খুলনায় গরু চোর সন্দেহে বৃদ্ধকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা: ভিডিও ভাইরাল

ক্রাইমবার্তা রিপোট: খুলনা : গরু চোর সন্দেহে মো. গোলাম আলী শেখ পেয়াদাকে (৫৫) আটক করেন একদল নারী-পুরুষ। নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ছেড়ে দেওয়ার জন্য হাত জোড় করে কাকুতি-মিনতি করেন গোলাম আলী শেখ পেয়াদা। একপর্যায়ে একজনের দুই পায়ে লুটিয়ে পড়েন তিনি। কিন্তু তাতেও মন ঢলেনি কারও। গোলাম আলী শেখের দুই হাত পেছনের দিকে নিয়ে গাছের সঙ্গে রশি দিয়ে বাঁধা হয়। একইসঙ্গে চলে বেধড়ক পিটুনি। এখানেই শেষ নয়; গোলাম আলী শেখের দুই পা ওপরের দিকে তুলে গাছের সঙ্গে উল্টো করে আটকে সমানে কিল-ঘুষি মারা হয়। কেবল কিল-ঘুষি নয়; গোলাম আলী শেখের বুকে-পিঠে-মাথায় একাধারে পড়তে থাকে কাঠের বর্গা ও লাঠির আঘাত। এ পর্যায়ে মো. গোলাম আলী শেখ পেয়াদা নিস্তেজ হয়ে যান।

নির্মম এ ঘটনা ঘটেছে খুলনার ফুলতলা উপজেলার জামিরা ইউনিয়নের পঠিয়াবান্দা গ্রামে। গত ২৫ মার্চ সকাল ১০টার দিকে ঘটা এ ঘটনার কিছু ছবি ও ভিডিও সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিহত গোলাম আলী শেখ পেয়াদার বাড়ি খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার রুদাঘরা ইউনিয়নের মধুগ্রামে। এ গ্রামের মৃত আব্দুস সামাদের ছেলে তিনি। তাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ৭ জনের নাম উল্লেখ ও ২০-২৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে ফুলতলা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন নিহতের স্ত্রী জবেদা বেগম।

রুদাঘরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল খোকন বলেন, ‘মো. গোলাম আলী পেয়াদা গত ১৫ বছর ধরে মানসিক ভারসাম্যহীন। তবে ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি স্বাভাবিক জীবনযাপন করেছেন। ২০১৭ সালে তাকে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. এস এম ফরিদুজ্জামানের অধীনে চিকিৎসাধীন দেওয়া হয়।’

ঘটনার পর প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন বলে জানান ডুমুরিয়ার রুদাঘরা ইউনিয়নের মধুগ্রামের জিএম আমানউল্লাহ। নিজেকে গোলাম আলী শেখ পেয়াদার পরিবারের ‘কাছের মানুষ’ জানিয়ে জিএম আমানউল্লাহ বলেন, ‘প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ২৫ মার্চ সকালে বাড়ির পাশের একটি বিলে দড়ি দিয়ে একটি গরু বেঁধে রাখেন পঠিয়াবান্দা গ্রামের আ. লতিফ বিশ্বাস। এসময় মানসিক ভারসাম্যহীন গোলাম আলী পেয়াদা ওই গরুর কাছে যান এবং দড়ি ধরে টানাটানি করেন। বিষয়টি দূর থেকে দেখে ফেলেন লতিফের স্ত্রী আয়শা বেগম। এরপর চোর চোর বলে তিনি চিৎকার শুরু করেন।’

জিএম আমানউল্লাহ বলেন, ‘আয়শা বেগমের চিৎকারে আশেপাশের লোকজন এসে জড়ো হন এবং পেয়াদাকে ধরে নির্মমভাবে মারধর করেন। ছেড়ে দেওয়ার জন্য পায়ে লুটিয়ে পড়ার পরও তাকে গাছের সঙ্গে উল্টো করে বাঁধা হয়। একইসঙ্গে চলে কাঠের বর্গা ও লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর। এক পর্যায়ে বিড় বিড় করে পানি চাইতে চাইতে নেতিয়ে পড়েন গোলাম আলী শেখ পেয়াদা।’

গোলাম আলী পেয়াদার স্ত্রী জবেদা বেগম জানান, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান তিনি। এ নিয়ে মামলা করেছেন। একজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বাকি আসামিদের তথ্যও জানা যাবে।

ফুলতলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান মুন্সি জানান, তারা অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন। ইতোমধ্যে ছয় জনকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। আনোয়ার (৪০) নামে একজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। বুধবার (৪ এপ্রিল) এ মামলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) হস্তান্তর করা হয়েছে। এর তদন্তের দায়িত্ব নিয়েছেন পিবিআইয়ের পরিদর্শক বাবর আলী।’
ভিডিও দেখতে এখানে ক্লিক করুন

Check Also

ভোমরা বন্দরে চার মাসে ৪০০ কোটি টাকা আয়

দক্ষিণবঙ্গ সাতক্ষীরার আধুনিক নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব বাণিজ্যিককেন্দ্র ভোমরা স্থল বন্দর। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।