নাটোরে ফসলী জমিতে ইট ভাটা বন্ধের দাবী এলাকাবাসীর
নাটোর প্রতিনিধি
নাটোরের লালপুর উপজেলার লালপুর, আড়বাব ও বিলমাড়ীয়া ইউনিয়ের বিভিন্ন গ্রামে ফসলী জমিতে নতুন করে নির্মাণাধীন ইট ভাটা বন্ধ ও অনুমতি প্রদান না করার দাবিতে সংশ্লিষ্ট এলাকার শতাধিক কৃষক স্বাক্ষর করে বিভিন্ন দপ্তর ও কর্মকর্তার নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। পরিবেশ মন্ত্রী, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহা পরিচালক, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব, নাটোর-১ আসনের স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ, নাটোর জেলা প্রশাসক, রাজশাহী বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তর, লালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার, কৃষি অফিসার ও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের নিকট লিখিত এ অভিযোগ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অভিযোগকারীরা। অভিযোগকারীরা ও স্থানীয় কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার বিশম্ভরপুর, মমিনপুর, মোহরকয়া, রহিমপুর, অমৃতপাড়া, ঢুষপাড়া, পালপাড়া সহ আশে-পাশের গ্রামের শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ কৃষি নির্ভর। প্রতিটি পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস ধান, গম, আম, পাট ও শাক-সবজি। ইতিমধ্যে এ এলাকায় প্রায় ২৫ টির মত ইট ভাটা স্থাপন করা হয়েছে। যার অধিকাংশই পরিবেশ বান্ধব নয়। যার ফলে বিষাক্ত ধোয়া পরিবেশের ওপর বিরুপ প্রভাব ফেলছে। মাটির অত্যধিক চাহিদা থাকায় ফসলি জমি কেটে পুকুর করা হচ্ছে। ফলে বর্তমানে ফসলী জমি এ এলাকায় নেই বললেই চলে। পুকুর কেটে মাটি আনার সময় রাস্তা নষ্ট করা হচ্ছে। অতিরিক্ত ভাটা থাকায় ফসলের আবাদ খুব ভালো হয় না। তাই এ এলাকার কৃষকরা আম চাষের দিকে ঝুকে পড়ে। অথচ অপরিকল্পিতভাবে ভাটা তৈরি ও কালো ধোয়ার প্রভাবে আমে পচন রোগ দেখা দিয়েছে। প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করে বসে আছে। তারা ক্ষোভ নিয়ন্ত্রন করতে না পেরে বলেন, ভাটার কারনে ফসল হারিয়েছে এখন যদি আম হারায় কৃষকরা তবে কি ইট খেয়ে থাকবে নাকি এ এলাকার মানুষ। বিশিষ্ট আখচাষী নেতা সোলায়মান হোসেন জানান, আমাদের এখন ইট ভাটার নগরী। যত্রতত্র ভাটা তৈরির কারনে এ এলাকায় ফসলি জমি এখন খুবই কম। এর উপরে যদি আবারো নতুন করে ইট ভাটা তৈরি হয়, তবে এ এলাকার ফসলি জমি, আম সহ পরিবেশগত নানা সমস্যার সম্মুখীন হবে এ এলাকার মানুষ। বর্তমানে বিশ্বম্ভরপুর গ্রামে জনৈক সিরাজুল ইসলাম ইট ভাটা তৈরির চেষ্টা করছেন। আমরা এ এলাকার আমচাষী ও কৃষকরা বিভিন্ন দপ্তর ও কর্মকর্তাদের নিকট ফসলী জমিতে নতুন করে নির্মাণাধীন ইট ভাটা বন্ধ ও অনুমতি প্রদান না করার জন্য আবেদন করেছি। প্রশাসনের সৃদৃষ্টি ও হস্তক্ষেপ কামনা করছি। লালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নজরুল ইসলাম জানান, আমি ছুটিতে আছি। অভিযোগের কপি পেলে অবশ্যই পরিবেশ অধিদপ্তরের সাথে আলাপ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নাটোরে অন্যের জমিতে জোর করে স্কুল প্রতিষ্ঠার অভিযোগ
নাটোর প্রতিনিধি
নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার জোয়ারী ইউনিয়নের কেচুয়া কোড়া গ্রামে গ্রামের প্রভাবশালীরা অন্যের জমিতে জোর করে একটি কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে চলতি বছরের ১৬ এপ্রিল নতুন বই বিতরন করার অভিযোগ করেছেন ভুক্তভুগিরা। এব্যাপারে নাটোর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভুগিরা। তারা বলেছেন অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পায়নি ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকরা। এলাকাবাসী জানায়, কেচুয়া কোড়া গ্রামের জনৈক আব্দুর রহমান তার ছয় সন্তানের যেকোন একজনকে যোগ্যতা অনুযায়ী চাকুরী দেয়ার শর্তে গ্রামে একটি কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৯৪ সালে ৩৩শতক জমি দান করেন। আগামী ১০ বছরের মধ্যে স্কুল প্রতিষ্ঠা করা না গেলে এই দানপত্র বাতিল বলেও তিনি দানপত্রে উল্লেখ করেন। ১৯৯৫ সালে স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার সময় আব্দুর রহমানের কোন সন্তানকে স্কুলে চাকুরী না দেয়ায় তিনি আদালতে মামলা করায় স্কুল প্রতিষ্ঠার সব উদ্যোগ বন্ধ হয়ে যায়। সে সময় তৈরী করা টিনের স্কুল ঘরটি এখনো দাঁড়িয়ে থাকলেও নেই দরজা জানালা বেঞ্চসহ কোন আসবাবপত্র। পরে ২০০৮ সালে তার ছয় সন্তান বাবার মৃত্যুর পর জমি ভাগ বাটোয়ারা করার সময় এই জমিটি ছয় ভাইবোনের মধ্যে শরিফা খাতুনকে দেন। ২০১০ সালে শরিফা খাতুন টাকার প্রয়োজন হওয়ায় জমিটি তার অন্য ভাইবোনের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে ২০১১ সালে তার দুই চাচাতো ভাই কেনা জমিটি তাদের স্ত্রী আফরোজা বেগম ও রুমিয়া খাতুনকে এবং অপর ভাই প্রতিবেশী আব্দুর রহিমের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে সরকার দেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারী করলে আব্দুর রহমানের অপর ছেলে শাহাদত হোসেন তার নিজের মেয়ে শামীমা আক্তার সোমাকে প্রধান শিক্ষক এবং অন্য তিনজনকে প্রভাবশালীদের সহযোগীতায় টাকার বিনিময়ে এই জমিতে স্কুল প্রতিষ্ঠার চেষ্ঠা শুরু করেন। কাগজে কলমে ২০০৯ সালে নিয়োগ দেখানো হলেও পুরনো শীর্ণ ঘরটি ধোয়ামোছা করে চলতি বছরের ১৬ এপ্রিল ১০ সেট নতুন বই বিতরন করার মধ্য দিয়ে মূলত এই স্কুলের পাঠদান শুরু করা হয়েছে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভুগিরা। বড়াইগ্রাম উপজেলা শিক্ষা অফিসও ১০ সেট নতুন বই বিতরন করার কথা স্বীকার করেছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া শামীমা আক্তার সোমা সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বরাবরই তার স্কুলে পাঠদান চলছে, তার স্কুলে ৫০ থেকে ৬০জন ছাত্র-ছাত্রীও রয়েছে। জমির বিষয়ে তার বাবা শাহাদত হোসেন বলেছেন, জমিটি তার বাবা মরহুম আব্দুর রহমান দান করার সময় ১০ বছরের কোন শর্ত ছিল না। তবে তারা ছয় ভাই বোন জমি ভাগবাটোয়ারা করার সময় কিসের ভিত্তিতে জমিটি বোন শরিফা খাতুনকে দিয়েছিলেন তার কোন জবাব তিনি দেন নাই। বুধবার এসব বিষয়ে জানতে চাইলে এমন অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে নাটোর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এ. কে. এম আমিরুল ইসলাম বলেছেন, নতুন করে কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা বা অনুমোদনের কোন চিন্তাই সরকারের নেই, অথচ অহেতুক এসব করে কেন যে অশান্তি করা হচ্ছে তা তার বোধগম্য নয়।