সাতক্ষীরা সংবাদদাতাঃ সাতক্ষীরায় আটকের পর বন্দুকযুদ্ধে নিহতের ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। কথিত বন্দুকযদ্ধে গত সাত দিনের ব্যবধানে দুই ব্যক্তি নিহত হয়েছে। নিহতরা হলেন, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বকচরা গ্রামের মুজিত মোল্লার ছেলে নবাব আলী মোল্লা (৩৮) ও কলারোয়ার বোয়ালিয়া গ্রামের শামছুর রহমানের ছেলে সোহাগ হোসেন (২২)।
২৯ ডিসেম্বর রোববার ভোর ৪টার দিকে সদর উপজেলার আঁগড়দাড়ি ইউনিয়নের আবাদেরহাট এলাকায় পুলিশের সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নবাব আলী মোল্লা (৩৮) নামে একজন নিহত হয়েছেন।
পুলিশের দাবি নিহত নবাব আলী মোল্লার বিরুদ্ধে খুন, ডাকাতি, দস্যুতা, মোটরসাইকেল ছিনতাইসহ বিভিন্ন অভিযোগে ১৫টি মামলা রয়েছে। সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মারুফ আহমেদ জানান, নবাব আলী দীর্ঘদিন ধরে পলাতক ছিলেন। তালা উপজেলার পাটকেলঘাটা থেকে তাকে গ্রেফতার করে পাটকেলঘাটা থানা-পুলিশ। সাতক্ষীরা থানায় তার নামে একাধিক মামলা থাকায় তাকে সাতক্ষীরা সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে নবাব আলী অস্ত্রের তথ্য দেন। অস্ত্র উদ্ধারের জন্য তাকে নিয়ে পুলিশের একটি দল রবিবার ভোর চারটার দিকে আবাদেরহাট এলাকায় রওনা দেয়। ঘটনাস্থল থেকে দুইশ গজ আগে পুলিশের ওপর গুলি ছোড়া হয়। আত্মরক্ষায় পুলিশও গুলি ছোড়ে। দুই পক্ষের মধ্যে ১৫ মিনিট ধরে গুলি বিনিময় চলে।
দুবৃত্তের ছোড়া গুলিতে নবাব আলী ও পুলিশের তিন সদস্য আহত হয়। নবাব আলীসহ আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরীক্ষা শেষে নবাব আলীকে মৃত ঘোষণা করেন জরুরি বিভাগের চিকিৎসক। আহত পুলিশ সদস্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে বলে পুলিশ জানায়। বন্দুকযুদ্ধের স্থান থেকে একটি পিস্তল, একটি গুলি, দুটি রাম দা ও দুটি ছোরা উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
অন্যদিকে গত ২২ এপ্রিল রবিবার কলারোয়া হিজলদি সীমান্তে পুলিশের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে বোয়ালিয়া গ্রামের শামছুর রহমানের ছেলে সোহাগ হোসেন নিহত হয়।
ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় শনিবার দিবাগত রাত ২টা ৩০ মিনিটের দিকে কলারোয়া উপজেলার হিজলদি সীমান্তে পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় সে নিহত হয়।
কলারোয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বিপ্লব কুমার নাথ জানান, সাতক্ষীরা কলারোয়া উপজেলার কেড়াছাগাছি ইউনিয়নের পশ্চিম বোয়ালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী ৯ বছরের শিশু ধর্ষনের ঘটনায় গত ২১ এপ্রিল শনিবার শিশুটির নানি বাদি হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার প্রধান আসামি সোহাগ হোসেন রাত আড়াইটার দিকে হিজলদি সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে সে পুলিশকে লক্ষ করে গুলি ছুড়ে। পুলিশও পাল্টা গুলি ছুড়লে ঘটনাস্থলে গুলিবিদ্ব হয়ে সোহাগ হোসেন মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পরে তাকে উদ্ধার করে কলারোয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসার সময় পথিমধ্যে তার মৃত্যু হয়। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ একটি অনশুটার গান ও এক রাউন্ড গুলি উদ্ধার করার কথা জানান।
গত আট দিনে জেলাতে আটক করা হয়েছে ৩৭৫ জনকে।এর মধ্যে রবিবার ২৯ এপ্রিল গ্রেফতার হয়েছে ৪২ জন, ২৮ এপ্রিল শনিবার ৫৩ জন, ২৭ এপ্রিল শুক্রুবার ৪৫ জন,২৬ এপ্রিল বৃহস্পতিবার ৪১ জন, ২৫ এপ্রিল বুধবার, ৫১ জন, ২৪ এপ্রিল মঙ্গলবার ৫৭ জন, ২৩ এপ্রিল সোমবার ৪০ জন এবং ২২ এপ্রিল রবিবার ৪৬ জন ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে বলে সাতক্ষীরা পুলিশ জানায়। চলতি সসপ্তাহে কালিগঞ্জ ও পাটকেলঘাটা থানার ওসিকে স্টান্ড রিলিজ করা হয়েছে। গত আট দিনে জেলাতে অর্ধশতাধীক নতুন মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব নতুন ও পুরানো মামলায় আটককের ঘটনায় আসামীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বন্দুকযুদ্ধের ভয় দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে অপরিচিত মোবাইল নম্বর থেকে মোটা অংকের চাঁদা দাবী করা হচ্ছে। রাজনৈতিক ভাবে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে একটি মহল অর্থ আদায় করছে। চাহিদা মত টাকা না দিতে পারলে জেলের ঘানি টানতে হচ্ছে। গত আট দিনে জেলাতে বিএনপি ও জামায়াতের ৫০ জনের মত নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বিএনপি ও জামায়াতের কয়েকশ নেতা কর্মী রাতে তাদের বাড়ি থাকতে পারেনা বলে অভিযোগ করেছে কয়েক জন নেতা।
তবে জেলা পুলিশ সুপার জানিয়েছে, কোন নিরিহ মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছে। অপরাধীরা সন্ত্রাসী। তাদেরকে দমন করা পুলিশে কাজ। তবে পুলিশের কোন সদস্য বা পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে যদি কেউ অনিয়ম বা কোন ধরণের অপরাধ করে তবে তাদেরকে ছাড় দেয়া হবে না।