ক্রাইমবার্তা রির্পৌট: জেলা মাসিক আইন ও শৃঙ্খলা বিষয়ক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধববার সকাল ১০টায় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় বাইপাস সড়ক, পুলিশি হয়রানি, ভৌতিক ও দেরীতে বিদ্যুৎ বিল প্রদান, লোডশেডিং, বিদ্যুতের খুটি দেওয়ার নামে টাকা আদায়, অবৈধভাবে বালি উত্তোলন, শহরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চুরিসহ বিগত সভায় সিদ্ধান্তের বিষয় সমূহের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করা হয়। এছাড়া একাধিক বক্তা সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল সড়কের উপর চাপ কমাতে ভোমরা সড়কের সাথে বাইপাসের সংযোগ সড়ক এবং শহরের যানজট মুক্ত করতে টার্মিনালের সাথে বাইপাসের একটি সংযোগ সড়কের দাবি করেন। আদি নকশা পরিবর্তনকারীদের খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নেয়ার দাবির প্রেক্ষিতে অনুষ্ঠানেই সড়ক ও জনপদের নির্বাহী প্রকৌশলীকে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে দ্রুত প্রকল্প প্রস্তাবনা দেওয়ার নির্দেশ দেন অনুষ্ঠানের সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন।
জেলা প্রশাসক মো. ইফতেখার হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাতক্ষীরা-৩ আসনের সাংসদ অধ্যাপক ডা. আ. ফ. ম রুহুল হক, সদর আসনের এমপি মীর মোস্তাক আহম্মেদ রবি, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মুনসুর আহম্মেদ, পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর রহমান, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব সভাপতি অধ্যাপক আবু আহম্মেদ, পৌর মেয়র তাসকিন আহমেদ চিশতি, সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাহমিনা খাতুন, শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কামরুজ্জামান, কলারোয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা পারভীন, তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফরিদ হোসেন, পিপি এড. ওসমান গনি, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি বিশ^জিৎ সাধু, পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মনোরঞ্জন মুখার্জী, পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার রবিন্দ্রনাথ, সড়ক ও জনপদের প্রকৌশলী মনজুরুল করিম, জেলা মৎস্য অফিসার শহীদুল ইসলাম, পৌর কাউন্সিলর জ্যোৎন্সা আরা, সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি ডা. সুদিপ্ত প্রমুখ।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাতক্ষীরা-৩ আসনের সাংসদ অধ্যাপক ডা. আ. ফ. ম রুহুল হক বলেন, সরকারি হাসপাতাল আগের তুলনায় অনেক ভালো হয়েছে। মানুষ এখন সরকারি হাসপাতালে যেয়ে সেবা পাচ্ছেন। সরকার নির্ধারিত ফি’র বেশি নিলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিনডি ডাইলোসিস মেশিন আনতে আমাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছিল। আমার বিরুদ্ধে নিউজ পর্যন্ত হয়েছিল। এখন অনেকে মানুষ এর সুফল পাচ্ছেন। এই সেক্টরে দক্ষ লোকবল পাওয়া অনেক কঠিন কাজ। সেবার মান আরও ভালো করতে সমাজের বিত্তশালীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
তিনি আরও বলেন, যুব সমাজকে বাঁচাতে হলে মাদকের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করতে হবে। জেলা, কামার, কুমার পেশার মানুষ অর্থের অভাবে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে। এদের পাশে সরকারি, বে-সরকারিভাবে দাঁড়াতে হবে। এছাড়া তিনি বর্ষার আগে রাস্তা-ঘাট মেরামতের নির্দেশ প্রদান করেন।
সদর-২ আসনের এমপি মীর মোস্তাক আহম্মেদ রবি বলেন, বাইপাসের মূল নকশা একনেকে অনুমোদন হয়েছিল ভোমরার সাথে সংযোগ হবে। কিন্তু অনুমোদনকৃত নকশা পাশ কাটিয়ে বাইপাস তৈরীতে যাদের হাত রয়েছে তাদের খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নিতে হবে। জঙ্গিবাদ সম্পর্কে মানুষকে বোঝাতে হবে। আমি উঠান বৈঠক করতে যেয়ে বুঝেছি। বিশেষ করে নারীদের জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে স্বোচ্ছার করে তুলতে হবে।
তিনি আরও বলেন, নদী দখল হচ্ছে কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। সামনে রমজান মাস এবং মুসলমানদের বড় উৎসব ঈদ। এটাকে সামনে রেখে অনেক অসাধু ব্যবসায়ী নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেয়। এতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করতে হবে।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনসুর আহম্মেদ বলেন, মেডিকেলে শিক্ষার পরিবেশ ভালো রাখতে এবং শহর উপর চাপ কমাতে টার্মিনালের সাথে বাইপাস সড়কের সংযোগ করার খুব দরকার। এটির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান। মেডিকেলে অনেক মানুষ কিডনি ডাইলোসিস করতে আসছে। কিন্তু এখানকার অধিকাংশ মেশিন বিকল হয়ে গেছে এবং জনবল সংকটের কারণে অনেকে মানুষ চিকিৎসা পাচ্ছেনা। বিদ্যুতের গ্রাহকরা এখনও সঠিক বিল পাচ্ছে না। মাঝে মাঝে অনেকের বাড়িতে ভৌতিক বিল দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া বিল প্ররিশোধ করেলেও সেটাও বকেয়া দেখানো হচ্ছে।
সড়ক ও জনপদের প্রকৌশলী মনজুরুল করিম বলেন, চলতি মাসের ২০ তারিখ থেকে পরীক্ষামুলকভাকে কিছু বাস-ট্রাক চলাচলের অনুমতি দেব। প্রকল্পের পুরোপুরি কাজ শেষ হবে ২০১৯ সালের জুন মাসে।
বাইপাস প্রকল্পটি মূল নকশায় না হওয়ায় সভার একাধিক বক্তরা প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, বাইপাসের প্রকল্পটি ২০১০ সালে গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি একনেকে পাশ হওয়ার আগে প্রতিনিধি দল পরিদর্শন করেছে। ভোমরা সড়কের সাথে বাইপাসের সংযোগ সড়ক এবং টার্মিনালের সাথে বাইপাসের একটি সংযোগ সড়কটি এই প্রকল্পটি হবে আলাদা প্রকল্প। বর্তমান প্রকল্পে এটা সম্ভব না। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে ফিজিবিলি স্ট্যাডি করে দ্রুত প্রকল্প প্রস্তাবনা পাঠানো হবে। তিনি আরও বলেন, ওজোপাডিকে যদি বাইসপাস প্রকল্পে তাদের কাজ শুরু না করে তাহলে টাকা ফিরে যাবে।
পৌর মেয়র তাসকিন আহমেদ চিশতি বলেন, পৌর এলাকায় সুপেয় পানির সংকট তীব্র। আমাদের যে পানির প্লান্ট আছে তা দিয়ে পৌর এলাকার মানুষকে পানির প্রয়োজন মেটানো সম্ভব না। সম্প্রতি একটি সুপেয় পানির প্রকল্পের কাজ পৌর এলাকার কুখরালীতে শুরু হয়েছে। কিন্তু ঠিকাদার সঠিকভাবে কাজ করছেন না বলে অভিযোগ করে বলেন, এটি বর্তমানে যেভাবে কাজ হচ্ছে তাতে প্রকল্পটি ২/৩ মাসের মধ্যে নষ্ট হয়ে যাবে। প্রকল্পটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে, এখান থেকে প্রতি ঘন্টা ৩৬০০ কিউসেক পানি পাওয়া যাবে। তা দিয়ে পৌর এলাকার মানুষের পানি সংকট অনেক কমে যাবে।
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব সভাপতি আবু আহম্মেদ বলেন, সদর হাসপাতালে উন্নতমানের যন্ত্রপাতি থাকা সত্ত্বেও চিকিৎসকরা অতিরিক্ত কমিশনের লোভে রোগীদের বাইরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পাঠাচ্ছেন। এতে করে সাধারণ মানুষ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা গ্রামের সাধারণ মানুষকে হয়রানি বন্ধের দাবি জানান তিনি।
পূজা উদযাপন পরিষদের মনোরঞ্জন মুখার্জী বলেন, সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন, তাদের জমি দখল, মন্দির ও শ্মশানের জায়গা দখলের ঘটনা বাড়ছে। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
পৌর কাউন্সিলর জ্যোৎ¯œা আরা সদর হাসপাতালে সকল পরীক্ষা-নিরীক্ষায় বেশি টাকা নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। জেলা মৎস্য অফিসার শহিদুল ইসলাম বলেন, চিংড়ি পোনা পাচার হয়ে যাচ্ছে। এটি রোধ করতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সজাগ থাকার অনুরোধ করেন।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি বিশ^জিৎ সাধু বলেন, তালার শালিখা নদী থেকে দখল উচ্ছেদ করে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করেন।
সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর রহমান বলেন, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রাখতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। কোটা আন্দোলনের নামে যাতে কেউ অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরী করতে না পারে সেদিকে আমরা সব সময় তৎপর আছি। গত মাসে ৫২ লাখ টাকার মাদক আটক করা হয়েছে। সাধারণ মানুষ যাতে পুলিশের দ্বারা হয়রানি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। যে পুলিশ সদস্য দ্বারা হয়রানি হবে তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, অপরাধ দমনে ও আইন শৃঙ্খলার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। শহরকে যানজট মুক্ত করতে ইঞ্জিন ও মটর চালিত ভ্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জেলাকে নিরাপদ রাখতে সকল কিছু করার আশ্বাস দেন তিনি।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে উপর চাপ কমাতে ভোমরা সড়কের সাথে বাইপাসের সংযোগ সড়ক এবং টার্মিনালের সাথে বাইপাসের সংযোগ সড়কের জন্য দ্রুত প্রকল্প প্রস্তাবনা দেওয়ার নির্দেশ দেন সড়ক ও জনপদের নির্বাহী প্রকৌশলীকে। এতে সকল প্রকার সাহায্য সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করে তিনি। এছাড়া বাইপাসে ওজোপাডিকোর কাজ করার নির্দেশ দেন।
তিনি আরও বলেন, গত সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই মাসে ভৌতিক বিল ও গ্রাহক হয়রানি অনেক কমে গেছে। শহরকে পরিস্কার পরিচ্ছন রাখতে গাছে পেরেক দিয়ে লাগানো বিভিন্ন পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন তুলে পরিস্কার পরিচ্ছন অভিযান চালানো হচ্ছে। নির্দিষ্টস্থানে পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন লাগানোর ব্যবস্থা করা হবে। পহেলা বৈশাখ শান্তিপূর্ণভাবে পালন করতে সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ওই দিন বিকাল ৫টার মধ্যে সকল অনুষ্ঠান শেষ করার নির্দেশনা প্রদান করেন। জেলা সার্বিক আইন শৃঙ্খলা আগের তুলনা অনেক ভালো হয়েছে।