পারবেন। খুলনা বন সংরক্ষক (পশ্চিম) ডিএফও বশিরুল আল মামুন জানান, মধু আহরনের সময় মৌয়ালদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আগামী ৩১ মে পর্যন্ত সুন্দরবনে মৌয়ালরা মধু আহরণ করবেন। সঠিকভাবে মধু আহরনের জন্য মৌয়ালদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে স্থানীয় শতাধিক মৌয়াল অংশগ্রহণ করেন।

মধু আহরণ মৌসুম চলাকালীন সময় অন্যান্য বনজীবিদের সুন্দরবনে প্রবেশের অনুমতি না দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় মৌয়ালরা। তাদের ধারণা ওই সময়ে মাছ ও কাঁকড়া আহরণের অনুমতি নিয়ে মৌয়ালরা চোরাইভাবে মধু আহরণ করে। সেক্ষেত্রে প্রকৃত মৌয়ালরা বঞ্চিত হয়। অপর দিকে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয় সরকার। তাছাড়া পাশ্ববর্তী ভারতীয় অংশে সুন্দরবনে মধু আহরণের সময় অন্যান্য বনজীবিদের প্রবেশের অনুমতি বন্ধ থাকে।

মৌয়ালরা সুন্দরবনে মধু আহরণ নির্বিঘেœ সম্পন্ন করতে বনদস্যুর হাত থেকে রেহাই পেতে সংশ্লিষ্ট আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন। ইতোমধ্যে কতিপয় বনদস্যু বাহিনী মধু আহরণের জন্য মৌয়ালদের কাছে নৌকা প্রতি ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেছে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

অন্য একটি মাধ্যমে জানা যায়, মধু আহরণের মাসকে কেন্দ্র করে উপকূলীয় ভেজাল মধু ব্যবসায়ীরা কোমর বেঁধে নেমেছে। ওই চিহ্নিত চক্রটি প্রশাসনকে ম্যানেজ করে চিনি জ্বালিয়ে ভারত থেকে আনিত কৃত্রিম সুগন্ধি মিশিয়ে ভেজাল মধু তৈরী করে স্থানীয় বাজার সারা দেশে সরবরাহ করে। এতে ভোক্তারা প্রতারণার স্বীকার হয়। উল্লেখ্য, শ্যামনগ উপজেলাধীন কাশিমাড়ী, গাবুরা, মুন্সিগঞ্জ ও বুড়িগোয়ালিনী এলাকায় চিহ্নিত ভেজাল মধু ব্যবসায়ীরা সারা বছর চিনি জ্বালিয়ে মধু তৈরী করে প্রশাসনকে ম্যানেজ কর নওয়াবেঁকী থেকে নৌকা পথে ও শ্যামনগর বাস কাউন্টার দিয়ে সারা দেশে সরবরাহ করে। উপকূলীয় চিহ্নিত ভেজাল মধু ব্যবসায়ীর মধ্যে সাইফুল্যাহ, নুর ইসলাম, বারী মোল্যা, চফেদ মোল্যা, রশিদ ওরফে চিনি রশিদ ও কামালের নাম উল্লেখযোগ্য। নুর ইসলাম চিনি জ্বালিয়ে ভেজাল মধুর ব্যবসা করে ইতোমধ্যে কোটিপতি বনে গেছে।

Check Also

আশাশুনিতে টঙ্গী ইজতেমায় হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।ঢাকার টঙ্গীত ইজতেমা-মাঠে নিরীহ মুসল্লিদের উপর উগ্রবাদী সন্ত্রাসী সাদ পন্থীদের বর্বরোচিত হামলা ও পরিকল্পিত …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।