আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন

ক্রাইমবার্তা রিপোট:  সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কার দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঢাকাসহ দেশে বিভিন্ন এলাকার শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে যোগ দিয়েছে।

তবে সোমবার সচিবালয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠকের পর আন্দোলন আগামী এক মাসের জন্য স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।

রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন শাহবাগ মোড় থেকে এ আন্দোলন শুরু হয়। অল্প সময়ের মধ্যেই আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে।

পরে পুলিশ আন্দোলনকারীদের হটাতে গেলে দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চলে। দিনে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন হলেও রাতে তা সহিংসতায় রূপ নেয়।

দুই দিনের আন্দোলনের এ পর্যন্ত ২১৭ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে বল জানিয়েছেন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে প্রায় ৪০ জন।

বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে।

ভারতের প্রথম সারির গণমাধ্যম এনডিটিভিতে ‘সংঘর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রণক্ষেত্র; আহত শতাধিক’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে।

এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে হাজার হাজার শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছে।

রোববার দিনে শুরু হওয়া এ আন্দোলন সোমবার ভোররাতে সহিংস হয়ে উঠে। আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ রাবার বুলেট, টিয়ার শেল নিক্ষেপ করেছে।

ফ্রান্সের প্রভাবশালী সংবাদ সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে হাজার হাজার শিক্ষার্থী বিক্ষোভ করেছে। আন্দোলনে সংঘর্ষে কমপক্ষে ১০০ জন আহত হয়েছে। এরপর সোমবার আন্দোলনকারীরা অবস্থান ধর্মঘট পালন করছে।

এছাড়াও সিঙ্গাপুরভিত্তিক স্ট্রেইট টাইমস, পাকিস্তানের নিউজউইক পাকিস্তান, ইয়াহু নিউজসহ বিশ্বের প্রভাবশালী বিভিন্ন গণমাধ্যমে বাংলাদেশের সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন উঠে এসেছে।

বিবিসি বাংলার সংবাটি হুবহু তুলে ধনরা হল:

কোটা সংস্কার প্রশ্নে আন্দোলনকারী ছাত্রনেতারা স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠকে যে সমঝোতায় পৌঁছান, সেটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জমায়েত হওয়া বিক্ষোভকারীরা মানতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন।

গতরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং আজ দেশ জুড়ে ব্যাপক ছাত্র বিক্ষোভের মুখে সরকার ছাত্রনেতাদের সঙ্গে এই বৈঠকে বসে।

বৈঠকের পর স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের সামনে এসে জানান, আন্দোলনকারী ছাত্র-ছাত্রীরা মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত তাদের আন্দোলন স্থগিত রাখতে রাজী হয়েছে।

তিনি বলেন, ছাত্রদের দাবির যৌক্তিকতা সরকার ইতিবাচক হিসেবে দেখছে। এ নিয়ে সরকার কঠিন অবস্থানে নেই।

তবে তিনি একই সঙ্গে একথাও জানান, যারা রবিবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলা চালিয়েছে তাদের কঠিন শাস্তি পেতে হবে।

ওবায়দুল কাদের আরও জানিয়েছেন, মে মাসের ৭ তারিখের মধ্যে সরকার কোটা সংস্কারের দাবি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে। আর সে পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত রাখতে রাজী হয়েছে ছাত্র নেতারা।

সচিবালয়ের এই বৈঠকে যে ছাত্রনেতারা উপস্থিত ছিলেন তাদের পক্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসীন হল শাখা ছাত্রলীগের নেতা হাসান আল মামুন সাংবাদিকদের জানান, ৭ই মে পর্যন্ত তারা আন্দোলন স্থগিত রাখছেন।

সচিবালয়ে এই আলোচনায় যোগ দিয়েছিলেন আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী প্রায় বিশ জন ছাত্র নেতা। মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ছাড়াও আওয়ামী লীগের বেশ কিছু তরুণ নেতা এই বৈঠকে ছিলেন।

গতরাতে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের এই আন্দোলন ব্যাপক রূপ নেয় এবং ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি প্রায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিল তখন সরকারের তরফ থেকেই প্রথম আলোচনার প্রস্তাব দেয়া হয়।

ছাত্রনেতাদের সঙ্গে বৈঠকে যে সমঝোতা হয়েছে, তাতে গ্রেফতার হওয়া ছাত্র-ছাত্রীদের মুক্তি এবং আহতদের চিকিৎসার খরচ সরকার বহন করবে বলে আশ্বাস দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

কিন্তু আন্দোলনের নেতারা যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে টিএসসির মোড়ে বিক্ষোভরত ছাত্র-ছাত্রীদের সমাবেশে মেগাফোন হাতে কিছু বলার চেষ্টা করেন তখন ছাত্র-ছাত্রীরা ‘না’ ‘না’ ধ্বনি দিয়ে তাদের থামিয়ে দেয়।

সেখান থেকে বিবিসি বাংলার শাহনাজ পারভীন জানান, হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী এখনো সেখানে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে। তারা এই সমঝোতা মেনে নেবে, আপাতদৃষ্টিতে এখনো পর্যন্ত সেটা মনে হচ্ছে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন, ফিল্ম এন্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের একজন ছাত্র হারুণুর রশীদ বিবিসিকে বলেন, কেন তারা এটা মানতে চাইছেন না।

“এটা আন্দোলন দমিয়ে দেয়ার জন্য সরকারের একটা কৌশল। কারণ তারা এক মাস পর এটা বিবেচনা করবে। এক মাস পরে রোজা চলে আসবে। সেসময় ক্যাম্পাসে কেউ থাকবে না। আমার মনে হয় এটা সরকারের একটা চাল।”

থমথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিসি বাংলার শাহনাজ পারভীন জানান, সেখানে পরিস্থিতি এখনো উত্তেজনাপূর্ণ। শত শত ছাত্র-ছাত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির মোড়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হয়ে সেখানে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন। সেখানে তারা সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা প্রথার সংস্কারের দাবিতে ক্রমাগত শ্লোগান দিচ্ছেন।

এই বিক্ষোভকারীদের একই সঙ্গে ‘জয় বাংলা’ শ্লোগানও দিতে দেখা যাচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের বিক্ষোভ

রোকেয়া হল থেকে আসা একটি বড় ছাত্রী মিছিল এই সমাবেশে যোগ দেয়। এতে একশোর বেশি ছাত্রী ছিল। টিএসসির মোড়ে জমায়েত হওয়া বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ছাত্রীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ দেখা যাচ্ছে।

গতরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপক সংঘর্ষের সময় যেভাবে তারা পুলিশি হামলার শিকার হয়েছে, সে কারণে ছাত্র-ছাত্রীরা বেশ বিক্ষুব্ধ। গতরাতের বিক্ষোভ পুলিশ দমন করার পর তাদের আজ সকালের দিকে কিছুটা হতোদ্যেম মনে হচ্ছিল। কিন্তু রাজু ভাস্কর্যের সামনে জমায়েতে বহু ছাত্র-ছাত্রী এসে যোগ দেয়ার পর তাদের নতুন করে উজ্জীবিত বলে মনে হচ্ছে।

কড়া নিরাপত্তা

শাহবাগের মোড় দিয়ে ক্যাম্পাসে ঢোকার সময় সেখানে ব্যাপক পুলিশ উপস্থিতি চোখে পড়েছে। যে পরিমান বিক্ষোভকারী ক্যাম্পাসে রয়েছে প্রায় সেই পরিমানে পুলিশ চারিদিকে অবস্থান নিয়েছে।

শাহবাগ মোড়ে কড়া পুলিশ পাহারা
Image captionশাহবাগ মোড়ে কড়া পুলিশ পাহারা

ছাত্রদের বিক্ষোভ দমনে তৈরি রাখা হয়েছে জলকামানবাহী গাড়ি। শাহবাগের মোড়ে একটি দীর্ঘ কর্ডন তৈরি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ পথ আটকে রেখেছে পুলিশ।

পুলিশের পাশাপাশি ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়েছে সরকার সমর্থক ছাত্রলীগের বহু কর্মী। ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে তারা ক্যাস্পাসে প্রবেশ করছে। মধুর ক্যান্টিনের সামনে ছাত্রলীগের কয়েকশ কর্মী চোখে পড়েছে।

ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মীকে কেন সেখানে এসেছে প্রশ্ন করা হলে তারা জানিয়েছে, ছাত্রলীগের একটি সম্মেলন রয়েছে, সেজন্যেই তারা ক্যাম্পাসে এসেছে। কোটা বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে তাদের এই জমায়েতের কোন সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেন ছাত্রলীগ কর্মীরা।

তবে ছাত্রলীগ কর্মীদের ভাব দেখে মনে হচ্ছিল, তারা বেশ সতর্ক অবস্থায় আছে।

গতরাতের সংঘর্ষের জের ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়েছে কিনা তা স্পষ্ট নয়। তবে ধর্মঘট হলে যেভাবে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকে, সেরকম একটা অবস্থা চলছে।

Check Also

তালায় ইউপি পরিষদ কক্ষে দুই সাংবাদিকের উপর হামলা, প্রতিবাদে মানববন্ধন

তালা প্রতিনিধি তালার ইসলামকাটি ইউনিয়ন পরিষদে সাংবাদিক আক্তারুল ইসলাম ও আতাউর রহমানের ওপর সন্ত্রাসী রমজান আলী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।