গাজীপুর সংবাদদাতাঃ গাজীপুরের সিটি কর্পোরেশনের মেয়র প্রার্থী অধ্যক্ষ এস এম সানাউল্লাহ মনোনয়নপত্র উত্তোলনের পর থেকে গত চারদিন যাবত ব্যাপক গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন।
রোববার দুপুর থেকে রাত অবধি তিনি ৪৩, ৪৮, ৫৪ ও ৫৭ নং ওয়ার্ডে ব্যাপক গণসংযোগ করেন।
দুপুরে তিনি আউচপাড়ার খাঁ পাড়া রোডে মিছিলসহ ব্যাপক গণসংযোগ করেন। তিনি রাস্তার দুপাশে দোকানে দোকানে যেয়ে দোয়া ও সমর্থন কামনা করেন।
এরপর কলেজগেট এলাকায় গণসংযোগ শেষে তার সমর্থনে এক বিশাল গণমিছিল বের হয়। মিছিলটি ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ অংশ প্রদক্ষিণ করে বনমালা রোডের হাজী মার্কেটে যেয়ে এক পথসভায় মিলিত হয়। মহানগর শিবির সভাপতি ছাত্রনেতা মিজানুর রহমানের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত পথসভায় বক্তব্য প্রদানকালে অধ্যাক্ষ সানাউল্লাহ বলেন, মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের অংশ হিসেবে সিটি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। জনগণের ভোট ছিনতাই করা হলে গাজীপুর থেকেই জালিম সরকারের পতন আন্দোলন শুরু করা হবে। তিনি সিটি নির্বাচনে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ারসহ সেনা মোতায়েনের দাবি জানান।
পথসভায় বক্তব্য প্রদানকালে গাজীপুর মহানগর উন্নয়ন পরিষদের নির্বাচন পরিচালক জননেতা খায়রুল হাসান বলেন, আধুনিক ও নিরাপদ গাজীপুর নগরী গড়তে হলে অধ্যক্ষ সানাউল্লাহর মতো ডায়নামিক লোকেরই প্রয়োজন।
সন্ধ্যায় টঙ্গি বাজার ও রাতে পাগাড় ঝিনু মার্কেটে অধ্যক্ষ সানাউল্লাহ ও তার নির্বাচনী কর্মীরা ব্যাপক গণসংযোগ করেন। এ সময় তারা জনে জনে লিফলেট বিতরণ ও শ্লোগানে শ্লোগানে নির্বাচনী প্রচারণা চালান।
রোববারের গণসংযোগে অন্যান্যের মাঝে অংশ নেন শ্রমিককল্যাণ ফেডারেশনের নগর সভাপতি আজহারুল ইসলাম মোল্লা, মেয়র প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্ট আফজাল হোসাইন, কাশিমপুর থানা জাময়াতের আমীর আবু সিনা মামুন, জয়দেবপুর উত্তর থানা জামায়াতের আমীর ছাদেকুজ্জামান খান, পূবাইল থানা জামায়াতের আমীর আশরাফ আলী কাজল, টঙ্গি পশ্চিম থানা জামায়াতের সেক্রেটারি আবু তাকি, টঙ্গি পূর্ব থানা জামায়াতের সেক্রেটারি মোঃ মুহিউদ্দিন প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনকে ঘিরে প্রার্থী ও ভোটারসহ স্থানীয়দের মাঝে ইতোমধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা ও আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে। আগামী ১৫ মে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র উত্তোলন ও জমাদানে মেয়র ও কাউন্সিলর পদের প্রার্থী এবং তাদের সমর্থকরা রোববারেও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে ভিড় করেছেন। এদিন (রোববার) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মেয়র পদে ৫ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন এবং কাউন্সিলর পদের একজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এনিয়ে এ পর্যন্ত মেয়র পদে ১৪ জন এবং ৫৭টি ওয়ার্ডে সাধারণ আসনে কাউন্সিলর পদে ৩২৪ জন ও সংরক্ষিত আসনে কাউন্সিলর পদে ৮৭ জনসহ মোট ৪২৫ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র ও ভোটার তালিকার সিডি সংগ্রহ করেছেন।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার সহায়ক কর্মকর্তা মো. রেজাউল ইসলাম জানান, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের আসন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য রোববার বিকেল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত, ও জাসদসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠনের ১৪ প্রার্থী মেয়র পদে তাদের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এদের মধ্যে সাবেক সংসদ সদস্য এবং গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান মেয়র ও তার পুত্রও ইতোমধ্যে তাদের মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছেন। রোববার বিকেল পর্যন্ত বিএনপি নেতা মো. সালাহ উদ্দিন সরকার, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন বাংলাদেশ, গাজীপুর জেলা কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ মো. নাসির উদ্দিন এবং তরিকত ফেডারেশন বাংলাদেশের জেষ্ঠ্য যুগ্ম মহাসচিব (জয়েন্ট সেক্রেটারি) সৈয়দ আবু মসনবী হায়দার, কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য নেতা কাজী রুহুল আমিন ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) নেতা মো. কাইয়ুম মেয়র পদে নিজ নিজ মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছেন।
এর আগে বৃস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত বিএনপির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান মেয়র এমএ মান্নান ও তার পুত্র মুঞ্জুরুল করিম রনি, সাবেক সংসদ সদস্য বিএনপি’র নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান উদ্দিন সরকার, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি এডভোকেট ওয়াজ উদ্দিন মিয়া, কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দফতর বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য মো. আফছার উদ্দিন, জাসদের গাজীপুর মহানগর কমিটির সভাপতি মো. রাশেদুল হাসান রানা, গাজীপুর উন্নয়ন পরিষদ সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে গাজীপুর মহানগর জামায়াতের আমীর অধ্যক্ষ মো. সানাউল্যাহ, জেলা বিএনপির সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ও সাবেক কাশিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত হোসেন সরকার এবং ইসলামী ঐক্য জোটের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মো. ফজলুর রহমান মেয়র পদে তাদের মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছেন। এছাড়া গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের এ নির্বাচনে রোববার বিকেল পর্যন্ত মেয়র পদে ১৪ জন এবং ৫৭টি ওয়ার্ডে সাধারণ আসনে কাউন্সিলর পদে ৩২৪ জন ও সংরক্ষিত আসনে কাউন্সিলর পদে ৮৭ জনসহ মোট ৪২৫ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র ও ভোটার তালিকার সিডি সংগ্রহ করেছেন।
এদিকে, রোববার দুপুরে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ১৫নং ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর পদের প্রার্থী মো. ফয়সাল আহমেদ সরকার প্রথম সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. মিজবাহ উদ্দিনের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। ফয়সাল আহমদ সরকারের বড় ভাই সুলতান আহমেদ সরকার জানান, এবার নির্বাচনে এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে। মনোনয়নপত্র তুলতে প্রার্থী ও সমর্থদের বেশ ভিড় জমে উঠেছে।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. তারিফুজ্জামান জানান, গত ৩১ মার্চ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র উত্তোলন ও জমা দেয়ার শেষ সময় হলো ১২ এপ্রিল, প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই হবে ১৫-১৬ এপ্রিল এবং প্রার্থীতা (মনোনয়নপত্র) প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২৩ এপ্রিল। ২৪ এপ্রিল প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে এবং ১৫ মে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এবার গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৬৪ হাজার ৪২৫ জন।
আসন্ন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মেয়র পদে আবারও অধ্যাপক এমএ মান্নান মনোনয়নপত্র পেয়েছেন।
রোববার সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠক চলাকালে সাংবাদিকদের কাছে এ দাবি করেন তিনি।
গুলশান কার্যালয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, লে. জেনারেল ( অব) মাহবুবুর রহমান, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন।
খুলনা সিটিতে বিএনপির টিকিটে লড়তে আগ্রহীরা হলেন, বর্তমান মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে মেয়র পদে লড়তে দলের মনোনন পেতে চান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও গাজীপুর সিটির বর্তমান মেয়র এম এ মান্নান, দলটির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসানউদ্দিন সরকার, শ্রমিক দলের কার্যকরী সভাপতি সালাউদ্দিন সরকার, মেয়র মান্নানের ছেলে এম মনজুরুল করীম, গাজীপুর জেলা বিএনপি নেতা শওকত হোসেন সরকার, আবদুস সালাম ও জেলা ছাত্রদলের সভাপতি শরাফত হোসেন।