ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোট: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হলের প্রাধ্যক্ষ গভীর রাতে ছাত্রীদের হল ছাড়া করার মাধ্যমে ফৌজদারি অপরাধ করেছেন। শনিবার বিকালে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা এ কথা বলেন।
এ সমাবেশের আয়োজন করেন ‘শিক্ষার্থীদের অনিরাপত্তায় উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও নাগরিকরা’। এ ছাড়া এ ঘটনার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মশাল মিছিল করেছে প্রগতিশীল ছাত্র জোট।
অধিকার কর্মী বাকী বিল্লাহর সঞ্চালনায় শাহবাগের প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের শিক্ষক মোসাহিদা সুলতানা, আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, লেখক ও সাংবাদিক ফারুক ওয়াসিফ, অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, প্রকাশক রবিন আহসান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সায়মন রেজা পিয়াস, গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক লাকী আক্তার, ঢাবি ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সামান্তা শারমিন প্রমুখ।
জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘একজন আইনজীবী হিসেবে আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, মেয়েদের ছাত্রত্ব বাতিল করার হুমকি, গোয়েন্দা নজরদারি এবং মামলার ভয় দেখানো- কাজগুলোর প্রতিটি সুনির্দিষ্ট ফৌজদারি অপরাধ। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী আইন পরিপন্থী কাজ করলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার দায়িত্ব প্রক্টরের। হলের প্রভোস্ট কিন্তু আইনের ঊর্ধ্বে নন। কোনো প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির অনুমতি ছাড়া তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন চেক করা অন্যায়। তিনি আরও বলেন, হলের প্রভোস্ট কী করতে পারেন আর কী করতে পারেন না, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে তার স্পষ্ট উল্লেখ আছে। আমি ও আমরা ন্যায্য আন্দোলনের সঙ্গে আছি, থাকব।’
ঢাবি শিক্ষক মোসাহিদা সুলতানা বলেন, এখানে শিক্ষক হিসেবে দাঁড়িয়ে কথা বলতে লজ্জা বোধ করছি। আমরা সবসময় নিপীড়নের বিরুদ্ধে। কোটা সংস্কার আন্দোলন একটি বৈষম্যবিরোধী ন্যায্য আন্দোলন। এই আন্দোলন এখন নিপীড়নবিরোধী আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। বলা হয়েছে, গুজবের কারণে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছিল। এ ধারণা ঠিক নয়। আসলে আন্দোলনটি ছিল স্বতঃস্ফূর্ত।
আজ শিক্ষকদের মানববন্ধন : এদিকে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন ইস্যুতে ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তা চেয়ে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষকবৃন্দ’ মানববন্ধনের আয়োজন করতে যাচ্ছে। আজ রোববার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এ মানববন্ধন করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান, পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. আবদুজ জাহেরসহ কয়েকজন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এ সংক্রান্ত স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
ড. তানজীমউদ্দিন পোস্টে লিখেছেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সার্বিক নিরাপত্তাহীনতা, আবাসিক হলগুলোতে বিরাজমান শিক্ষাবিরূপ, শিক্ষা অনুপযোগী আর ভীতিকর পরিবেশের প্রতিবাদে এবং যে কোনো পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন ও মর্যাদা সমুন্নত রাখার দাবিতে রোববার বেলা ১১টায় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে আমরা কয়েকজন শিক্ষক দাঁড়াব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ রাশিদুল হাসান লিখেছেন, গভীর রাতে আমার ছাত্রীদের হল ত্যাগে বাধ্য করা প্রভোস্টের পদত্যাগ চাই। ধিক্কার জানাই।
ডা. মো. আবদুজ জাহের ফেসবুকে লেখেন, ‘ঘৃণা ঘৃণা ঘৃণা! সুফিয়া কামাল হলের নিষ্ঠুর ও হিংস প্রভোস্টের প্রতি একরাশ ঘৃণা।’ তিনি লেখেন, ‘অত্যাচার আর অত্যাচারীর পতন আসন্ন, সুফিয়া কামাল হলের প্রভোস্টের পতন আসন্ন।’ তিনি লেখেন, ‘সাধারণ শিক্ষকদের পক্ষ থেকে, সুফিয়া কামাল হলের প্রভোস্টের ‘নিষ্ঠুরতা’ তদন্তে একটি গণতদন্ত কমিটি গঠন করতে চাই, সাড়া দিন।’ অন্য এক পোস্টে তিনি লেখেন, “সুফিয়া কামাল হলে যে কক্ষটিতে নিয়ে ছাত্রীদের নির্যাতন করা হতো, সেই ‘টর্চার কক্ষটির’ বিষয় নিয়েও নিরপেক্ষ তদন্ত করা হোক।”
বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্রের প্রতিবাদ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী হল থেকে গভীর রাতে ছাত্রীদের হল ছাড়া করার প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র। সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সীমা দত্ত ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদাউস এক যুক্ত বিবৃতিতে হল প্রশাসন কর্তৃক ছাত্রীদের বের করে দেয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। বিবৃতিতে তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এ ধরনের বর্বর ও কাণ্ডজ্ঞানহীন আচরণে দেশের সব বিবেকবান মানুষ স্তম্ভিত, অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন।
প্রগতিশীল ছাত্র জোটের মশাল মিছিল : এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মশাল মিছিল করেছে প্রগতিশীল ছাত্র জোট। শনিবার সন্ধ্যায় জোটের বিশ্ববিদ্যালয় শাখা এ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) থেকে শুরু হয়ে কলা ভবন, মধুর ক্যান্টিন ঘুরে রাজু ভাস্কর্যে এসে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজিরের সভাপতিত্বে এ সময় জোটভুক্ত ছাত্র সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।