ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোট: আসন্ন খুলনা ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে পূর্ণশক্তি নিয়ে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি।
জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দুই দলই এ সিটির ভোটকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। কারণ এ ভোটের ফল জাতীয় নির্বাচনে নেতাকর্মীসহ সাধারণ ভোটারদের ওপর মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তাই প্রতীক পাওয়ার আগেই ‘রণকৌশল’ চূড়ান্ত করতে ব্যস্ত সময় পার করছে দল দুটির নীতিনির্ধারকরা। নির্বাচনের সার্বিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে দুই সিটিতেই কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি গঠনের পরিকল্পনা করেছে তারা।
এরই অংশ হিসেবে স্থায়ী কমিটির দুই সদস্যকে দুই সিটির সমন্বয়কের দায়িত্ব দিয়েছে বিএনপি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ খুলনার ব্যাপারে কেন্দ্রীয়ভাবে কমিটি করার সিদ্ধান্ত নিলেও গাজীপুরের বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত করেনি।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নীতিনির্ধারণী সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য। আরও জানা গেছে, কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি স্থানীয় নেতাদের মতামত নিয়ে নির্বাচনী কৌশল চূড়ান্ত করবেন।
প্রতীক পাওয়ার পর একযোগে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটে যাবেন তারা। ভোটারদের কাছে টানতে দুই দলই প্রচারে নতুনত্ব আনার চেষ্টা করছে। মহিলা ও নতুন ভোটারদের আকৃষ্ট করতে বিশেষ পরিকল্পনাও রয়েছে দুই দলের। গণসংযোগে থাকবে ডিজিটালের ছোঁয়াও।
যদিও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েই অনানুষ্ঠানিক গণসংযোগে নেমে পড়েছে দুই দলের মেয়র ও দল সমর্থিত সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থী। দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন তারা। স্থানীয় নেতারা কর্মকৌশল চূড়ান্তে দফায় দফায় বৈঠক করছেন।
নেতাকর্মীদের মনোমালিন্য দূর করার চেষ্টা করছেন। পাশাপাশি কাউন্সিলর পদে দুই দলেরই একাধিক প্রার্থী থাকায় দল সমর্থিত একক প্রার্থী দেয়ার বিষয়ে চলছে নানা তৎপরতা।
সূত্র জানায়, খুলনা ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিজয়ের জন্য দুই সিটিতে দুই ধরনের কৌশল নিয়ে মাঠে নামতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। খুলনার ক্ষেত্রে কেন্দ্রের সমন্বয়, তদারকিকে প্রাধান্য দেয়া এবং গাজীপুরের ক্ষেত্রে স্থানীয় নেতাদের কর্মকৌশল প্রণয়ন ও ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসকে গুরুত্ব দিয়ে নির্বাচনী যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার পরিকল্পনা করেছে দলটি। সে লক্ষ্যে নানা কৌশল নিয়ে এগোচ্ছেন নীতিনির্ধারকরা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা বাস্তবায়নের কাজও শুরু হয়েছে। অন্যদিকে দুই সিটিতে কেন্দ্রীয় প্রভাব থাকার বিষয়টি চূড়ান্ত করেছে বিএনপি। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে গাজীপুর ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে খুলনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে সমন্বয় কমিটি গঠন করবেন।
গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আগামী ১৫ মে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ আগামী ২৩ এপ্রিল। প্রত্যাহারের পরের দিন প্রতীক বরাদ্দ করা হবে। প্রতীক পাওয়ার পরই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারে নামবে দুই দল।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, দল যোগ্য প্রার্থীদের মনোনীত করেছে। প্রার্থীদের বিজয়ী করতে ইতিমধ্যে বিভিন্ন ধরনের কৌশল ও পরিকল্পনা এবং সে অনুযায়ী কাজও শুরু হয়েছে।
যেখানে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ দরকার সেখানে কেন্দ্র হস্তক্ষেপ করবে, আর যেখানে স্থানীয় নেতারা মাঠে নামলে ভালো কাজ হবে, সেখানে সেভাবেই নির্বাচনী কর্মকাণ্ড চলবে। তবে দুই সিটিতে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে ব্যাপকভাবে প্রচারণা চালানো হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
শাসক দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামের এ নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ এ দুই সিটির নির্বাচনকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। আশা করি এই দুই শহরের মানুষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন দর্শন, জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনে তার নিরলস প্রচেষ্টা এবং দেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ করে সত্যিকারের সোনার বাংলা গড়ে তোলার লড়াইয়ে তার পাশে থাকবেন। শেখ হাসিনা মনোনীত প্রার্থীদের বিজয়ী করে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখবেন।
জানতে চাইলে গাজীপুরের দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দুই সিটির নির্বাচন নানা কারণেই বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের জন্য এটা একটা অগ্নিপরীক্ষা। এ নির্বাচনের মধ্য দিয়েই তাদের মনোভাব অনেকটা স্পষ্ট হবে। আমরাও এই নির্বাচনকে নানা কারণে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি।
তিনি বলেন, আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনী মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছি। জেলা ও মহানগর নেতাদের নিয়ে প্রস্তুতি কমিটি করার ব্যাপারে আলোচনা চলছে। প্রতীক পাওয়ার আগেই সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে চাই। যাতে প্রতীক পেয়েই ভোটারদের কাছে ছুটে যেতে পারি।
বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে অতীতের চেয়ে আরও বেশি ভোট পেয়ে ধানের শীষ জয়লাভ করবে। কারণ সরকারের নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে রায় দিতে জনগণ মুখিয়ে আছে।
খুলনায় কেন্দ্রের প্রাধান্য, গাজীপুরে স্থানীয় নেতৃত্বকে গুরুত্ব দিচ্ছে আ’লীগ : আসন্ন খুলনা ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিজয়ের জন্য দুই সিটিতে দুই ধরনের কৌশল নিয়ে মাঠে নামতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। খুলনার ক্ষেত্রে কেন্দ্রের সমন্বয়, তদারকিকে প্রাধান্য দেয়া এবং গাজীপুরের ক্ষেত্রে স্থানীয় নেতাদের কর্মকৌশল প্রণয়ন ও ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসকে গুরুত্ব দিয়ে নির্বাচনী যুদ্ধে অবতীর্ণ হবে দলটি। সে লক্ষ্যে কৌশল ও পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ শেষের দিকে।
খুলনায় ইতিমধ্যে অনানুষ্ঠানিকভাবে দুই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, আবদুর রহমান, খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য মন্নুজান সুফিয়ান, এসএম কামাল হোসেন প্রমুখকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা কৌশল ও পরিকল্পনা প্রণয়নের পাশাপাশি সেগুলো বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছেন। এসএম কামাল হোসেন গত ১১ তারিখ থেকেই স্থানীয়ভাবে নির্বাচনী বিভিন্ন কর্মকাণ্ড সমন্বয় করতে খুলনায় অবস্থান করছেন। সেখানে সোমবার সিটি কর্পোরেশনের প্রতিটি থানায় প্রতিনিধি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামীকাল জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বর্ধিত সভা। মন্ত্রী-এমপিদের নির্বাচনী এলাকায় যাওয়ার আইনগত বাধা থাকায় সিটি কর্পোরেশন এলাকার বাইরে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের স্থানীয় শাখাগুলোও প্রতিনিধি সভা করতে শুরু করেছে। জায়গায় জায়গায় চলছে কর্মী সভা। এছাড়া স্থানীয় পেশাজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন খুলনা সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রীয় নেতা এবং স্থানীয় শীর্ষ নেতারা।
দলীয় সূত্র জানায়, প্রচার শুরু হওয়ার পর খুলনার আওয়ামী লীগ প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক একটি নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করবেন। প্রচারের ক্ষেত্রেও কিছু ভিন্নতা আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। ব্যানার-পোস্টার-মিছিল-স্লোগানের পাশাপাশি চলবে ডিজিটাল প্রচারণাও। আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবি, খুলনায় তাদের প্রার্থী অনেক শক্তিশালী। তিনি একাধারে সৎ, যোগ্য, স্বচ্ছ এবং কর্মবীর। অতীতে তিনি মেয়র এবং প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে এর প্রমাণ দিয়েছেন। যে পাঁচ বছর তিনি মেয়র ছিলেন, সে সময় তিনি এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন কিন্তু গত পাঁচ বছরে তার ধারাবাহিকতা রক্ষিত হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার খুলনার উন্নয়নকে গুরুত্ব দিচ্ছে। কেননা অনেক আগে থেকেই এটি শিল্প এলাকা। এখানে বিশ্বের বৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। সব মিলিয়ে একটি অর্থনৈতিক ও পর্যটন হাব হয়ে ওঠার সব সম্ভাবনা রয়েছে। যার কেন্দ্রস্থল হবে খুলনা মহানগরী আর সে কারণেই এটিকে গড়ে তুলতে হবে বিশ্বের উন্নয়ন শহরগুলোর মান অনুযায়ী। আর তা পূরণের সামর্থ্য রয়েছে একমাত্র তালুকদার আবদুল খালেকেরই আছে বলে মনে করছেন শাসক দলের নেতারা। সে কারণে প্রার্থীর যোগ্যতা, সততা, স্বচ্ছতাকে প্রধান্য দিয়ে এখানে প্রচারণা চালানো হবে। প্রার্থীকে জেতাতে আশপাশের জেলার নেতাকর্মীদেরও কাজে লাগানোর কথা ভাবছে দলটি। আওয়ামী লীগের খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন যুগান্তরকে বলেন, তাদের দলের প্রার্থীকে জেতাতে সাংগঠনিক তৎপরতা শুরু হয়েছে। নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে যারা যেতে পারবেন তারা সেখানে গিয়ে প্রচার চালাবেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী যোগ্য, স্বচ্ছ এবং কর্মবীর। এই অঞ্চলকে পর্যটন ও অর্থনৈতিকভাবে আন্তর্জাতিক মানে নেয়ার যোগ্যতা একমাত্র তার দলের প্রার্থীরই আছে। দলও এ নির্বাচনকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। আশা করি খুলনার মানুষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখতে, দেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলার স্বপ্নের সারথি হতে তালুকদার খালেককেই নির্বাচিত করবেন।
এদিকে গাজীপুরের ক্ষেত্রে একটু ভিন্ন কৌশলে এগোচ্ছে শাসক দল। কেন্দ্রের চাওয়া অনুযায়ী এখানকার জেলা ও মহানগর নেতারা নিজেদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা এবং কর্মপন্থা নির্ধারণে কাজ করছেন। ইতিমধ্যে ঢাকার কাছে এই মহানগরের নেতারা নিজেদের মধ্যে চার দফা বৈঠক করেছেন। তারা নিজেদের মধ্যে আরও আলোচনা করে প্রচারণা এবং নির্বাচনে সমন্বয়ের ক্ষেত্রে করণীয় চূড়ান্ত করার পর কেন্দ্র থেকে যে ধরনের সাহায্য চাইবেন তাই করা হবে। আর নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হওয়ার পর প্রয়োজনে কেন্দ্র থেকে সমন্বয় ও তদারক করা হবে। তবে এখানকার প্রার্থী ও জেলা-মহানগর নেতারা সার্বক্ষণিকভাবে বিভাগীয় যুগ্ম ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। কেন্দ্র থেকেও প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, গাজীপুরের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের সক্ষমতাকে গুরুত্ব দিয়ে এখানে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড চলবে। আর স্থানীয় নেতাদের যে কর্মপন্থা প্রণীত হবে তা হবে প্রার্থীর নেতৃত্বেই। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল যুগান্তরকে বলেন, গাজীপুরে স্থানীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ কর্মপন্থাকে গুরুত্ব দেয়া হবে। এখানকার প্রার্থী জনপ্রিয়। তাকে নিয়ে তরুণদের মধ্যে উন্মাদনাও আছে। আর দেশব্যাপী আওয়ামী লীগ যে উন্নয়ন করেছে, তার ধারাবাহিকতা গাজীপুরেও রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই শহরটিকে আধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হিসেবে গড়ে তোলার জন্যই সিটি কর্পোরেশন করেছেন। আশা করি এখানকার জনগণ আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে ভোট দেবে, নৌকা বিজয়ী হবে।
মাঠে নামার অপেক্ষায় বিএনপি : নির্বাচনী মাঠে নামতে প্রাথমিক প্রস্তুতি শেষ করে এনেছে বিএনপি। প্রতিটি ভোটারের দ্বারে দ্বারে পৌঁছতে নেয়া হচ্ছে নানা পরিকল্পনা। এ লক্ষ্যে গঠন করা হচ্ছে কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি। গাজীপুরে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও খুলনায় স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে কেন্দ্রীয় সমন্বয়কের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। শিগগিরই কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে তাদের নেতৃত্বে গঠন করা হবে পূর্ণাঙ্গ সমন্বয় কমিটি। কেন্দ্রীয় এ সমন্বয় কমিটি প্রতিটি ওয়ার্ডে গঠন করবে একটি করে প্রচার কমিটি। কেন্দ্রীয় একজন নেতাকে এর দায়িত্ব দেয়া হবে। তিনি স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে গণসংযোগ চালাবেন। সূত্র জানায়, দুই সিটির প্রতিটি থানায় একটি করে নির্বাচনী ক্যাম্প খোলা হবে। উল্লিখিত এলাকায় পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন, হ্যান্ডবিলসহ সার্বিক লজিস্টিক সহায়তা এসব ক্যাম্প থেকে সরবরাহ করা হবে। এসব ক্যাম্পের দায়িত্বেও থাকবেন কেন্দ্রীয় নেতারা। কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন আলাদাভাবে কমিটি করে দুই সিটিতে গণসংযোগ চালাবে।
দুই সিটির নেতাদের মধ্যে কোনো মনোমালিন্য থাকলে তা দূর করবে কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি। ইতিমধ্যে তারা মনোনয়নবঞ্চিতদের সঙ্গে কথাও বলেছেন। সমন্বয় কমিটি গঠনের পাশাপাশি কেন্দ্রীয়ভাবে একটি মনিটরিং সেল গঠন করা হবে। দুই সিটির গণসংযোগসহ সার্বিক বিষয়ে খোঁজখবর রাখবে এ কমিটি। স্থানীয়ভাবে যে কোনো সমস্যা সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রীয় মনিটরিং টিমকে জানানোর নির্দেশ দেয়া হবে। কোথাও কোনো সমস্যা থাকলে কেন্দ্রীয় সিনিয়র নেতারা বসে তাৎক্ষণিকভাবে তার সমাধান করবেন।
সূত্র জানায়, দলীয় প্রস্তুতির পাশাপাশি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনকেও নানামুখী চাপে রাখবে দলটি। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে বা দলীয় প্রার্থীদের প্রচারে বাধা দিলে তা তাৎক্ষণিকভাবে ইসিকে জানানো হবে। এজন্য কেন্দ্রীয় একটি টিম সার্বক্ষণিক নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে। নির্বাচনী প্রচার বা সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্তরায়গুলো ইসিকে ‘টাইম টু টাইম’ অবহিত করবে ওই কমিটি। সুষ্ঠু নির্বাচনে ইসির করণীয় ও দলীয় বেশ কিছু অভিযোগ লিখিত আকারে ইসিকে অবহিত করতে আজ সাত সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল সিইসির সঙ্গে দেখা করবে। স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে থাকবেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ।
এছাড়া ভোটারদের কাছে টানতে বিএনপি নিয়েছে নানা উদ্যোগ। এক্ষেত্রে মহিলা ও নতুন ভোটারদের মন জয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। মহিলা ভোটারদের কাছে টানতে কেন্দ্রীয় মহিলা দলের সমন্বয়ে একাধিক টিম করার পরিকল্পনা রয়েছে। দুই সিটির প্রচারে থাকছে ডিজিটালের ছোঁয়া। ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দুই সিটির জন্য নতুন পেজ খোলা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা কে, কোথায়, কখন গণসংযোগ করবেন তা আগাম এ পেজে পাওয়া যাবে। এছাড়া গণসংযোগের যাবতীয় তথ্য সঙ্গে সঙ্গে এ পেজে আপলোড করা হবে। তরুণ প্রজন্ম বিশেষ করে যারা তথ্যপ্রযুক্তিতে এগিয়ে তাদের সমর্থন পেতে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সহায়তা নেয়া হচ্ছে।
সূত্র জানায়, কেন্দ্রের পাশাপাশি স্থানীয় নেতারাও ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নামার সার্বিক প্রস্তুতি নিচ্ছে। দুই সিটিতে জেলা ও মহানগরের শীর্ষ নেতারা গণসংযোগের কৌশল চূড়ান্তে দফায় দফায় বৈঠক করছেন। গত কয়েকদিনে গাজীপুর জেলা ও মহানগর নেতাদের নিয়ে একাধিক বৈঠক করেন মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও খুলনা সিটির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক গয়েশ্বর চন্দ্র রায় যুগান্তরকে বলেন, আমরা এলাকার সাধারণ মানুষ ও দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলছি। তারা আমাদের জানিয়েছেন, পরিবেশ পেলে তারা ধানের শীষে ভোট দেবে। আমরা মনে করি, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে দুই সিটিতে বিপুল ভোটের ব্যবধানে আমাদের প্রার্থী বিজয়ী হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। তাই সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়েই আমাদের যত উদ্বেগ।
তিনি বলেন, এলাকার মানুষের মনে সাহস জোগাতে আমরা কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে কমিটি করে দায়িত্ব ভাগ করে দেব। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে শিগগিরই বসব। একটি খসড়া তালিকা করে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে দেয়া হবে। তিনি অনুমোদন দিলেই চূড়ান্ত করা হবে সমন্বয় কমিটি। দায়িত্বপ্রাপ্ত এ নেতাদের বাইরেও প্রয়োজন হলে বা কোনো কেন্দ্রীয় নেতা নিজে থেকে সেখানে যেতে চাইলেও দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে যেতে পারবেন।যুগান্তর