*সাড়ে ২৯ কোটি টাকায় ব্যয়ে নির্মিতব্য প্রতিষ্ঠানটি অচলাবস্থা
*দুটি মন্ত্রণালয়ের রেশারেশির কারণে সারা দেশে ৬৪টি কেন্দ্রের একই অবস্থা
আবু সাইদ বিশ্বাসঃসাতক্ষীরাঃ জনবল সংকটের কারণে স্থিমিত হয়ে পড়েছে সাতক্ষীরা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র একাডেমিক কার্যক্রম । ৮৫ জন জনবলের বিপরীতে মাত্র ১০ জন দিয়ে কোন রকমে চলছে প্রতিষ্ঠানটি। ফলে সাড়ে ২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত প্রতিষ্ঠানটি তেমন কাজে আসছে না। প্রতিষ্ঠানটির গতি ফিরে পেলে বছরে দুই সহ¯্রাধীক জনশক্তির কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে এমনটায় আশা করছেন কর্তৃপক্ষ। দুটি মন্ত্রাণালয়ের পারষ্পরিক অবহেলার কারণে সারা দেশে টিটিসি কলেজ গুলোর একই অবস্থা।
জানা যায়, ২০১২ সালে সাতক্ষীরা থেকে ৬কিঃমি দূরে সাতক্ষীরা-খুলনা মহাসড়কের বিনেরপোতায় দুই একর জমির উপর সাতক্ষীরা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টি,টি,সি) স্থাপন করা হয়। একাডেমিক, প্রশাসনিক, ছাত্রাবাস সহ ৫টি ভবন নির্মানের কাজ শেষ হয় ২০১৬ সালের শেষ দিকে। ২০১৭ সালের ১লা জানুয়ারী প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম শুরু হয়। কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, গার্মেন্টস, অটোমোবাইল, ইলেকট্রনিক্স, গৃহকর্মী প্রশিক্ষণ,বিদেশগামী কর্মীদের প্রশিক্ষণ,ইংরেজি ভাষা শিক্ষার র্কোস সহ বিভিন্ন বিষয়ে অদক্ষ জনশক্তিদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি লক্ষ্যে কাজ শুরু করে।
বর্তমানে এসএসসি পাশ বা সমমানের যুবকদের ৬ মাস মেয়াদি কম্পিউটার ও অটোক্যাড বিষয়ে বছরে ৪শ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। ৮ম শ্রেণী পাশকৃত জনশক্তির মধ্যে গার্মেন্টস, অটোমোবাইল, ইলেকট্রনিক্স ও ইলেকট্রিক্যাল বিষয়ে বছরে ৬৮০ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এছাড়া বিদেশগামী কর্মীদের ৩ দিনের প্রাক-বহির্গমন প্রশিক্ষণ,গৃহকর্মী পেশায় বিদেশগামী নারী কর্মীদের ৩০ দিনের হাউজ কিপিং প্রশিক্ষণ এবং দুই মাস মেয়াদী ইংরেজি ভাষা শিক্ষ কোর্স এর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
প্রতিষ্ঠানটিতে রয়েছে, ১৪৪ আসন সম্বলিত চারতলা ডরমেটরী ভবন, ৩৫টি অত্যাধুনিক কম্পিউটার, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর সমৃদ্ধ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কম্পিউটার ল্যাব। ৩১টি অথ্যাধুনিক কম্পিউটার, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর সমৃদ্ধ অটোক্যাড ল্যাব। ৬৫টি বিভিন্ন ক্যাটাগরির অত্যাধুনিক ইন্ডাস্ট্রিয়াল সেলাই মেশিন সমৃদ্ধ গার্মেন্টস ওয়ার্কশপ। রয়েছে প্রাইভেট কার ও মোটর সাইকেল ড্রাইভিং সহ হাতে –কলমে গাড়ির ইঞ্জিনের কাজ শেখার সুযোগ।
বর্তমান সরকারের সময়ে সাতক্ষীরার বিনেরপোতায় অবস্থিত সাতক্ষীরা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টি,টি,সি) যেন সাতক্ষীরার উন্নয়ন মডেল। ভবনটি দেখলে মনে হবে এটি কোন উন্নত দেশেরই অংশ। সাতক্ষীরার বুকে উন্নয়নের এমন ছুয়া একদিন ভাবাইছিল কল্পনাহীন। মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় অবহেলিত সাতক্ষীরা জেলা একটি মডেল জেলায় রূপান্তির হতে চলেছে। সরকারের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হলে উন্নয়নের এমন চিত্র সাতক্ষীরা বাসির কাছে তুলে ধরতে হবে এমন দাবী সরকার দলীয় রাজনীতিবীদদের।
এদিকে জনবল সংকটের কারণে সাতক্ষীরা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র একাডেমিক কার্যক্রমের মুখ থুঁবড়ে পড়েছে। ২০১৫ সালের ১লা নভেম্বর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয় মুছাব্বেরুজ্জামানকে। সেখান থেকেই ভারপ্রপ্ত দিয়েই চলছে প্রতিষ্ঠানটির একাডেমিক কার্যক্রম। ৮৫ জন জনবলের বিপরীতে কর্মরত আছে মাত্র ১০ জন। প্রতিষ্ঠানটিতে ভাইসপ্রিন্সিপাল একজন,প্রধান ইনস্ট্রাকটর ১২ জনের পদই রয়েছে শূন্য। ইনস্ট্রাকটর(ডিপ্লোমা) ১৮ পদের ১২টিই শূন্য রয়েছে। ইনস্ট্রাকটর নন ডিপ্লোমা ৫টি পদই শূন্য। কম্পিউটার অপারেটার, প্রধান সহকারী, হিসাব রক্ষক, সহকারী স্টোরকিপার, কেয়ারটেকার, ড্রেসার, কেশিয়ার, হোস্টেল সুপার, ড্রাইভার, ল্যাবট্যারি এট্যেন্ডএন্ট, ইলেকট্রেশিয়ান, কুক, এমএলএসএস, নিরাপত্তা প্রহরী, বাগান রক্ষক ও ক্লিনার পদ রয়েছে ফাঁকা। স্কিল ওয়ার্কও পদে ৯ জনের বিপরীতে আছে মাত্র ৩জন। সব মিলে ৮৫ জন জনবলের কাজ করতে হচ্ছে ১০ জন দিয়ে। ফলে একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
আইনী জটিজলাতার কারণে নিয়োগ দিতে পারছে না জনশক্তি,কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো ও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। সূত্র জানায়, সারা দেশে ৬৪টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) রয়েছে। প্রতিটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে একজন করে প্রথম শ্রেণীর গ্রাজুয়েট কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন মন্ত্রণালয়। কিন্তু দীর্ঘ দিন ভারপ্রাপ্তে থাকা অধ্যক্ষরা এতে আপত্তি জানায়। তাদের দাবী সরাসরি নিয়োগ না দিয়ে প্রতিষ্ঠান গুলোতে কর্মরত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে পূর্ণমর্যাদায় অধ্যক্ষের মর্যাদা দেয়া হোক। তিন্তু সরকার তাতে দ্বিমত পোষণ করলে উচ্চ আদালতের দারস্থ হন এক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। ফলে আদালতে নিষ্পতি না হওয়াতে ঝুলে আছে সারাদেশে ৬৪টি টিটিসি কলেজের অধ্যক্ষের পদ। এদিকে বাকি পদ গুলো শূন্য ঘোষণা না করায় নিযোগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে না। এছাড়া সাতক্ষীরাতে যে ১০জন কর্মরত আছে তাঁদের বেতন ভাতা অন্যপ্রতিষ্ঠানের নামে উত্তলন করা হয়। ভারপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান প্রধানের বেতন নাটোর টিটিসি কলেজ থেকে বিল করা হয়। এমন অবস্থা বাকি সব শিক্ষকের।
প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ মুছাব্বেরুজ্জামান জানান, জনবল সংকটের কারণে সঠিক ভাবে একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। জনবল সংকট নিরাশন হলে, নতুন কয়েকটি র্কোস চালু করতে সহজ হবে। প্রস্তাবিত র্কোস সমূহ হল: ওয়ের্ল্ডিং এন্ড ফেব্রিকেশন,মেশিন টুলস অপারেশন,সিভিল কন্সট্রাকন,গ্রাফিক্স ডিজাইন,ইন্ডাস্ট্রিয়াল সুইং মেশিনে অপারেশন এন্ড মেইনটেন্যান্স,ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ শিক্ষণ, কোরিয়ান ভাষা শিক্ষণ,আরবী ভাষা শিক্ষণ এবং হাউজ কিপিং ।
এবিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন জানান,জনবল সংকট দুরিভূত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আমি মন্ত্রণালয়ের সাথে কথা বলবো। ইতোমধ্যে আমি সাতক্ষীরা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিদর্শন করেছি। তিনি আরো জানান,প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম সঠিক ভাবে পরিচালিত হলে সাতক্ষীরা বাসি ব্যাপক উপকৃত হবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে নতুন নতুন ক্ষেত্রে।