ক্রাইমবার্তা রিপোট: বিদ্যমান কোটার বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে, সরকারে এমন আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলন আগামী ৭ মে পর্যন্ত স্থগিত করেছেন আন্দোলনকারীরা। কিন্তু স্থগিতের সিদ্ধান্ত শোনার পর ‘মানি না মানি না’কোরাস তুলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতারা দায়িত্ব ছেড়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে বলেন,‘আপনারা যদি আমাদের সিদ্ধান্ত না মানেন তাহলে আমরা কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে সরে যাবো’।
আন্দোলন একমাস স্থগিত করার কারণ প্রসঙ্গে তারা বলেছেন, এক মাসে দুইবার প্রধানমন্ত্রী দেশের বাইরে থাকবেন, ক্যাবিনেট মিটিংয়ে আলোচনাটা দেরি হবে বিধায় এক মাস পেছানো হচ্ছে। এক মাসের মধ্যে দাবি আদায়ে কার্যকরী সিদ্ধান্ত না হলে প্রয়োজনে আগামী ৭ মে ফের আন্দোলন।
প্রতিনিধি দলের প্রধান ও কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের আহবায়ক একথা বলার পরো ভূয়া মানি না মানবো না বলে শ্লোগান দিতে থাকে বিক্ষুব্ধ সাধারণ আন্দোলনকারীরা।
এর আগে, সোমবার বিকেলে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে সরকারের একটি প্রতিনিধি দলের সাথে সচিবালয়ে আন্দোলনকারীদের প্রায় পৌনে ২ ঘণ্টা বৈঠকের পরে আন্দেলন স্থগিতের সিদ্ধান্ত আসে। । তিনি বলেন, ‘কোটা সংস্কারের ব্যাপারে সরকার অনড় অবস্থানে নেই। আমরা তাদের দাবির যৌক্তিকতা ইতিবাচক ভাবে দেখি।’
বৈঠকের পর বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, তারা সরকারের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ৭ মে পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করছেন। তিনি বলেন, সরকারের সাথে বৈঠকে আজকের মধ্যে আন্দোলনের সময় গ্রেপ্তার হওয়া সবাইকে মুক্তি দেওয়া বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বৈঠকের পর সরকারের পক্ষের অবস্থান নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
মন্ত্রী বলেন, আন্দোলনকারীদের সাথে তাদের অত্যন্ত সুন্দর আলোচনা হয়েছে। আমরা তাদের বলেছি আগামী ৭ মে এর মধ্যে সরকার বিদ্যমান কোটার বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে। সেই পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত থাকবে। সরকার পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে তাদের অবস্থান আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দেবে। তিনি বলেন, সরকার আন্দোলনকারীদের দাবির যৌক্তিক সমাধান খোঁজার চেষ্টা করবে, প্রধানমন্ত্রীও তরুণদের যৌক্তিক দাবির বিরোধিতা করেন না। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাদের দাবির ব্যাপারে সমাধান খোঁজা হবে।
মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজকের মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর আরেকটি বিশেষ বৈঠকে কোটার বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, কোটা সংস্কারের ব্যাপারে সরকার অনড় অবস্থানে নেই। আমরা তাদের দাবির যৌক্তিকতা ইতিবাচক ভাবে দেখি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আন্দোলনের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাড়িতে যারা ভাঙচুর করেছেন এবং আন্দোলনে সহিংসতা করেছেন তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। কোনো নিরীহ শিক্ষার্থী বা আন্দোলনকারী যেন হয়রানির শিকার না হন সেদিকে লক্ষ্য রাখতে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারকে বলা হয়েছে। কাদের বলেন, আন্দোলনের সময়ে যেভাবেই আহত হয়ে থাকুক না কেন তাদের চিকিৎসার জন্য সরকার সবকিছু করবে।
সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টায় আন্দোলনকারী ১৯ জনের সাথে সচিবালয়ে বৈঠকে বলেন ওবায়দুল কাদের নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রতিনিধি দল।
বিদ্যমান কোটার সংস্কার চেয়ে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ এ দফায় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে আন্দোলন করে আসছে। গত রোববার তাদের পদযাত্রা ও অবস্থা কর্মসূচি চলাকালে ঢাকায় পুলিশ বাধা দিলে সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে।
৭ মে পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত
কোটা সংস্কার আন্দোলন ৭ মে পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। এর মধ্য সরকার কোটা ব্যবস্থা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ফলাফল জানাবে। আজ সোমবার সচিবালয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সাথে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের আলোচনায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, আহতদের চিকিৎসার দায়িত্ব সরকারের। ভিসির বাসভবনে হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। নিরীহদের ছেড়ে দেয়া হবে।
ওবায়দুল কাদের ছাড়াও এতে অংশ নেন আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, এনামুল হক শামীম, তথ্য ও গবেষণা সম্পদক আফজাল হোসেন, সংস্কৃতি সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, মুক্তযুদ্ধ সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস উপদপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া সদস্য এস এম কামার হোসেন, ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনের আহবায়ক হাসান আল মামুন, কানিজ ফাতেমা আফসানা সাফা, একরামুল হক, আল ইমরান হোসাইন, লীনা মিত্র। আরজিনা হাসান, লুবনা জাহানসহ ২০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।
জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে : নাহিদ
বাসস
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে ভাঙচুর, হামলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির ঘটনায় তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এটি নিন্দনীয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলা, ভাংচুর ও হত্যা চেষ্টার ঘটনাকে নজিরবিহীন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শিক্ষামন্ত্রী আজ সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, এর পেছনে যারা উসকানি দিচ্ছে,তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য এ ধরনের ঘটনা ঘটানো হচ্ছে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, চাকরির কোটা সংরক্ষণ বিষয়ে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে এবং সরকার সম্প্রতি এ বিষয়ে একটি ব্যাখ্যা দিয়েছে। প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ও মেধা না থাকলে কোটাধারীরাও চাকরিতে আসতে পারে না। কোটা পূরণ না হলে সেসব পদ মেধা তালিকা থেকেই পূরণ করার নির্দেশনা রয়েছে।
নুরুল ইসলাম নাহিদ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টদের ধৈর্য্যের সাথে পরিস্থিতি মোকাবিলা এবং আন্দোলনকারিদের ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ থেকে সরে আসার আহবান জানান।
এছাড়াও এ ঘটনায় যারা ইন্ধন দিচ্ছেন, তাদের চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানান মন্ত্রী।