স্টাফ রিপোর্টার:আজ চৈত্র সংক্রান্তি। মহাকালের অতল গহ্বরে আজ হারিয়ে যাবে আরেকটি বছর। আগমন ঘটবে নতুন বছরের। বাংলা একাডেমির বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী বছরের প্রথম ৫ মাস (বৈশাখ-ভাদ্র) ৩১ দিনে গণনা করা হয়।
আর বাকি ৭ মাস ৩০ দিনের। সে হিসাবে বছরের শেষ মাস চৈত্র ৩০ দিনের। আজ শুক্রবার ৩০ চৈত্র ১৪২৪ বঙ্গাব্দের শেষ দিন। শেষদিনকে ‘চৈত্রসংক্রান্তি’ নামে অভিহিত করা হয়। এ উপলক্ষে বাংলাদেশে প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে নানা অনুষ্ঠান-পূজা-পার্বণ-মেলা।
বহুকাল ধরে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর আগে বাঙালি সংস্কৃতিতে বছরের শেষদিনটি আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় জানানো হয়। এ দেশে জমিদারির খাজনা আদায়ের লক্ষ্যে সম্ভবত বৈশাখী মেলার পত্তন ঘটে। অনেকের ধারণা, মূলত খাজনা আদায়কে একটি আনুষ্ঠানিক রূপ দেয়ার জন্য চৈত্রসংক্রান্তি মেলার উৎপত্তি হয়েছিল। হিন্দু পঞ্জিকামতে, দিনটিকে মহাবিষুর সংক্রান্তি নামে গণ্য করা হয়। ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এ দিনে বর্ষ বিদায় উৎসব পালন করে। দোকানপাট ধুয়ে-মুছে বিদায়ী বছরের সব জঞ্জাল, অশুচিতা দূর করা হয়।
পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার, শাঁখারীবাজার, লক্ষ্মীবাজার ও বাংলাবাজারে দিনটি ধুমধাম করে পালন করা হয়। পুঁথিনিলয় প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ও বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহ-সভাপতি শ্যামল পাল বলেন, চৈত্রসংক্রান্তি আর পহেলা বৈশাখকে ঘিরে কয়েকদিন ধরে মহাব্যস্ততা যাচ্ছে। চৈত্রসংক্রান্তি উপলক্ষে পুরো দোকানপাট রঙ করে ধুয়ে-মুছে প্রস্তুত করা হয়। এর পরেরদিন খোলা হয় হালখাতা।
চৈত্রসংক্রান্তি ও পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মেলায় থাকে নানা ধরনের পিঠাপুলি, বাতাসা, হাওয়াই মিঠাই, মুড়ি-মুড়কি, মাটির খেলনা। আরও কত কি! মেলাগুলো লোকজ নানা গান-বাজনা, পালাগান, যাত্রাপালা, প্রদর্শনীসহ নানা আয়োজন থাকে।
চৈত্রসংক্রান্তি উপলক্ষে বাংলাদেশের বিভিন্ন আদিবাসীর মাঝে প্রচলিত রয়েছে নানা উৎসব ও অনুষ্ঠান। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পার্বত্য অঞ্চলেও দিন ঘিরে রীতিমতো উৎসবমুখর হয়ে ওঠে। পার্বত্য চট্টগ্রামের সব জেলাতেই বিভিন্ন উপজাতির বসবাস। বছরের শেষ দিন অর্থাৎ চৈত্রমাসের শেষ দিন তারা বিজু উৎসব পালন করেন। বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতায় অলঙ্কৃত এ বিজু উৎসব। তখন প্রতিটি বাড়িতেই নানা স্বাদের খাবার তৈরি হয়।
তাদের ধারণা, সবরকম খাবার খেয়ে বিলিয়ে বর্ষ বিদায় করা পুণ্যের কাজ। এদিন তরুণ-তরুণীরা নদী থেকে জল এনে বাড়ির বয়স্কদের øান করিয়ে দেন। আশীর্বাদ গ্রহণ করেন। সদ্য বিবাহিত বর-কনেরা বেড়াতে যান বাপের বাড়ি কিংবা শ্বশুরবাড়ি। শুধু বাড়ি বাড়ি নয়, সর্বত্রই চলে আমোদ-ফুর্তি।
নতুন বছরকে সুন্দর করে বরণ করার জন্য সব বাড়ি মেরামত করে। বোশেখের বৃষ্টির পর ‘জুম’ চাষ শুরু হবে। জুম চাষের প্রস্তুতি হিসেবেই বিজু উৎসব। উৎসবের মূল দিনে অর্থাৎ চৈত্রের শেষ দিনে ধর্ম অনুষ্ঠানে মিলিত হয় সবাই। নাচে, গানে ও নানা অনুষ্ঠানে মেতে ওঠে।
চৈত্রসংক্রান্তি উপলক্ষে ইতিমধ্যেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বসেছে মেলা। গবেষকদের মতে, এ সময়ে সারা দেশে ৩০০ মেলা বসে। নানা আয়োজনে আজ যখন চৈত্রসংক্রান্তির পার্বণ, তখন একই সঙ্গে দুয়ারে কড়া নাড়ছে বাঙালির সবচেয়ে বড় অসাম্প্রদায়িক উৎসব পহেলা বৈশাখ। রাত পোহালেই কাল নতুন দিন। শুধু নতুন দিনই নয়। নতুন বছর ১৪২৫ কে স্বাগত জানাতে পুরো বাংলাদেশ এখন উন্মুখ।