ইসলামী ব্যাংকের শীর্ষ পদে আরও পরিবর্তন আসছে: জামায়াত সংশ্লিষ্টতা পেলে ৩শ ম্যানেজারের বিরুদ্ভে ব্যবস্থা

ক্রাইমবার্তা রিপোট:   দেড় বছরের ব্যবধানে আবারও বড় পরিবর্তন হতে যাচ্ছে ইসলামী ব্যাংকে। ব্যাংকটির শীর্ষ পদে থাকা ডজনখানেক কর্মকর্তাকে অচিরেই সরে যেতে হবে। একইসঙ্গে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদমর্যাদা বা তার ওপরের শতাধিক কর্মকর্তার অনেককেই বিদায় নিতে হতে পারে। ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে ব্যাংকটির একজন পরিচালক নাম প্রকাশ না করে  বলেন, ইসলামী ব্যাংকের টপ ম্যানেজমেন্টে যারা রয়েছেন, তাদের বিষয়ে একটা সিদ্ধান্ত হয়েছে। সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। সেখানে টপ ম্যানেজমেন্টের অনেকের নাম রয়েছে। এছাড়া, ব্যাংকটির ভাইস প্রেসিডেন্ট পদমর্যাদার তিন শতাধিক কর্মকর্তার বিষয়ে নতুন করে তদন্ত করা হবে। একটি গোয়েন্দা সংস্থা তাদের বিষয়ে ভেরিফিকেশন (তদন্ত) করবে। এতে সরকারের বিরুদ্ধে কেউ ষড়যন্ত্রকারী আছে কিনা, সেটা খতিয়ে দেখা হবে। জামায়াত বা শিবিরের কোনও পদে কেউ দায়িত্ব পালন করেছেন কিনা সে ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া হবে। সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখা হবে। প্রত্যেকের রাজনৈতিক পরিচয় যাচাই বাছাই করা হবে।

ওই পরিচালক আরও বলেন, নতুন করে ভেরিফিকেশন হওয়ার খবরে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ইতোমধ্যে পদত্যাগ করেছেন। তবে অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ড চাপ সৃষ্টি করে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তাদের পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছে।

গত ৫ এপ্রিল ইসলামী ব্যাংকের (ম্যানেজমেন্ট) ব্যবস্থাপনা থেকে তিন ডিএমডিসহ শীর্ষ পাঁচ কর্মকর্তা বিদায় নেন। অপসারণ করা হয় অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) মো. শামসুজ্জামান, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া এফসিএ, ডিএমডি আবদুস সাদেক ভূঁইয়া, ডিএমডি মোহাম্মদ মোহন মিয়া ও সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট (এসইভিপি) আমিরুল ইসলামকে। তাদের মধ্যে এসইভিপি (সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট) ছাড়া বাকি সবার চুক্তির মেয়াদ ছিল এক বছরের।

অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, কয়েকজন কর্মকর্তা বোর্ডের সঙ্গে ভিন্নমতের কারণে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। মূলত মানসম্মান রক্ষার্থে ও জেলে যাওয়ার ভয়ে তারা স্বেচ্ছায় বিদায় নিয়েছেন। ব্যাংকটির অন্য কর্মকর্তাদের মধ্যেও ছাঁটাই আতঙ্ক কাজ করছে। বিশেষ করে ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে এই আতঙ্ক বেশি। এ কারণে ইসলামী ব্যাংকে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এই অস্থিরতার মধ্যে গত মঙ্গলবার (১৭ এপ্রিল) পদ ছাড়েন চেয়ারম্যান আরাস্তু খান। এছাড়া ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যানের পদ ছেড়েছেন সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম। তারা দুজনেই সরকারের সাবেক সচিব। নতুন চেয়ারম্যান হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাজমুল হাসান ও ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান হয়েছেন সামীম মোহাম্মদ আফজাল। এছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সেলিম উদ্দিন নতুন পরিচালক নির্বাচিত হয়েছেন। পরিচালনা পর্ষদের বেশ কিছু কমিটিতেও রদবদল হয়েছে। সেলিম উদ্দিন নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান হয়েছেন।

ব্যাংকটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন,  আরাস্তু খান হঠাৎ করেই পদত্যাগ করার পর নতুন করে অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছে। চাকরি হারানোর ভয়ে সবাই আতঙ্কে রয়েছেন। ঠিক কী কারণে চাকরি হারাতে হচ্ছে সেটিও তাদের কাছে অজানা।

এদিকে, ব্যাংকটি বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া নির্ধারিত সীমার চেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছে। এক সময় এই ব্যাংকটি দেশের বিপদে পড়া ১০ থেকে ১৫টি ব্যাংককে আর্থিকভাবে সহায়তা করতো, এখন সেই ইসলামী ব্যাংক নিজেই নগদ টাকার সংকটে পড়েছে। গ্রাহকরা ব্যাংকটি থেকে ঋণ পাচ্ছেন না। এমন অবস্থায় বেশ কিছু গ্রাহক ব্যাংকটি থেকে আমানত তুলে নিয়েছেন। সব মিলিয়ে ব্যাংকে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।

গত বছর ব্যাংকটির মালিকানায় বড় ধরনের পরিবর্তনের পর অস্থিরতা শুরু হয়। ইতোমধ্যে শীর্ষপর্যায়ের অনেক কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন। অনেকে বদলি হয়েছেন। আবার নতুন নিয়োগও দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ইসলামী ব্যাংকের আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৬ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিনিয়োগ (ঋণ) ৬৯ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকার। ব্যাংকটির ঋণ-আমানত অনুপাত দাঁড়িয়েছে ৯১ দশমিক ৪৯ শতাংশ, যা নির্ধারিত সীমার চেয়ে বেশি। তারা সীমার চেয়ে এক হাজার ১০৬ কোটি টাকা বেশি বিতরণ করেছে।

ইসলামী ব্যাংকের পরিবর্তন প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক দেবাশিস চক্রবর্ত্তী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যে কোনও ব্যাংক প্রয়োজন বোধ করলে তার অভ্যন্তরীণ পুনর্গঠন করতেই পারে। এছাড়া পদত্যাগ করার অধিকার সবার আছে।’

২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে অনুষ্ঠিত বোর্ড সভায় ইসলামী ব্যাংকের তৎকালীন চেয়ারম্যান মুস্তাফা আনোয়ারকে সরিয়ে পরিচালনা পর্ষদের প্রথম সভাতেই চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন সরকারের সাবেক সচিব আরাস্তু খান। তৎকালীন ভাইস চেয়ারম্যান আজিজুল হকও সেদিন পদত্যাগ করেছিলেন। এছাড়া একইদিন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আবদুল মান্নানকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।বাংলা ট্রিবিউন

Check Also

প্রত্যেকটা অফিসের কেরানি পর্যন্ত ফ্যাসিবাদের দোসর : আসিফ মাহমুদ

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।