ক্রাইমবার্তা রির্পোট: বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন কলেজের বনমালী গাঙ্গুলী ছাত্রীনিবাসে নির্যাতনের জেরে ছাত্রলীগ এক নেত্রীকে গণধোলাই দিয়েছেন সাধারণ ছাত্রীরা। পাশাপাশি ওই ছাত্রলীগ নেত্রীর রুমের আসবাবপত্রও পুড়িয়ে দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ ছাত্রীরা। রোববার সন্ধ্যায় ছাত্রীনিবাসের ১০০০(এ) ২নং বিল্ডিংয়ে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, ঝুমুর দীর্ঘদিন ধরে কলেজের বনমালী গাঙ্গুলী ছাত্রীনিবাসে আবাসিক ছাত্রীদের নানাভাবে হয়রানি ও উত্ত্যক্ত করতেন। নানা অপকর্মে ছাত্রীদের ডাকতেন তিনি। যে তার ডাকে সাড়া দিতেন না তাকে মারধর থেকে শুরু করে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করতেন। এর জের ধরে রোববার সকালে হলের আবাসিক ছাত্রীরা জোটবদ্ধ হয়ে বিএম কলেজের অধ্যক্ষ বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন। এতে উল্লেখ করা হয়, কলেজের বনমালী গাঙ্গুলী ছাত্রীনিবাসের আবাসিক ছাত্রী ও ছাত্রলীগ নেত্রী ফারজানা আক্তার ঝুমুর দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ ছাত্রীদের নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ড করার জন্য চাপ প্রয়োগ করতেন। তার কথা না শুনলেই মারধর থেকে শুরু করে নানা অত্যাচার করেন। এছাড়া ঝুমুর ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তিনি ছাত্রীনিবাসে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন। ১ জানুয়ারি বনমালী গাঙ্গুলী ছাত্রীনিবাসের ২নং ভবনের ছাত্রী ঐশী ঝুমুরের কথা না শোনায় তাকে ঘুমন্ত অবস্থায় বেধড়ক মারধর করা হয়। পরে ঐশীকে ছাত্রীনিবাস থেকে বের করে দেয়া হয়। ১৯ মার্চ ২নং ভবনের আবাসিক ছাত্রী শারমিনকে বেধড়ক মারধর করা হয়। সর্বশেষ ২০ এপ্রিল জান্নাত ও ইভা নামে দুই ছাত্রীকে মারধরের হুমকি দেয়া হয়। স্মারকলিপিতে সাধারণ ছাত্রীরা ঝুমুরকে হল থেকে বহিষ্কারের দাবি জানান।
ছাত্রীনিবাস সূত্র জানায়, স্মারকলিপি দেয়ার বিষয়টি ঝুমুর টের পেয়ে যান। পরে তিনি স্মারকলিপি দেয়া ছাত্রীদের চড়-থাপ্পড় দেয়া শুরু করার একপর্যায়ে সাধারণ ছাত্রীরা জোটবদ্ধ হয়ে ঝুমুরকে গণধোলাই দেন। পাশাপাশি ঝুমুরের রুমে থাকা আসবাবপত্র মূল সড়কে এনে আগুন ধরিয়ে দেন। ছাত্রীরা ছাত্রীনিবাসের সামনের ব্যস্ততম সড়ক অবরোধ করে কিছুক্ষণ বিক্ষোভ করেন। এতে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে পলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বনমালী গাঙ্গুলী ছাত্রীনিবাসের ২নং ভবনের আবাসিক ছাত্রী রহিমা আফরোজ ইভা বলেন, রাজনৈতিক দোহাই দিয়ে ঝুমুর অনৈতিক কর্মকাণ্ড করে আসছিল। কেউ তার কথা না শুনলেই তার পরিণতি হতো খুবই খারাপ। জান্নাতুল ফেরদৌস নামে এক ছাত্রী বলেন, ঝুমুরের বিষয়ে একাধিক প্রভাবশালী নেতাকে জানানো হয়েছে। কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নেননি। এ বিষয়ে বরিশাল ব্রজমোহন কলেজের উপাধ্যক্ষ স্বপন কুমার পাল বলেন, অভিযোগ পাওয়া গেছে এবং বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা চলছে। কলেজের অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান সিকদার বলেন, আমি এ মুহূর্তে ঢাকায় রয়েছি। পুরো বিষয়টি জানি না। ছাত্রীনিবাসে উপাধ্যক্ষসহ অন্য শিক্ষকদের পাঠানো হয়েছে। তারা বিষয়টি দেখছেন। বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার সহকারী কমিশনার শাহনাজ পারভীন বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ব্যাপারে জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আতিকুল্লাহ মুনিম বলেন, বিএম কলেজে ছাত্রলীগের কমিটি নেই। হলগুলোতেও কোনো কমিটি নেই। যার কথা বলা হচ্ছে ছাত্রলীগে তার কোনো পদ-পদবি নেই। দলের নাম ভাঙিয়ে সে বিভিন্ন সময় সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করে। তার কোনো অপকর্মের দায়দায়িত্ব ছাত্রলীগ নেবে না। তবে সাধারণ ছাত্রীরা জানান, ঝুমুর নিজেকে ছাত্রলীগ নেত্রী দাবি করতেন এবং ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতেও তাকে দেখা যায়।