এনডিটিভি : দিল্লীর দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় এলাকা কালিন্দি কুনজারিয়াতে একটি রোহিঙ্গা শিবিরে আগুন লেগে অন্তত ৪৪টি ঘর পুড়ে গেছে। এতে গৃহহীন হয়ে পড়েছে অন্তত ২২৮ জন রোহিঙ্গা শরণার্থী। স্থানীয় পুলিশকে উদ্ধৃত করে ভারতীয় বার্তা সংস্থা জানায়, গত রোববার ভোরের আলো ফোটার আগেই এ অগ্নিকা- হয়। তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনও প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি।
রাখাইন রাজ্যে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার কারণে গত শতকের ৮০ এর দশক থেকে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক বললেও মিয়ানমারের পক্ষ থেকে কার্যত কোনওদিনই তা স্বীকার করা হয়নি। তাদের ফিরিয়ে নিতে বার বার আহ্বান জানানো হলেও মিয়ানমারের সাড়া পাওয়া যায়নি। এরমধ্যেই গত বছরের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে পুলিশ চেকপোস্টে সহিংসতার পর বহুদিন ধরে চালানো রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞ জোরালো করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। হত্যা ও ধর্ষণ থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে নতুন করে পালিয়ে আসে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা। জাতিসংঘ এই ঘটনাকে জাতিগত নিধনযজ্ঞের ‘পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ’ বলে উল্লেখ করেছে। একে নিধনযজ্ঞ বলেছে যুক্তরাষ্ট্রও। রাখাইনে নিধনযজ্ঞের শিকার হয়ে বিভিন্ন সময়ে ভারতে পালিয়েছে ৪০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা। জম্মু, হায়দারাবাদ, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, দিল্লী ও রাজস্থানে বসবাস করছে তারা।
পুলিশকে উদ্ধৃত করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, গত রোববার ভোর সাড়ে তিনটার দিকে দিল্লীর রোহিঙ্গা শিবিরটিতে আগুন লাগে। ঘটনাটি ঘটেছে দিল্লীর কালিন্দী কুঞ্জ মেট্রো স্টেশনের কাছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় দমকলের ১১টি ইঞ্জিন। তিন ঘণ্টারও বেশি সময়ের প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন তারা। বেশিরভাগ ঘর প্লাস্টিকের তৈরি হওয়ার কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বৈদ্যুতিক তারের শর্ট সার্কিট থেকেই ওই আগুন লেগেছিল বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। শিবিরের বাসিন্দাদের অস্থায়ী শিবিরে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
দুইশ’রও বেশি মানুষের বসবাসস্থলে আগুন লাগার কারণে খুব সহজেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একই সঙ্গে সৃষ্টি হয় চরম বিশৃঙ্খলা। যদিও দুর্গতদের পাশে দাঁড়ায় বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, পুলিশ এবং স্থানীয় বাসিন্দারা। দুর্গত এক রোহিঙ্গার কথায়, “আগুনের কবলে আমার সব পুড়ে গিয়েছে। কিছুই আর অবশিষ্ট নেই।”
প্রতিবেদনে বলা হয়, অসহায় রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন তাদের সব মালামাল আগুনে পুড়ে গেছে। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকায় আর্থিক সম্বলটুকুও তাদেরকে সঙ্গে রাখতে হয়। আগুন লেগে সে টাকাও পুড়ে গেছে।
যে শিবিরটিতে আগুন লেগেছে সরকারি হিসেব অনুসারে সেখানে ৪৪টি ছোট ছোট ঝুপড়ি ছিল। মোট ২২৮ জন সেখানে বসবাস করতেন। বাসিন্দাদের সকলেই রোহিঙ্গা। আপাতত তাদের জন্য অস্থায়ী শিবিরের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে এবং মশারি দেওয়া হয়েছে। যে এলাকায় তাঁদের শিবির ছিলে সেখানেই আবারও আবাসস্থল তৈরি করে দেওয়া হবে।