ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোট: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোর-১ (শার্শা) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী তিন নেতাই সরব রয়েছেন মাঠে। পর্যবেক্ষকদের মতে, তাদের মধ্যে বর্তমান সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিনের অবস্থান সবচেয়ে সুবিধাজনক। তবে তিন প্রার্থীর মধ্যেই রয়েছে নীরব দ্বন্দ্ব-বিরোধ। আওয়ামী লীগের তুলনায় বিএনপিতে মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা অনেক বেশি। তবে সেখানে সবার নজর দলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা মফিকুল হাসান তৃপ্তির দিকে। তা ছাড়া ঐক্যের স্বার্থে এ আসন শেষমেশ জামায়াতে ইসলামীকে ছেড়ে দিতে হয় কি-না, তা নিয়েও দলটিতে রয়েছে বাড়তি উত্তেজনা।
সীমান্ত উপজেলা শার্শার ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত যশোর-১ আসনে ভোটার দুই লাখ ৫৩ হাজার ৪৮১ জন। দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোলের অবস্থান এই সংসদীয় আসনে এবং এখান থেকে প্রতি বছর কয়েক হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় হয়। এসব কারণে সরকার ও ব্যবসায়ী গোষ্ঠী উভয়ের কাছেই এ আসনের গুরুত্ব অনেক। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে ১০টি সংসদ নির্বাচনের মধ্যে এ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী পাঁচবার, বিএনপি তিনবার এবং জাতীয় পার্টি ও জামায়াত একবার করে বিজয়ী হয়।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত সাংসদ শেখ আফিল উদ্দিনের অনুসারী নেতাকর্মীরা জানাচ্ছেন, এর আগে ২০০৮ সালে ২০ দলীয় জোট প্রার্থী জামায়াত নেতা মাওলানা আজিজুর রহমানকে তিনি পরাজিত করেন। এর ওপর দুই মেয়াদে সাংসদ থাকায় আফিল উদ্দিন এলাকায় যে উন্নয়ন করেছেন, অতীতে তার সিকি ভাগ কাজও হয়নি। সব নির্বাচনী অঙ্গীকারই বাস্তবায়ন করেছেন তিনি। সাংসদ হওয়ার পর তিনি শার্শায় দুটি শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। ফলে এলাকার আট হাজার মানুষের সরাসরি কর্মসংস্থান হয়েছে, তাদের মধ্যে সাত হাজার কর্মজীবীই নারী। শিক্ষার মানোন্নয়ন ও অবকাঠামো নির্মাণেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।
এ প্রসঙ্গে সাংসদ শেখ আফিল উদ্দিন বলেন, তিনি নিজে থেকে কখনোই মনোনয়ন চাননি। জাতির পিতার আদর্শ এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী শার্শার মানুষের কল্যাণ ও উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। সততা নিয়ে দলীয় কোন্দলের ঊর্ধ্বে থেকে কাজ করছেন বলে স্থানীয় নেতারাই তার জন্য নেত্রীর কাছে মনোনয়ন চান। এবারও তিনি ব্যক্তিগতভাবে মনোনয়ন চাইবেন না। তবে নেত্রী ও দল মনে করলে তিনি নৌকার প্রার্থী হবেন।
এদিকে, যুবলীগ নেতা ও বেনাপোল পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম লিটনও এ আসনে নৌকার মনোনয়ন পেতে চাইছেন। তবে পৌরসভা নির্বাচনের সময় হরিহর আত্মা হলেও বর্তমানে এমপি ও মেয়রের সম্পর্কে চিড় ধরেছে। মেয়র লিটনও জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে সাংগঠনিকভাবে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। তার অনুসারীদের মতে, দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বর্তমান এমপির দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে এবং এ সুযোগে লিটন সামনে চলে এসেছেন।
এ প্রসঙ্গে বেনাপোল পৌর মেয়র ও যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফুল আলম লিটন বলেন, তার সময়ে পৌরসভার মাধ্যমে বেনাপোলে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। পৌরসভাসহ ১১টি ইউনিয়নেও তিনি সাংগঠনিকভাবে এগিয়ে আছেন। তিনি বলেন, নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বিরুদ্ধে ইউপি নির্বাচনে প্রার্থী দাঁড় করিয়ে দিয়ে যারা দলের কাছে চিহ্নিত হয়ে গেছেন, তাদের আর জনগণ চায় না। এলাকার মানুষ তাকেই এমপি হিসেবে দেখতে চায়। মনোনয়ন পেয়ে বিজয়ী হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী এ নেতা।
পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মাবুদও নৌকা নিয়ে নির্বাচন করতে আগ্রহী। পর্যবেক্ষকদের মতে, আফিল ও লিটনের বিরোধের মধ্য দিয়ে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করা ও মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি। এ ব্যাপারে আবদুল মাবুদ বলেন, তিনি মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন। এসব বিবেচনায় দলের সভানেত্রী মনোনয়ন দিলে এবং শার্শা উপজেলার মানুষ চাইলে তিনি প্রার্থী হবেন।
অন্যদিকে, বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেতে তৎপর হাফ ডজন নেতা। অতীতে শার্শায় উন্নয়নমূলক কাজ করা এবং অনেকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করায় এখানে দলটির নেতা মফিকুল হাসান তৃপ্তির আলাদা একটি ইমেজ রয়েছে। ওয়ান-ইলেভেনের পর বহিস্কৃত এই নেতার বহিস্কারাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও প্রত্যাহার করা হয়নি। তবে দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরা দিতে যাওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন কার্যক্রমেই তার সক্রিয় উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। এলাকায়ও তার সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে।
নির্বাচন প্রসঙ্গে মফিকুল হাসান তৃপ্তি বলেন, তিনি ‘শহীদ জিয়ার জাতীয়তাবাদী আদর্শের সৈনিক’ হিসেবে সব সময় রাজপথে রয়েছেন; এলাকার মানুষের পাশেও আছেন। কেন্দ্রীয়ভাবে সব কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন। ‘বৈরী পরিস্থিতির’ মধ্যেও সংগঠনের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী এ নেতা।
এ ছাড়া বিএনপি থেকে মনোনয়ন পাওয়ার আশা করছেন শার্শা উপজেলা বিএনপির সভাপতি খাইরুজ্জামান মধু, সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসান জহির, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সহসাধারণ সম্পাদক মহসিন কবির, যশোর নগর বিএনপি সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র মারুফুল ইসলাম এবং যুবদলের কেন্দ্রীয় সদস্য ও শার্শা উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি নুরুজ্জামান লিটন। তারা প্রত্যেকেই সমকালকে জানান, জোট সরকারের পতন ঘটার পর থেকে তারা নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে দলকে ধরে রেখেছেন। ওয়ান-ইলেভেনের পর দলের দুঃসময়েও তারা নেতাকর্মীদের পাশে ছিলেন। জনগণের সঙ্গেও যোগাযোগ রয়েছে তাদের। দলের হাইকমান্ড এসব বিষয় বিবেচনা করে ধানের শীষ প্রতীক যোগ্য ব্যক্তির হাতে তুলে দেবে বলে মনে করেন তারা।
২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি এ আসন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কমিটির শূরা সদস্য ও জেলা জামায়াতের সাবেক আমির মাওলানা আজিজুর রহমানকে ছেড়ে দিয়েছিল। এবারও এ রকম হয় কি-না, তা নিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে রয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। জোটগত নির্বাচন হলেও দলীয় প্রার্থীর মনোনয়ন নিশ্চিত করার পক্ষে তারা। তবে মাওলানা আজিজুর রহমান জানান, এ আসনে অন্তত ৬৫ ভাগ ভোটার জামায়াত-বিএনপির সমর্থক। এবারও জোট তাকে মনোনয়ন দেবে।
এদিকে, শার্শায় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিকদের তেমন তৎপরতা না থাকলেও জাতীয় পার্টির উপজেলা সভাপতি আক্তারুজ্জামান দলীয় প্রার্থী হতে পারেন। সমকালকে তিনি বলেন, কেন্দ্রের নির্দেশে তিনি এলাকায় কাজ করছেন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন নিয়ে অংশগ্রহণ করব। সমকাল