নিরাপত্তা পরিষদের বিতর্কে রোহিঙ্গা আইনজীবী মিয়ানমার সেনাদের আন্তর্জাতিক আদালতে তুলতে হবে

ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোট:রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণ, যৌন নিপীড়নসহ জঘন্য অপরাধের জন্য মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) বিচারের মুখোমুখি করতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন এক রোহিঙ্গা আইনজীবী।

সোমবার নির্যাতিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি হিসেবে আইনজীবী রাজিয়া সুলতানা নিরাপত্তা পরিষদের এক বিতর্কে এমন আর্জি জানান।

তিনি জাতিসংঘের প্রতি অভিযোগ তুলে বলেন, রোহিঙ্গা নারীদের সুরক্ষা দিতে নিরাপত্তা পরিষদ ব্যর্থ হয়েছে। সোমবার সংস্থাটির ওয়েবসাইটে এক বিবৃতিতে এ খবর দিয়েছে জাতিসংঘ।

২০১৪ সাল থেকে বাংলাদেশে অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে নারী ও শিশুদের ওপর কাজ করছেন রাজিয়া। নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গ সমতা ও ন্যায়বিচার পাওয়ার মাধ্যমে সংঘাতময় পরিস্থিতিতে যৌন সহিংসতা প্রতিরোধের ওপর সোমবার নিউইয়র্কে নিরাপত্তা পরিষদে উন্মুক্ত বির্তক অনুষ্ঠিত হয়। রাজিয়া বলেন, ‘কেবল রোহিঙ্গা হওয়ার কারণেই মিয়ানমার সেনাবাহিনী আমাদের নারী-শিশুদের ওপর গণধর্ষণ, নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। নিজ বাড়িতেই এসব রোহিঙ্গা নারী-শিশুরা ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ছয় বছরের শিশুও তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। অনেককে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে।’

নিজ গবেষণা ও সাক্ষাৎকারে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তিনি বলেন, ‘গত আগস্ট থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা অধ্যুষিত ৩৫০টি গ্রাম আক্রমণ করে পুড়িয়ে দিয়েছে।

এর মধ্যে ১৭টি গ্রামে তিন শতাধিক রোহিঙ্গা নারী ধর্ষণের প্রমাণ পাওয়া গেছে। যৌন সহিংসতায় শতাধিক সৈন্য অংশ নিয়েছে।

রাখাইনের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে এই সহিংসতা চলেছে। ধর্ষণের পর রোহিঙ্গা নারীদের ওপর যেভাবে নির্যাতন চালানো হয়েছে তাতে শুধু ভীতি সঞ্চারই নয়, বরং তাদের গর্ভধারণের ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।’ জাতিসংঘের ওপর ক্ষোভ ঝেড়ে রাজিয়া বলেন, ‘নিরাপত্তা পরিষদ রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এটা স্পষ্ট যে ২০১২ সালের সংকটকে আমলে নেয়া হয়নি।’

জাতিসংঘের ডেপুটি সহকারী জেনারেল আমিনা মোহাম্মদ ও সংঘাতপূর্ণ এলাকায় যৌন সহিংসতাবিষয়ক মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধি প্রমিলা প্যাটেনের সঞ্চালনায় উন্মুক্ত এ বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আগামী সপ্তাহে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সফরে আসার কথা রয়েছে। রোহিঙ্গাদের দুর্দশা দেখতে আসার আগে জাতিসংঘে এমন বিতর্ক হল। রাজিয়া সুলতানা নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের রোহিঙ্গাদের মুখে তাদের নিপীড়নের বর্ণনা শোনার আহ্বান জানান।

বাংলাদেশে শরণার্থী ক্যাম্পগুলোর পরিস্থিতি বর্ণনা করে রোহিঙ্গা এ আইনজীবী বলেন, রোহিঙ্গা তরুণী-যুবতীদের হয় অপহরণ, না-হয় চাকরি বা বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অনেকেই ক্যাম্পে নিজেদের ভবিষ্যৎ দেখতে না পেয়ে এ সব প্রলোভনে পা দিচ্ছে, কিন্তু আর ফিরে আসছে না।

জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত প্রমিলা প্যাটেন বলেন, মহাসচিবের নতুন প্রতিবেদনে মিয়ানমারসহ অন্যান্য দেশে যৌন সহিংসতাকে যুদ্ধের কৌশল ও রাজনৈতিক দমন-পীড়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার চিত্র ফুটে উঠেছে। সংঘাতকালীন ধর্ষণ বন্ধে অপরাধীদের জরুরিভিত্তিতে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। যৌন সহিংসতার শিকার নারীদের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে একটি বিশেষ তহবিল গঠনের আহ্বান জানান জাতিসংঘের বিশেষ দূত।

জি-সেভেন সম্মেলনের আলোচ্যসূচিতে রোহিঙ্গা ইস্যু : আসন্ন জি-সেভেন দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যু আলোচ্যসূচিতে নিয়ে আসতে যাচ্ছে কানাডা। সম্মেলনের প্রধান আয়োজক পিটার বোয়েহম বলেন, বিষয়টি সিরিয়া, ইউক্রেন ও ইরানের মতো জি-সেভেনের ‘দীর্ঘমেয়াদি’ আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ইস্যুগুলোর সঙ্গে যোগ করা হচ্ছে।

মঙ্গলবার কানাডার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম সিবিসি এ খবর জানিয়েছে। জি-সেভেনের এবারের সম্মেলনে রোহিঙ্গা ইসু্যুটির বিশেষ প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে। কারণ সম্মেলনটির এবারের মূল ভাবনা হল লৈঙ্গিক উন্নয়ন।

টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মেলন সংক্রান্ত সাম্প্র্রতিক এক অনুষ্ঠানে ফ্রিল্যান্ড বলেন, লৈঙ্গিক পরিপ্রেক্ষিতকে আমরা যা করি ও যে বিষয়ে কথা বলি তার সবকিছুর একটি প্রধান অংশ হিসেবে নেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

আগামী ২৬-২৭ এপ্রিল অনুষ্ঠিতব্য জি-সেভেন সম্মেলনে কানাডা ছাড়াও ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, ইতালি, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা অংশ নেবেন।

Check Also

হামাসের সঙ্গে সংঘর্ষে ৩৫ ইসরাইলি সেনা নিহত, আহত শতাধিক

গাজার উত্তরে জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে দীর্ঘদিন ধরে অভিযান চালাচ্ছে দখলদার ইসরাইলি বাহিনী। সম্প্রতি সেখানে হামাস …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।