প্রথম স্ত্রীকে হত্যার পর দ্বিতীয় স্ত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যা!

ক্রাইমবার্তা রিপোট:আমতলীতে আমেনা বেগম (২২) নামের এক গৃহবধূকে যৌতুকের দাবিতে স্বামী মেহেদী আকন (৩০) ও তার সহযোগীরা হত্যা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পুলিশ গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করে সোমবার ময়নাতদন্তের জন্য বরগুনা মর্গে পাঠিয়েছে।

এ ঘটনায় পুলিশ মেহেদীর বাবা আলমগীর আকন (৫৫) ও মা পিয়ারা বেগমকে (৫০) আটক করেছে। ঘাতক স্বামী মেহেদী আকন ও তার সহযোগীরা পলাতক রয়েছে।

স্থানীয়দের ধারণা, আমেনাকে ধর্ষণ শেষে হত্যা করেছে ঘাতকরা।

গত ৯ মাস পূর্বে মেহেদী প্রথম স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা মনিরাকে পিটিয়ে হত্যা করে। দ্বিতীয় বিয়ে করার সাত মাসের মাথায় দ্বিতীয় স্ত্রী আমেনাকে হত্যা করেছে। পরপর দুই স্ত্রীকে হত্যা করায় এলাকায় ক্ষোভ ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আমতলীর পৌর শহরের ওয়াপদা সড়কের হানিফ মিয়ার মেয়ে আমেনার গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে মেহেদী আকনের সঙ্গে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে চার মাস আমেনা স্বামীর সঙ্গে কলাগাছিয়া গ্রামের বাড়ি ও বরিশালে অবস্থান করে। ওই সময় থেকে এক লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে আমেনাকে নির্যাতন করে আসছে স্বামী মেহেদী আকন, শ্বশুর আলমগীর আকন ও শাশুড়ি পিয়ারা বেগম।

কিন্তু দরিদ্র রাজমিস্ত্রি হানিফ হাওলাদার জামাতার যৌতুকের দাবি মেটাতে পারেননি। শ্বশুরবাড়ির নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আমেনা এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসে বাবার বাড়ি চলে আসে। গত রোববার আমতলী নারী উন্নয়ন সংস্থার কুটির শিল্পের প্রশিক্ষণে অংশ নেয় আমেনা।

প্রশিক্ষণ শেষে বাড়ি ফেরার পথে আমেনাকে বরিশাল নিয়ে যাওয়ার কথা বলে জোরপূর্বক গাড়িতে তোলে স্বামী মেহেদী আকন ও তার মামা ইসমাইল। রোববার রাতে আমেনা তার মা খাজিদা বেগমের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেন। এরপর থেকে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

সোমবার সকালে কলাগাছিয়া গ্রামে মেহেদী আকনের বাড়ির ২০০ গজ দূরে একটি ডাল ক্ষেতে একটি লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়দের খবর দেয়। স্থানীয়রা গিয়ে গৃহবধূ আমেনার লাশ শনাক্ত করে। খবর পেয়ে সোমবার বিকালে লাশ উদ্ধার করে বরগুনা মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।

পরে পটুয়াখালীর মরিচবুনিয়ার খাসের হাট নামক স্থানে পালিয়ে যাওয়ার সময় ঘাতক মেহেদীর বাবা আলমগীর আকন ও মা পিয়ারা বেগমকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

এদিকে মেহেদী আকন তার প্রথম স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা মনিরা আকতারকে গত বছর ৬ জুন যৌতুকের দাবিতে পিটিয়ে হত্যা করে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলিয়ে রাখে। পরে মনিরা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে অপ্রচার চালায়। ওই মামলায় মেহেদীকে বরিশাল কোতোয়ালি থানা পুলিশ গ্রেফতার করলেও দুই দিন পর অজ্ঞাত কারণে মেহেদী ছাড়া পায়। মনিরাকে হত্যার তিন মাস পরে মেহেদী আকন ফের আমেনাকে বিয়ে করে।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, গৃহবধূ আমেনার গলায় ওড়না পেঁচানো, শরীরের অর্ধাংশে বোরকায় ঢাকা, শরীরের নিম্নাংশে পাজামা এক পায়ে পেঁচানো ছিল। তারা ধারণা করছে ধর্ষণ শেষে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করেছে।

নিহত আমেনার মা খাদিজা বেগম বলেন, বিয়ের পর থেকে মেহেদী এক লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। কিন্তু আমরা গরিব মানুষ এ টাকা দিতে পারেনি। যৌতুকের দাবি পূরণ করতে না পারায় আমার মেয়েকে মেহেদী, ওর বাবা আলমগীর আকন ও মা পিয়ারা বেগম শারীরিক নির্যাতন করত। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে গত ফেব্রুয়ারি মাসে বাড়িতে চলে আসে। এরপর আমেনাকে শ্বশুরবাড়িতে যেতে দেয়নি।

তিনি জানান, রোববার আমেনা নারী উন্নয়ন সংস্থায় কুটির শিল্পের প্রশিক্ষণ দিতে যায়। এরপর থেকে আর বাড়িতে ফেরেনি। রাতে একটি মোবাইল নম্বর দিয়ে ফোনে আমাকে জানায়, ‘মা মা আমি মনে হয় আর বাঁচব না, ওরা আমাকে মেরে ফেলবে। আমাকে মেহেদী ও তার মামা ইসমাইল তুলে নিয়ে গেছে।’

আমতলী থানার এএসআই মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় মেহেদীর বাবা আলমগীর আকন ও মা পিয়ারা বেগমকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

আমতলী থানার ওসি পুলিশ কর্মকর্তা মো. সহিদ উল্যাহ বলেন, দুর্বৃত্তরা গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করেছে। ময়নাতদন্তের পরে বলা যাবে ধর্ষণ করে হত্যা করেছে কিনা?

Check Also

৩০ জুলাই পর্যন্ত অনেক দল সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি, সংগ্রামে যুক্ত হবে কি না: সারজিস আলম

জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেছেন, …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।