আবু সাইদ বিশ্বাস: সাতক্ষীরা: গ্রাম বাংলার জনজীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী বাঁশ শিল্প। গৃহে ব্যবহৃত প্লাস্টিক সামগ্রীর দাম তুলনা মূলক কম থাকায় বাঁশের তৈরি হস্ত শিল্পের পরিবর্তে মেশিনে তৈরি প্লাস্টি সামগ্রীর প্রতি আগ্রহ বাড়ছে গৃহিণীদের। ফলে সাতক্ষীরা গ্রাম বাংলা থেকে বাঁশ শিল্প অনেকটা বিলুপ্তির পথে। এ শিল্পের সাথে জড়িত অনেকেই বাপ-দাদার আমলের পেশা ত্যাগ করে পাড়ি জমিয়েছে অন্য পেশায়।
এক সময় সাতক্ষীরা জেলাতে প্রচুর বাঁশ হত। বাশের কদরও ছিল জেলা ব্যাপি। এমনকি সাতক্ষীরা থেকে ট্রাকে করে বাঁশ অন্য জেলাতে সরবরাহ করা হত।
বর্তমানে,সাতক্ষীরা সদর কলারোয়া,তালা সহ বিভিন্ন এলাকাতে বাঁশ চাষ হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি চাষ হচ্ছে তালাতে। পাণের বরজ করতে প্রচুর বাঁশের প্রয়োজন হয়। তাই বরজের কারণে এ অঞ্চলে বাঁশের চাহিদা অনেক বেশি। এখানে প্রতি বছর নতুন নতুন বাশ ঝাড় তৈরি করা হচ্ছে। সমাজের একটু অবস্থা সম্পন্ন লোকেরা বাশ চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে। কারণ বাঁশ রোপনের তিন বছর পর বাঁশ ব্যবহারের উপযুক্ত হয়। অনেকটা পুঁজি বিনিয়োগ করে রাখতে হয়।
পাটকেলঘাটার খলিষখালী ইউনিয়নের মঙ্গলানন্দকাটী গ্রামের মাষ্টার ইকরামুল কবির জানান,বাপ দাদার আমল থেকে তারা বাঁশ চাষ করে আসছে। বর্তমানে ২-৩ বিঘা জমিতে তিনি বাঁশ চাষ করছেন। বাশেঁর দাম ও ভাল পাচ্ছেন। একই গ্রামের মোকাম শেখ তিনিও পৈত্রিক সূত্রে বাঁশ চাষ করে আসছেন। তালা উপজেলার এমন কোন গ্রাম নেই যেখানে বাঁশ চাষ হয় না। অন্য ফসলের চাইতে বাঁেশ টাকা বেশি বলে জানান অনেকে।
গ্রামীণ জনপদে একসময় বাঁশঝাড় ছিল না এমনটা কল্পনাও করা যেতো না। যেখানে গ্রাম সেখানে বাঁশঝাড় এমনটিই ছিল স্বাভাবিক। বাড়ির পাশে বাঁশঝাড় এ যেন গ্রাম বাংলার চিরায়ত রূপ। বনাঞ্চলের বাইরেও এখন যেভাবে গ্রামীণ বৃক্ষরাজি উজাড় হচ্ছে তাতে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী বাঁশ । এক সময় গ্রামীণ জনপদে বাংলার ঘরে ঘরে তৈরি হতো বাঁশের তৈরি হাজারো পণ্য সামগ্রী। অনেকে এ দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো।
কয়েক বছর আগেও সাতক্ষীরাতে বাঁশের তৈরি জিনিসের কদর ছিল অনেক বেশি। চেয়ার, টেবিল, বইয়ের সেল্ফ, মোড়া, কুলা, ঝুড়ি, ডোল, চাটাই থেকে শুরু করে এমনকি ড্রইং রুমের আসবাবপত্র তৈরিতেও বাঁশ প্রচুর ব্যবহার করা হতো। এ ছাড়া মাছ ধরার পলো, হাঁস, মুরগীর খাঁচা, শিশুদের ঘুম পাড়ানোর দোলনা এখনো গ্রামাঞ্চলসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে ব্যাপকভাবে সমাদৃত। একসময় জেলার হাট,বাজার,মেলা গুলোতে পরশা সাজানো হতো বাশের তৈরি হস্তশিল্প দিয়ে। প্রকৃতপক্ষে বাঁশের স্থান দখল করে নিয়েছে প্লাস্টিক সামগ্রী। এখন বাঁশ এর উৎপাদন কমে যাওয়াতে দাম বেড়েছে।
কারিগররা জানান,বাঁশের মূল্য বৃদ্ধির কারণে উৎপাদন খরচ অনেক বেশি পড়ছে। দাম বেশি পড়াতে বাঁশের তৈরি পণ্য কিনতে অনাগ্রহ দেখাচ্ছে ক্রেতারা।
বাংলার ঐতিহ্য বাঁশ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দরকার বলে মনে করেন এখাতে সংশ্লিষ্টরা। প্রয়োজনীয় সহযোগীতা পেলে বাঁশের হারানো গৌরাব ফিরে পাওয়া সম্ভব এমন আশা বাঁশ চাষীদের।
Check Also
আশাশুনিতে টঙ্গী ইজতেমায় হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।ঢাকার টঙ্গীত ইজতেমা-মাঠে নিরীহ মুসল্লিদের উপর উগ্রবাদী সন্ত্রাসী সাদ পন্থীদের বর্বরোচিত হামলা ও পরিকল্পিত …