নিজস্ব প্রতিনিধি: রীতিমত গণউপদ্রুব চলছে জেলার বিভিন্ন এলাকায়। মার্কেট ভবন নির্মাণের জন্য খোড়া গর্তের কাদা-মাটি ইতস্তত বিক্ষিপ্তভাবে পাকা রাস্তার উপর ফেলে যাচ্ছে ট্রাক, ট্রলি, ট্রাক্টরসহ ইঞ্জিন চালিত বিভিন্ন যানবাহন। বিশেষ করে ইটভাটায় ব্যবহৃত মাটি বহনের যানবাহনগুলো সারা পাকারাস্তা জুড়ে কাদা-মাটি ছড়িয়ে যাচ্ছে। সাদা চোখে অপরাধটা খুব ছোট হলেও এর শিকার ঐ সমস্থ রাস্তায় চলাচলকারী সকল শ্রেণির মানুষ। রাস্তার উপর পড়ে থাকা কাদা-মাটি ভোরের কুয়াশার সাথে মিশে রাস্তায় পিচ্ছল করে তুলছে। ফলে সাইকেল মটর সাইকেলসহ পায়ে চলা দুস্কর হয়ে পড়ছে। আর বেলা বাড়ার সাথে সাথে ঐ কাদা-মাটি রোদে শুকিয়ে তীব্র ধুলার সৃষ্টি করছে। ফলে ঐ রাসস্তা দিয়ে ধুলা না মেখে চলাচল করা অসম্ভব হয়ে পড়ছে। বেশ কিছুদিন ধরে জেলার বিভিন্ন এলাকায় এই গণউপদ্রুপ অব্যাহতভাবে চললেও প্রতিকারের কোন লক্ষণ নেই।
ফলে কলারোয়ায় শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়ে কোদাল হাতে নিয়ে রাস্তা থেকে ইটভাটার কাদা-মাটি অপসারণ করলো। জেলার বিভিন্ন এলাকার মত কলারোয়ার বিভিন্ন এলাকার ইটভাটার দৌরাত্মে নাকাল পথচারীসহ শিক্ষার্থীরা। ইটভাটায় মাটি আনা-নেয়ার কাজে ব্যবহৃত ট্রাক্টরের ট্রলি আর ইঞ্জিন ট্রলির রাস্তায় চলাচল এতটাই দ্রুতগতির যে পথচারীরা আতংকে থাকেন স্বাভাবিক চলাফেরায়। শুধু তাই নয়, চলন্ত ট্রলি থেকে মাটি পড়ে পিচঢালা রাস্তা যেমন মাটি-কাদায় পরিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে তেমনি ইটের সোলিং রাস্তা ও মাটির রাস্তাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মারাত্মকভাবে। এসকল যানবাহন চলাচলে সুনির্দিষ্ট কোন নীতিমালা কিংবা নিয়মনীতি না থাকায় সংশ্লিষ্ট প্রশাসনও পড়ছেন বিপাকে। আবার কতিপয় প্রভাবশালীদের সন্তুষ্ট করে দেদারছে চলছে ইটভাটা সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্মযজ্ঞ। যেন দেখার কেউ নেই। তবে ট্রাক্টরের ক্ষেত্রে বিআরটিএ’র রেজিস্ট্রেশনসহ আনুষাঙ্গিক কাগজপত্র থাকার কথা থাকলেও বেশির ভাগ ইটভাটায় নিয়োজিত ট্রাক্টরগুলোর নূন্যতম কোন বৈধতা নেই। আর স্থানীয় পর্যায়ে তৈরিকৃত শ্যালো-ইঞ্জিনের ট্রলির ক্ষেত্রে তো কথা-ই নেই, তারা যেনো মগের মুল্লুকের বাদশা। পথচলার ক্ষেত্রে রাস্তাটা শুধু নিজেদেরই মনে করে এমনভাবে চলে যে অন্য যানবাহন বা পথচারীরা প্রতিনিয়ত বিপাকে পড়ছেন। ঘটছে ছোট-বড় দূর্ঘটনাও। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগামী শিক্ষার্থীরা থাকে সবসময় আতংকে।
কলারোয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ইটভাটার কাজে নিয়োজিত মাটিবাহী যানবাহন থেকে পড়ে যাওয়া মাটির কারণে রোদ্রের সময় রাস্তা যেমন ধুলাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে ঠিক তেমনি সামান্য বৃষ্টিতেই সেই রাস্তা হয়ে ওঠে কর্দমক্ত। মাটি-কাদার জেরে পিচের পাকা রাস্তা পিচ্ছল হয়ে শুধু যানবাহন নয় হেটে গেলেও পা পিছলে পড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে।
এমনই একটি চিত্র দেখা গেছে উপজেলার সোনাবাড়িয়া বাজারের পার্শ্ববর্তী সোনাবাড়িয়া হাইস্কুল সংলগ্ন পিচের পাকা রাস্তায়। গত দু’দিন আগের সন্ধ্যায় সামান্য বৃষ্টিতে জনগুরুত্বপূর্ণ ওই রাস্তার উপর পড়ে থাকা ইটভাটার মাটিতে কাদায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়ে চলাচলকারীরা। বিপদজনক হয়ে ওঠে স্কুলগামী শিক্ষার্থীসহ পথচারিদের জন্য। মুনাফাখোর ইটভাটার মালিকদের চরম দায়িত্বহীনতা আর উদাসীনতায় ওই পরিস্থিতির সৃষ্টিতে স্থানীয়সহ সংশ্লি¬ষ্ট প্রশাসন এগিয়ে না আসলেও মহতি উদ্যোগে হাত লাগায় স্কুল শিক্ষার্থীরা। তারা নিজেরা হাতে কোদাল নিয়ে রীতিমত রাস্তা থেকে কাদা-মাটি অপসারণ করে। উপযোগি করে তোলে যাতায়াতের। কতিপয় জনপ্রতিনিধিসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্টরা যখন হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকে তখন বাধ্য হয়ে ওই শিক্ষার্থীরা শুরু করে রাস্তা থেকে ইটভাটার মাটি-কাদা অপসারণে তাদের ও অন্যদের যাতায়াতের সুবিধার্থে। ক্লাস শুরুর আগে ও পরে সোনাবাড়িয়া হাইস্কুলের অর্ধশতাধিক ছাত্রের জনকল্যাণ ওই কাজ দেখে স্থানীয় অনেকে তাদের স্যালুট জানিয়েছে, করেছেন প্রশংসাও।
কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, ‘ইটভাটায় নিয়ে যাওয়া গাড়ি থেকে মাটি পড়ে পাকা রাস্তায় কাদা হয়ে গিয়েছে। এখানে চলাচলও করা যাচ্ছে না। কেউ এগিয়ে না আসায় আমরা বাধ্য হয়ে বাড়ি থেকে কোদাল নিয়ে এসে কাদা ও মাটি সরিয়ে দিচ্ছি।’ তবে এদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করেন ঐ সব শিক্ষার্থীরা।