চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি ২০ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে এবার পেটালেন এক কোচিং সেন্টারের মালিককে।চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি নগরীর জিইসি মোড় এলাকায় ইউনিএইড কোচিং সেন্টার মালিক রাশেদ মিয়াকে মারধর করেন তিনি।
এ সময় ওই কোচিং সেন্টার মালিক হাতজোর করে রেহাই চাইলেও তাকে ক্ষমা করেননি এই ছাত্রলীগ নেতা। কোচিং সেন্টার মালিককে মারধরের চাঞ্চল্যকর এই ভিডিও যুগান্তরের কাছে সংরক্ষিত আছে।
এরপর চলতি মাসের ১৩ তারিখ অপহরণ করে রনির অফিসে তুলে নিয়েও মারধর করা হয় রাশেদ মিয়াকে। এই হামলার কথা মামলার এজাহারে উল্লেখ রয়েছে। টাকা না দেয়ায় রাশেদের পাসপোর্টও নিয়ে যাওয়া হয়। চাঁদার দাবিতে চট্টগ্রাম বিজ্ঞান কলেজ অধ্যক্ষ জাহেদ খানকে মারধরের ভিডিও ভাইরাল হওয়া এবং এ ঘটনায় সমালোচনার ঝড় না থামতেই রনির আরও একটি অপকর্মের কাহিনি বের হলো।
এ অবস্থায় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সাধারণ নেতাকর্মীরা আফসোস করেই বলছেন, তারা কি একজন ‘সন্ত্রাসী’, ‘মাস্তানের’ হাতেই নগর ছাত্রলীগের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী সংগঠনের গুরুদায়িত্ব তুলে দিয়েছিলেন?
থানায় দাখিল করা অভিযোগ ও ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে যেন ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনির আরও ভয়ংকর চেহারা প্রকাশ পেয়েছে।
হামলার শিকার কোচিং সেন্টারের পরিচালক মো. রাশেদ মিয়া বৃহস্পতিবার পাঁচলাইশ থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগে নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনিকে এক নম্বর ও নোমান চৌধুরী রাকিব নামে অপর একজনকে ২ নম্বর আসামি করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পাঁচলাইশ থানার ওসি মহিউদ্দিন মাহমুদ বৃহস্পতিবার বিকালে যুগান্তরকে বলেন, ‘কোচিং সেন্টারের মালিকের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনা সত্য হলে তদন্তপূর্বক অভিযোগটি মামলায় রূপান্তর করা হবে। তবে বাদীকে আমরা পাচ্ছি না।’
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলেছে, হামলার ভিডিও ফুটেজ ও ঘটনা শতভাগ সত্য হলেও প্রাণভয়ে আছেন মামলার বাদী। এ কারণে তিনি কী করবেন বুঝতে পারছেন না। অভিযোগ দিয়েও নতুন বিপদের শঙ্কায় রয়েছেন তিনি।
থানায় দাখিল করা অভিযোগে যা রয়েছে: মামলার এজাহারে রাশেদ মিয়া বলেন, নগরীর জিইসির মোড় অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কোচিং সেন্টার- ইউনিএইডের মালিক তিনি। দীর্ঘ আট বছর ধরে কোচিং সেন্টারটি পরিচালনা করে আসছিলেন। বিভিন্ন সময় অনুষ্ঠানের নাম দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করতেন রনি।
একই সঙ্গে বিভিন্ন সময় তার কোচিং সেন্টারের একটি অফিসকক্ষও জোরপূর্বক ব্যবহার করতেন। এতে তার (রাশেদের) অসুবিধা হওয়ার কারণে ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে তিনি রনিকে অফিসটি ব্যবহার করতে নিষেধ করেন।
এরপর গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগ নেতা রনি ও নোমান চৌধুরী নামে অপর এক সন্ত্রাসী ইউনিএইড কোচিং সেন্টারে অবৈধভাবে প্রবেশ করে তাকে ১০ মিনিট ধরে মারধর করে।
এ সময় রনি কোচিং সেন্টারের মালিককে হুমকি দিয়ে বলেন- ‘এখানে (জিইসি মোড়ে) ব্যবসা করতে হলে তাকে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দিতে হবে। চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তাকে (রাশেদকে) মারধর করা হয়।
এ সময় ছাত্রলীগ নেতা রনি কোচিং সেন্টারের পরিচালককে হুমকি দিয়ে আরও বলেন- ‘আমি চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, আমি যেটা চাইব সেটা হবে। এখানে ব্যবসা করতে হলে আমাকে চাঁদা দিতে হবে। নতুবা তুমি ব্যবসা করতে পারবে না। এক মাসের মধ্যে ২০ লাখ টাকা না দিলে জানে মেরে ফেলব।’
অভিযোগে সর্বশেষ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলা হয়, গত ১৩ এপ্রিল কোচিং সেন্টারের মালিক তার সুগন্ধার বাসা থেকে বের হয়ে মুরাদপুর মোড়ের পূর্ব পাশে মোহাম্মদপুর মাজারের সামনে পৌঁছেন।
সেখানে আগে থেকে ওত পেতে থাকা রনি ও নোমান চৌধুরী তাকে (রাশেদকে) টানাহেঁচড়া শুরু করেন। তাকে ওখান থেকে তুলে নিয়ে মুরাদপুর এলমুনিয়ামগলির বুড়ি পুকুরপাড়ে রনির অফিসে নিয়ে যায়।
রনি কোচিং সেন্টার মালিককে আবারও বলেন, আমাকে ২০ লাখ টাকা দে। তাৎক্ষণিকভাবে এত টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তাকে হকিস্টিক দিয়ে মারধর করেন রনি ও তার সহযোগী নোমান।
মারধরের কারণে তার কান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মারধরে শ্রবণশক্তি নষ্ট হয়ে যায় রাশেদের।
অভিযোগে আরও বলা হয়, একপর্যায়ে রনি বলেন- ২০ লাখ টাকা দিলে তোকে জানে বাঁচিয়ে রাখব, না হয় তোকে মেরে ফেলব।
পরে কোচিং সেন্টারের মালিক কাকুতি-মিনতি করে রনিকে বলেন, ৪০ হাজার টাকা আছে- এগুলো দেব। বাকি টাকা পরে দেব। তাতে রাজি না হয়ে রনি বলেন যে, ‘তোর পাসপোর্ট দিবি। টাকা দিয়ে পাসপোর্ট ফেরত নিবি।
রাশেদ পাসপোর্ট দিতে রাজি হলে রনির নির্দেশে অপর আসামি নোমান ও অজ্ঞাত কয়েকজন সন্ত্রাসী তাকে (রাশেদকে) মোটরসাইকেলে করে সুগন্ধা আবাসিক এলাকায় তার (রাশেদের) বাসায় নিয়ে যায়।
বাসা থেকে ৩৫ হাজার টাকা ও তার পাসপোর্ট তাদের হাতে তুলে দেন রাশেদ। একই মোটরসাইকেলে চট্টগ্রাম কলেজের পশ্চিম পাশে নিয়ে তাকে নামিয়ে দেয়া হয়।
রাশেদ বলেন, এর পর তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। অভিযোগে রাশেদ আরও উল্লেখ করেন, রনি ও অন্য আসামিদের হুমকি-ধমকির কারণে বাসা থেকে বের হতে পারেননি তিনি। ফলে থানায় অভিযোগ দিতে দেরি হয়।