প্রচন্ড গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রের্কড: আগামিকাল সাতক্ষীরায় তাপমাত্রা ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও বজ্রপাত হতে পারে

আবু সাইদ বিশ্বাসঃসাতক্ষীরা : প্রচন্ড গরমে সাতক্ষীরায় জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে বাতাসের আদ্রতা কমে যাওয়ায় ব্যাপসা গরমে মানুষ কাহিল হয়ে পড়ছে।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, শনিবার দিনে সাতক্ষীরায় সর্বোচ্চ ৩৪ দশমিক ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। সন্ধায় রের্কড করা হয় সর্বনিন্ম ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের দিন শুক্রুবার সাতক্ষীরায় দিনের বেলায় সর্বোচ্চ ৩৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। যেটি ছিল শুক্রুবারে রের্কড করা সারাদেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। ১৬ ও ১৭ মার্চ সাতক্ষীরায় ৩৯ দশমিক ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা । ৪ মার্চ ২৯ দশমিক ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা । যেটি ছিল চলতি মাসের সর্বনিন্ম তাপমাত্রা। আগামিকাল রবিবার ৩৯ দশমিক ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা সহ জেলার কয়েকটি জায়গায় বজ্রবিদ্যুৎ সহ ঝড় হতে পারে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। সাতক্ষীরায় চলতি মাসের গড় তাপমাত্রা ছিল ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত।
গতকাল খুলনায় ৩৫ দশমিক ৫, বরিশালে ৩৬ দশমিক ৫, চট্টগ্রামে ৩১ দশমিক ৬, রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ২৬ দশমিক ৮ ডিগি সেলসিয়াস। দিনাজপুরে ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ময়মনসিংহে ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, রংপুরে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, রাজশাহিতে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সিলেটে ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রের্কড করা হয়।
সাতক্ষীরায বাতাসে আদ্রতার পরিমাণ ছিল ৫১ শতাংশ। তাপমাত্রার পাশাপাশি বাতাসে আদ্রতা কমে যাওয়ায় ভ্যাপসা গরমে মানুষসহ প্রাণীক’ল কাহিল হয়ে পড়েছে। টানা এক সপ্তাহ যাবত তীব্র তাপদাহে সাতক্ষীরার জীবনযাত্রা বিষিয়ে উঠেছে। রোদের তীব্রতায় লোকজন ঘরের বাইরে বের হতেই ভয় পাচ্ছে। জরুরি প্রয়োজনের বাড়ীর বাইরে বের হলেও খুব দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন সবাই।
শিশু এবং বৃদ্ধদের নিয়ে রীতিমত বিপাকে পড়েছেন পরিবারের লোকজন। তীব্র তাপদাহ থেকে বাঁচতে লেবুর শরবত এবং খাবার স্যালাইন কেনার হিড়িক পড়েছে। এ অবস্থায় জনজীবনে নেমে এসেছে চরম অস্বস্থি। তাপদাহে ওষ্ঠাগত জনজীবন। ব্যাঘাত ঘটছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায়।
জমা ঘামের চাপে শরীরের ভেতরের তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে, বাড়ছে হার্টবিট। প্রচন্ড গরমে শ্বাস কষ্টে হসুস্থ হয়ে পড়ে শহরের আয়েনউদ্দীন মহিলা আলিম মাদ্রাসার নবম শ্রেণীর এক ছাত্রী। শ্রেনীতে কান্নাকাটা পড়ে যায়। পরে তাকে চিকিৎসা দেয়া হয়। এমন অবস্থা অরো অনেক প্রতিষ্ঠানে।
তীব্র গরমে শহরের অফিস-আদালত ও বাসাবাড়িতে বিদ্যুতের চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে বলে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়। তারা বলছে, বাসাবাড়ি ও অফিস আদালতের এয়ারকন্ডিশনগুলো এখন অফ করা হচ্ছে না। দিনরাত ২৪ ঘণ্টা এগুলো চালু থাকছে। এ কারণে ২-৩ দিন ধরে বিদ্যুৎতের অতিরিক্ত চাহিদা বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় অতিরিক্ত চাহিদা মেটাতে পিডিবিকে হিমশিম খেতে দেখা গেছে। তবে পিডিবি বলছে, পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ থাকলেও জরাজীর্ণ সঞ্চালন লাইনের কারণে তারা অতিরিক্ত চাহিদার বিদ্যুৎ দিতে পারছেন না। কোনো এলাকায় অতিরিক্ত বিদ্যুৎ দিতে গেলেই সঞ্চালন লাইন ও ট্রান্সফরমার ট্রিপ করছে।
তীব্র গরমের মধ্যে যোগ হয়েছে পানির সমস্যা। গত কয়েকদিন ধরে জেলারবিভিন্ন এলাকায় তীব্র পানির কষ্ট দেখা গেছে। যার কারণে মানুষের কষ্ট ও বিরক্তি অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছে যায়।
গরমের কারণে বাড়িতে বাড়িতে শিশুরা জ্বর ও পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হচ্ছে।
তবে গরমকে পুঁজি করে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সামনে ও ফুটপাতে ক্ষুদে ব্যবসায়ীরা তরমুজ, ডাব, লেবুর শরবত, আখের রস, পানীয় ও ফলমূলের দোকান বসিয়ে রমরমা ব্যবসা করছে। তবে গরমের মধ্যে তরমুজ সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তরমুজ ব্যবসায়ীরা প্রতি পিস ১০ টাকা ও প্রতিটি তরমুজ ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা ধরে বিক্রি করছেন। এছাড়া প্রতি গ্লাস আখের রস, লেবুর শরবত ১০ থেকে ১৫ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
স্থানীয় আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তারা বলছেন চলতি সপ্তাহে তাপমাত্রা আরো বাড়তে পারে।

Check Also

যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।