ক্রাইমবার্তা রিপোট:সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে যে আন্দোলন চলছে, তার সূত্র ধরেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতিই বাতিল। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বুধবার বিকেল ৫টায় অধিবেশন শুরু হয়। কোটাসংস্কার নিয়ে প্রশ্নোত্তর পর্বে সংসদ সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকের প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘কোটা নিয়ে যখন এতকিছু, তখন কোটাই থাকবে না। কোনও কোটারই দরকার নেই।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোটা থাকলেই সংস্কারের প্রশ্ন আসবে। এখন সংস্কার করলে আগামীতে আরেক দল আবারও সংস্কারের কথা বলবে। কোটা থাকলেই ঝামেলা। সুতরাং কোনও কোটারই দরকার নেই।’ তিনি বলেন, ‘কোটা ব্যবস্থা বাদ, এটাই আমার পরিষ্কার কথা।’
এর আগে সকাল ১০টায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে কোটা সংস্কার বিষয়ে কথা বলতে যান কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন। পরে দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করেছি। সাক্ষাতের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সরকারি চাকরিতে কোনো কোটা থাকবে না।’
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দুপুরে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘আজ সংসদে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্ব আছে। সেখানে এই কোটা প্রসঙ্গ চলে আসতে পারে। সেখানে দেখুন প্রধানমন্ত্রী কী বলেন।’
সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা ব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে আন্দোলন ঢাবিসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলন চলছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না আসা পর্যন্ত বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। সারা দেশে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে।
ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি শিক্ষার্থীদের
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) একটি ছাত্রী হলে গভীর রাতে শিক্ষার্থীকে রক্তাক্ত করার প্রতিবাদ জানিয়েছে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানান।
বুধবার টিএসসির রাজু ভাস্কর্যে কোটা সংস্কার দাবির আন্দোলন থেকে শিক্ষার্থীরা এ দাবি জানায়।
বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান এ দাবি জানান।
তিনি বলেন, এই আন্দোলন যারা অংশগ্রহণ করেছেন, আন্দোলন শেষে তাদের প্রত্যেককে হলে ফিরতে হবে। কিন্তু সেখানে তারা নিরাপদ নয়। এই ক্যাম্পাসের কোনো ছাত্র যদি অন্যায় করে তাহলে প্রশাসন তদন্ত সাপেক্ষে তার ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু একজন ছাত্রের, তিনি যেই হোন না কেন, আরেকজন ছাত্রের গায়ে হাত তোলার বা আইন নিজের হাতে তোলার কোনো অধিকার নেই। তাই শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা হোরদার করতে প্রশাসনকে আন্তরিক হতে হবে।
তিনি আরো বলেন, নিরাপদ ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে নির্যাতনের ঘটনা ঘটলে প্রশাসনকে অবশ্যই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
এদিকে, সকাল ১০ থেকে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান কর্মসূচিতে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়।
প্রধানমন্ত্রীর স্পষ্ট ঘোষণা আসা পর্যস্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবে বলে জানানো হয়।
এর আগে ঢাবির কবি সুফিয়া কামাল হলে শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি ইফফাত জাহান এশা কর্তৃক শিক্ষার্থীদের নৃশংস অত্যাচারের প্রতিবাদে হলজুড়ে রাতেই বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা ছাত্রলীগ সভাপতিকে ধরে জুতার মালা পরিয়ে দিয়েছে বলে জানান শিক্ষার্থীরা।
বিক্ষোভে অংশ নেয়া সুফিয়া কামাল হলের ইলমা জাহান ইভা নামে এক শিক্ষার্থী ফেসবুক স্টাটাসে বলেন, ‘আমাদের এক আপুর পায়ের রগ কেটে দিয়েছে সুফিয়া কামাল হলের ছাত্রলীগ সভাপতি এশা। আপুকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। আর কুলাঙ্গার এসাকে জুতার মালা পড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয় এবং হল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।’
পরে গভীর রাতেই ক্যম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল বের করে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। এসময় তারা স্লোগান দেয়, ‘নিরাপদ ক্যম্পাস চাই’, ‘মরতে নয়, পড়তে এসেছি’, ‘হলে হলে নির্যাতন বন্ধ করো বন্ধ করো’।
এ খবরে রাতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে ক্যাম্পাসজুড়ে। বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা গেটের তালা ভেঙ্গে বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেয়। এসব হলে আগে থেকেই গেট বন্ধ করে রাখেন ছাত্রলীগ নেতারা।
ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীরা হলের ভিতরেই জড়ো হয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে। এ সময় সুফিয়া কামাল হলের শিক্ষার্থীরা রাজনীতিমুক্ত হলের দাবিসহ তিন দফা দাবি পেশ করেন।