ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোট: দলের মনোনয়ন না পেলেও আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হবেন যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ডিত জামায়াতে ইসলামীর সাবেক নায়েবে আমির মাওলানা আবদুস সুবহানের ছেলে নেছার আহমেদ নান্নু। পাবনা-৫ আসনে প্রার্থী হতে আগ্রহী নান্নুর দাবি, বাবার আসনে তাকে মনোনয়ন না দিয়ে জামায়াত তার পরিবারের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।
যুদ্ধাপরাধের বিচারে কোণঠাসা জামায়াত হাইকোর্টের রায়ে নিবন্ধন হারিয়েছে। আপিল বিভাগে নিবন্ধন ফিরে না পেলে দলীয় প্রতীক ও পরিচয়ে ভোটে অংশ নিতে পারবেন না জামায়াত নেতারা। নিবন্ধন না পেলে তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন, নাকি দলের প্রতীকে নির্বাচন করবেন- তা নিশ্চিত না হলেও জামায়াত পাবনার পাঁচটি আসনে প্রার্থী ঠিক করেছে।
জামায়াতে নিজে থেকে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ নেই। দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, কোনো পর্যায়ের নেতাকর্মী নিজে থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করতে পারেন না। তৃণমূলের সুপারিশে দলের মনোনয়ন বোর্ড প্রার্থী ঠিক করে। সংসদ সদস্যপদে প্রার্থী হতে কমপক্ষে দলের রুকন হতে হয়।
কিন্তু পাবনায় জামায়াতের দলীয় ‘ঐতিহ্য’ ভেঙে বিদ্রোহী নেতারা সরব হয়েছেন। গণমাধ্যমে প্রার্থিতার ঘোষণা দিচ্ছেন খোলাখুলি। দলটির কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য এহসানুল মাহবুব জোবায়ের বলেছেন, যারা বিদ্রোহ করছেন, তারা যোগ্য নন। প্রার্থী কে হবেন, তা নির্ধারণ করবে দল; কোনো ব্যক্তি নয়।
পাবনা জেলা জামায়াতের সূত্রগুলো বলছে, অভ্যন্তরীণ বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে আগামী নির্বাচনকে ঘিরে। তৃণমূলের এক হাজার ৫৮৪ জন রুকনের মতামতে জেলার পাঁচটি আসনে প্রার্থী ঠিক করা হয়েছিল। তারা হলেন- পাবনা-১ আসনে বেড়া উপজেলা আমির ডা. আবদুল বাসেত খান, পাবনা-২ আসনে সুজানগর উপজেলা আমির কে এম হেসাব উদ্দিন, পাবনা-৩ আসনে ফরিদপুর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান শাপিনুর ইসলাম, পাবনা-৪ আসনে আটঘরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মাওলানা জহুরুল ইসলাম ও পাবনা-৫ আসনে জেলার সাবেক আমির মাওলানা আবদুর রহীম।
কিন্তু তৃণমূলের মতামত উপেক্ষা করে কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড তিনটি আসনে প্রার্থী পরিবর্তন করে। পাবনা-১ আসনে যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর ছেলে ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন, পাবনা-৪ আসনে জেলা আমির আবু তালেব মণ্ডল ও পাবনা-৫ আসনে জেলার সেক্রেটারি মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইনকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়। তবে নিজামীর যুক্তরাজ্যপ্রবাসী ছেলে নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী নন।
পাবনা জামায়াতের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সমকালকে বলেন, দলে দুটি ধারা রয়েছে। একটি অংশ মনে করে, যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ডিত নিজামী ও সুবহানের পরিবারের কাউকে মনোনয়ন দেওয়া যাবে না। অপর অংশ চাইছে, তাদের পরিবারকে মূল্যায়ন করা হোক। জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নিজামীর ছেলেকে প্রার্থী করতে চাইলেও সুবহানের ছেলেকে মনোনয়ন দিতে রাজি নয়।
পাবনা-৫ আসনে তিনবার জয়ী হন সুবহান। তার ছেলে নেছার আহমেদ নান্নু দাবি করেন, জেল থেকে তার বাবা মতামত দিয়েছেন, তাকেই যেন মনোনয়ন দেওয়া হয়। এতে জামায়াতের ভালো হবে। নান্নু বলেন, তার পরিবারের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে জামায়াত। নিজামীর ছেলে আগ্রহী না হলেও নাজিব মোমেনকে প্রার্থী করতে চায় জামায়াত। কিন্তু তার বেলায় কোনো সহানুভূতি দেখায়নি। মনোনয়ন না পেলেও প্রার্থী হবেন জানিয়ে নান্নু বলেন, ‘আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ নেব। প্রার্থী হচ্ছি- এটা শতভাগ নিশ্চিত।’
তৃণমূল সুপারিশ করলেও দলের কাছ থেকে সবুজসংকেত পাননি বেড়া উপজেলা আমির ডা. আবদুল বাসেত খান ও আটঘরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মাওলানা জহুরুল ইসলাম। তাদের পাবনা-১ ও পাবনা-৪ আসনে প্রার্থী করতে সুপারিশ করেছিলেন তৃণমূলের নেতারা।
মনোনয়নবঞ্চিত হলেও বিদ্রোহী প্রার্থী হবেন না বলে জানিয়েছেন আবদুল বাসেত খান। তিনি বলেন, ‘জামায়াত একটি সুসংগঠিত দল। এখানে নিজে নিজে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ নেই।’ মনোনয়নবঞ্চিত জহুরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ‘তৃণমূলের ভোটে কেন্দ্র যাদের নাম ঘোষণা করেছে, তারাই জামায়াতের প্রার্থী। কারও ব্যক্তিইচ্ছা মূল্যহীন।’
সুবহানের ছেলের বিদ্রোহী হওয়া সম্পর্কে জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যক্ষ ইকবাল হোসাইন বলেন, ‘দেশের সব নাগরিকের অধিকার রয়েছে প্রার্থী হওয়ার। দল পাবনা সদরে আমাকে প্রার্থী করেছে, নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।’ তার দাবি, জোটবদ্ধ বা একক যেভাবেই হোক, আগামী নির্বাচনে পাবনা-১ ও পাবনা-৫ আসনে জামায়াতের প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিশ্চিত।
জেলা জামায়াতের আমির আবু তালেব মণ্ডল বলেন, তারা জেলার পাঁচটি আসনেই প্রার্থী চূড়ান্ত করেছেন। নান্নুর বিদ্রোহী হওয়াকে আমলে নিচ্ছেন না জেলা আমির। তিনি বলেন, দুঃসময়ে দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলে মনোনয়ন দেওয়া হবে- নান্নুকে এ প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি এড়িয়ে চলে নিজেকেই দল থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছেন।
আগেভাগে এককভাবে প্রার্থী ঘোষণা করায় জামায়াতের ওপর নাখোশ বিএনপি। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার হাবিবুর রহমান তোতা বলেন, পাবনা-৫ আসনে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসকে ২০ দলীয় জোটের একক প্রার্থী করা হবে। বাকি চার আসনেও বিএনপির প্রার্থীরাই হবেন জোটের প্রার্থী। সমকাল