ক্যাম্পাসে আনন্দ মিছিল * শেখ হাসিনাকে ‘মাদার অব এডুকেশন’ উপাধি * আন্দোলনকারীরা হয়রানির শিকার হবে না : ঢাবি ভিসি * প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী প্রজ্ঞাপন জারি হবে : জনপ্রশাসন সচিব * ইবির ২২ শিক্ষার্থীকে হল থেকে বিতাড়ন * সুফিয়া কামাল হলের ঘটনায় ছাত্রলীগের তদন্ত কমিটি
ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোট:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের আলোকে প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন’ স্থগিত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতারা সংবাদ সম্মেলন থেকে এ ঘোষণা দেন। এ সময় দাবি মেনে নেয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শেখ হাসিনাকে ‘মাদার অব এডুকেশন’ উপাধি দেন। ঢাবিসহ দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ক্যাম্পাসে আনন্দ মিছিল হয়। আন্দোলনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা উল্লাসে মেতে ওঠেন।
এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনে জড়িত থাকার দায়ে বৃহস্পতিবারই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানসহ ২২ শিক্ষার্থীকে হল থেকে বের করে দেয়া হয়। একই কারণে আরও দু-একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বুধবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে এক বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতি বাতিলের ঘোষণা দেন। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী ওই বক্তৃতার বিভিন্ন দিক পর্যালোচনার পর বৃহস্পতিবার আন্দোলনকারীদের নেতারা সংবাদ সম্মেলন করেন। ওই সংবাদ সম্মেলনেই প্রজ্ঞাপন জারি না করা পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেয়া হয়। জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর বুধবারই ঢাবিসহ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় চার দিনের উত্তপ্ত ক্যাম্পাস বৃহস্পতিবার ছিল শান্ত। আন্দোলনের দিনগুলোর মতো এ দিনও সাধারণ ছাত্রছাত্রী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা হল-বাসাবাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন। তবে বিক্ষোভের পরিবর্তে সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে তারা আনন্দ মিছিল করে তাদের উল্লাস প্রকাশ করেন।
এদিকে সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী প্রজ্ঞাপন জারি হবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোজাম্মেল হক খান। এ ব্যাপারে তারা প্রধানমন্ত্রীর পরবর্তী নির্দেশনার অপেক্ষায় আছেন বলে তিনি জানান।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে সংবাদ সম্মেলন করেন সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতারা। এতে সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ছাত্রসমাজের কথা বিবেচনা করে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাকে আমরা স্বাগত জানাই। প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন স্থগিত থাকবে।’ যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা ‘গেজেট’ আকারে প্রকাশ ও এর দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান। তারা মোট ৬ দফা দাবি তুলে ধরেন। নেতারা আন্দোলনের সময় গ্রেফতার হওয়া শিক্ষার্থীদের নিঃশর্ত মুক্তি; ‘পুলিশি নির্যাতনে’ আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন; পুলিশ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়ের করা ৫ মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান। পাশাপাশি আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী ও নেতাদের পরবর্তী সময়ে কোনো হয়রানি না করার আহ্বান জানান। এরকম ঘটনা ঘটলে তারা আবারও আন্দোলনে নামার হুমকি দেন। যদিও আন্দোলনে জড়িত থাকার দায়ে বৃহস্পতিবারই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানসহ ২২ শিক্ষার্থীকে হল থেকে বের করে দেয়া হয়। সংবাদ সম্মেলন শেষে দুপুর ১২টার দিকে টিএসসি সংলগ্ন রাজু ভাস্কর্য থেকে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে একটি মিছিল বের হয়। মিছিলে নেতৃত্ব দেন সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা। মিছিলটি রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে শুরু হয়ে শহীদ মিনার, দোয়েল চত্বর, টিএসসি হয়ে শাহবাগে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে স্লোগান দেন তারা। এর আগে কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্তের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ‘মাদার অব এডুকেশন’ উপাধি দেন তারা।
আন্দোলনকারীরা হয়রানির শিকার হবে না : এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, যারা শুধু আন্দোলন করেছে তাদের যাতে হয়রানি না করা হয়, সেটি আমরা বলে দিয়েছি। তবে আন্দোলনের নামে যারা ভিসির বাসভবনে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠন চালিয়েছে তাদের বিচার হবে, তাদের হয়রানিও করা হবে। আমরা সিন্ডিকেট থেকে সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়েছি- যাতে ওই দুষ্কৃতকারীদের শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনা হয়।
বাসভবন ভাংচুরের বিষয়ে ভিসি বলেন, আমরা শুরু থেকেই বলেছি, আমাদের শিক্ষার্থীরা এ ধরনের তাণ্ডবের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে না। আমাদের ছাত্ররা এমন কাজ করতে পারে- সেটা আমাদের চিন্তায়ও আসে না। আর সেখানে যদি আমাদের কোনো ছাত্র থাকেও সেটা হবে এ জাতির জন্য চরম দুর্ভাগ্যজনক একটি ঘটনা। মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, আন্দোলনকারীদের নামে মামলা হয়নি। মামলা হয়েছে দুষ্কৃতকারীদের নামে। আন্দোলনকারীদের মামলা নিয়ে শঙ্কার কিছু নেই।
সুফিয়া কামাল হলে ছাত্রী লাঞ্ছনার বিষয়ে তিনি বলেন, ছাত্রীর রগ কাটার যে অভিযোগ এসেছে আমরা তার ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট ছাত্রীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেইনি। কারণ তার প্রমাণ আমরা পাইনি। আমি যেটি বিচেনায় নিয়েছি, তা হল- লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা। লাঞ্ছিত হবে কেন? এক শিক্ষার্থীকে আরেকজন শিক্ষার্থীর লাঞ্ছিত করার অধিকার নেই। তবে এটা একটা নজিরবিহীন ঘটনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এমন কোনো নজির নেই যে, এত দ্রুত আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। এ ঘটনায় হল প্রশাসনকে একটি তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ছাত্রলীগের তদন্ত কমিটি : এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হলের ঘটনা তদন্তে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ছাত্রলীগ। কমিটিকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এ কমিটিতে আছেন- ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি নুসরাত জাহান নুপূর ও নিশীতা ইকবাল নদী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসান, সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্স প্রমুখ। এ বিষয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন যুগান্তরকে বলেন, প্রকৃত ঘটনা বের করতেই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।