আবু সাইদ বিশ্বাসঃসাতক্ষীরা: গুনে ও মানে ভরা সাতক্ষীরার কাঁচা আম এখন বাজারে। প্রতি দিন সাতক্ষীরা বড় বাজারের শত শত মন আম বেচা কেনা হচ্ছে। পাইকারী ব্যবসায়ীরা এখন সাতক্ষীরার বাজারে। অন্য বছরের তুলনায় এবার কাঁচা আমের দাম দ্বিগুণ। প্রতিমণ আম এক হাজার টাকা থেকে শুরু করে ২৪শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এতে আম চাষীদের মুখে হাসি ফুটেছে। আমের কদর বাড়ায় এখানকার আম রপ্তানি হচ্ছে রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায়। প্রতি কেজি কাঁচা আম বিক্রি করে পাচ্ছে কমপক্ষে ৪০-৬০ টাকায়। আমের সাইজ বড় ও দেখতে সুন্দর হলে কেজি ৮০ টাকার উপরে। পাইকারি আম ব্যবসায়ীরা গ্রামের আম চাষীদের কাছ থেকে কম দামে সংগ্রহ করে ট্রাক ভর্র্তি করে নিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। কাঁচা আম রপ্তানি করে আয় করছে লক্ষ লক্ষ টাকা।
প্রতিদিন সাতক্ষীরা থেকে ৩-৪ ট্রাক কাঁচা আম যাচ্ছে রাজধানী সহ বিভিন্ন জেলাতে। যার বাজার দর ২ থেকে ৩ লাখ টাকার মতো। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে জেলায় আমের বাম্পার ফলন হবে বলে আশা আম চাষীদের। আগামি ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে পাকা আম বাজারে উঠতে শুরু করবে।
সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি মৌসুমে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়েও জেলা থেকে প্রায় ১০০০ মেট্রিক টন আম বিদেশে রফতানি হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। গত বছর যার পরিমাণ ছিল ৭০০ মেট্রিক টন ।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরায় সাতটি উপজেলায় চলতি বছর চার হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ১১৯৫ হেক্টর জমিতে, কলারোয়া উপজেলায় ৬০২ হেক্টর, তালা উপজেলায় ৭০৫ হেক্টর, দেবহাটা উপজেলায় ৩৬৮ হেক্টর কালিগঞ্জ উপজেলায় ৮০৫ হেক্টর, আশাশুনি উপজেলায় ১২৫ হেক্টর ও শ্যামনগর উপজেলায়ং ১৫০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হচ্ছে।
এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদরে আমের বাগন রয়েছে ১৫৩০টি, কলারোয়ায় ১৩১০টি, তালায় ১৪৫০টি, দেবহাটায় ৪৭৫টি, কালিগঞ্জে ১৪২টি, আশাশুনিতে ১৯০টি ও শ্যামনগর উপজেলায় ১৫০টি আমের বাগান রয়েছে।
সাতক্ষীরার মাটি ও আবহাওয়া আম চাষের অনুকূল হওয়ায় অন্য অঞ্চলে উৎপাদিত আমের চেয়ে সাতক্ষীরার আম বাজারে উঠতে থাকে সবার আগে। সাতক্ষীরায় গোবিন্দভোগ, হিমসাগর, গোপালভোগ, বোম্বাই, গোলাপখাস, ক্ষিরসরাইসহ নানা জাতের আটির আম এখন বাজারে।
তাজুল ইসলাম। কাঁচা আমের পাইকারী ব্যবসায়ী। তিনি ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে আম কিনতে সাতক্ষীরা বড় বাজারের এসেছেন। বুধবারে তিনি ২০ ঝুড়ি ও মঙ্গলবারে ১২ ঝুড়ি আম কিনে ঢাকাতে পাঠিয়েছে। প্রতি ঝুড়িতে আম ধরে ১শ থেকে ১২০ কেজি। সেই হিসেবে গত দুদিনে তিনি সাতক্ষীরার বড় বাজার থেকে প্রায় একশ মণ কাচাঁ আম কিনেছেন। মুজাহেদ ঢাকার বাইফেল থেকে এসেছেন। তিনি ও বিপুল পরিমানে কাঁচা আম কিনে ঢাকাতে পাঠিয়েছেন।
তিন হাত বদলিয়ে সাতক্ষীরার আম যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। প্রথমে গ্রাম থেকে আম বাগান কেনেন এক শ্রেণীর গ্রাম্য ব্যবসায়ী। গ্রাম্য ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আম কেনেন পাইকারী ব্যবসায়ীরা । এর পর সেই আম বাজারের আড়ত খেকে ক্রয় করেন ঢাকার ব্যবসায়ীরা। এভাবে হাত বদলের সাথে সাথে দামের ও বদল হতে থাকে। এক জন আম চাষীর কাছ থেকে আম ক্রয় করে সেই আম চুড়ান্ত পর্যায়ে ভোক্তার কাছে পৌছাতে মুল্য বাড়ে তিন থেকে চার গুণ। সরকারী ভাবে চাষীদের কাছ থেকে সরাসরি আম ক্রয় করতে পারলে ভোক্তা ও চাষীরা উভয়ই লাভবান হত বলে সংশ্লিষ্টদের দাবী।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচারক কৃষিবিদ কাজী আব্দুল মান্নান জানান, সাতক্ষীরার আম গুণে-মানে সুস্বাদু। অন্যান্য জেলার থেকে সাতক্ষীরার আম আগে পাকে। এ জেলার মাটি আম চাষের উপযোগী। গত চার বছর ধরে এ জেলার আম ইউরোপে রফতানি হচ্ছে। এবারও বাগান পরিচর্যা করা হচ্ছে বিদেশে আম পাঠানোর জন্য।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন জানান,সাতক্ষীরার আম সারা দেশে সুখ্যাতি রয়েছে। সুনাম ক্ষুন্ন করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভোক্তার অধীকার ক্ষুণœ করে আম পাকাতে কেউ ফরমালিনের আশ্রয় নিলে সর্বোচ্ছ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। মোবাইলকোট বসিয়ে তাৎক্ষণিক সাজা কার্যকর করা হবে। সাথে থাকবে জরিমানার ব্যবস্থা।
Check Also
সন্ধ্যায় আবারো সড়ক অবরোধ তিতুমীর শিক্ষার্থীদের
রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রূপান্তরে কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত প্রকাশ না করায় আবারো সড়ক …