ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোট:ঢাকা : কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের বক্তব্যের প্রতিবাদে বিভেদ ভুলে আবারও সমন্বিত আন্দোলনে নেমেছেন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা।
মঙ্গলবার বিকেল থেকে টিএসসি চত্বরে উপস্থিত হতে থাকেন ঢাবির শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যার পর শিক্ষার্থীদের স্লোগানে স্লোগানে উত্তাল হয়ে উঠে ঢাবির টিএসসি চত্বর। এর মাধ্যমে আন্দোলনের আগের দু’দিনের রূপ ফিরে এসেছে ঢাবি ক্যাম্পাসে।
আজকের এ আন্দোলনের জন্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের উস্কানিমূলক বক্তব্যকে দায়ী করছেন শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী গতকাল জাতীয় সংসদে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলকারীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে মন্তব্য করার পর তাকে ক্ষমা চাওয়ার জন্য মঙ্গলবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত সময় বেধে দেয়া হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোনো বক্তব্য না আসায় ফের আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাস। তারা ফের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে অবস্থান নিয়ে তাদের দাবির পক্ষে স্লোগান দিচ্ছেন।
মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এক ব্রিফিংয়ে তারা সুনির্দিষ্ট ঘোষণার আগ পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
৭ মে পর্যন্ত কর্মসূচি স্থগিত করা না করা প্রশ্নে মঙ্গলবার সকাল থেকে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন।
আন্দোলনকারীদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’-এর বাইরেও আরো অন্তত দুটি গ্রুপ তৈরি হয়। তবে, শেষ পর্যন্ত দুই মন্ত্রীর বক্তব্যই ঐক্যবদ্ধ করে দিলো তাদের।
গতকাল সংসদে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে মন্তব্য করেন মতিয়া চৌধুরী। এদিকে আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বাজেটের আগে কোটা সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া সম্ভব নয়।’
এর পর ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বলেন, আমরা ভেবেছিলাম সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের উপস্থিতিতে নেয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৭ মে পর্যন্ত ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করবো। কিন্তু সবাই এ বিষয়ে একমত ছিলো না। এখন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী আমাদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে গালি দিয়েছেন। অর্থমন্ত্রী বলেছেন- বাজেটের আগে সংস্কার সম্ভব নয়। এর প্রতিবাদে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
সরকারের এই দুই মন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে হাসান বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি চাই।
এর আগে, সরকারি নিয়োগে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতির সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের তুলোধুনা করেছেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী।
সোমবার সংসদ অধিবেশনে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, পরিষ্কার বলতে চাই, মুক্তিযুদ্ধ চলছে, চলবে। রাজাকারের বাচ্চাদের আমরা দেখে নেবো। তবে ছাত্রদের প্রতি আমাদের কোনও রাগ নেই। মতলববাজ, জামায়াত-শিবির, তাদের এজেন্টদের বিরুদ্ধে সামান্য শৈথিল্য দেখানো হবে না।
তিনি আরও বলেন, প্রতিবাদ করতে মুখোশ কেন পরতে হবে? মুখোশ কারা পরে? যারা ভণ্ড-প্রতারক তারাই মুখোশ পরে। সাহস থাকলে মুখটা দেখাও। ইতর হওয়ার একটা সীমা আছে।
এদিকে, মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটা অবশ্যই থাকবে, তবে এটি কত শতংশ হবে- তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। কোটা সংস্কার করা উচিত। আমি প্রধানমন্ত্রীকে পরামর্শ দিয়েছি- এটিকে সংস্কার করার জন্য। তবে বাজেটের আগে এটি সম্ভব নয়।
এদিকে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের পক্ষে মঙ্গলবার সকালে রাস্তায় নামে রাজধানীর বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করেন তারা।