লন্ডনভিত্তিক সংস্থাটি জানায়, অসাম্প্রদায়িকতার মুখোশ পরে সৌদি রাজ পরিবার নিজেদের বাজারে লাখ লাখ ডলার বিনিয়োগ করছে। কিন্তু সাধারণ সৌদি নাগরিকদের ওপর নির্যাতনের চিত্র স্পষ্ট। দেশটির হাজার হাজার রাজবন্দি কারাগারে পচে মরছে। দেশটিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সংখ্যা অগণিত। সংস্থাটি আরও জানায়, সৌদি আরবের অভ্যন্তরীণ স্বৈরশাসনের চিত্র প্রকাশ পাওয়ায় দেশটির ভণ্ডামি ও উদারনীতির মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে। আইএইচআরসি জানায়, মুসলিমবিরোধী পশ্চিমা স্বার্থে সরব সৌদি আরব মুসলিম দেশগুলোর সংকটে নীরব ভূমিকা পালন করে। চলমান ফিলিস্তিন, কাশ্মীর ও রোহিঙ্গা ইস্যুকে এড়িয়ে যাচ্ছে দেশটি। রিয়াদের ‘দেখেও না দেখার ভান’ নীতি বিশ্বের মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর জন্য হুমকির কারণ।
এমনকি মুসলিম বিশ্বের দুটি বৃহত্তম জোট আরব লীগ ও ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) নিয়ন্ত্রণ নিতে আগ্রাসী ভূমিকা পালন করছে সৌদি আরব। সংকটপূর্ণ মুসলিমদের দেশগুলোর পক্ষে দেয়া জোটের সিদ্ধান্তকে তোয়াক্কা না করে সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থান নিচ্ছে রিয়াদ। জাতীয় ঐক্য ও শান্তির বার্তা ছড়ানোর পরিবর্তে তারা সংঘাতকে আরও উসকে দিচ্ছে। ফিলিস্তিন ইস্যুতে ইসরাইলের বিরুদ্ধে সমর্থন দিয়েছে ওআইসি, কিন্তু সৌদি প্রভাব বলয়ে থাকা জোটটির নেতারা এ নীতি থেকে সরে এসে ইহুদীদের পক্ষ নিচ্ছে। এটি পুরো মুসলিম বিশ্ব ও ওআইসি রাষ্ট্রগুলোর জন্য চরম হুমকির। এজন্য ওআইসি জোটকেই আগে সৌদি নেতৃত্বের বলয় থেকে বেরিয়ে আসতে হবে বলে মনে করছে আইএইচআরসি।
গত মাসে সিরিয়ায় রাসায়নিক হামলার বিষয়ে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ অভিযোগ আনতে ব্যর্থ হয় আরব লীগ। এ হামলায় সৌদি আরব ও বাহরাইন সমর্থন দিলেও মিসর, ইরাক ও লেবানন উদ্বেগ প্রকাশ করে। ৯ এপ্রিল সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান তিন দিনের ফ্রান্স সফর করেন। এ সময় ইয়েমেন যুদ্ধ ইস্যুতে তাকে চাপ দেয়ার জন্য ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর প্রতি আহ্বান জানায় মানবাধিকার সংস্থাগুলো। তারা হুশিয়ারি করে জানায়, ‘ফ্রান্সের অস্ত্র ব্যবহার করে ইয়েমেনে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে রিয়াদ।’ এর একদিন পর ইয়েমেনে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের জন্য ১ হাজার ৮০০ কোটি ডলার অস্ত্র বিক্রি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন ম্যাক্রোঁ।
মার্চ মাসের শেষ দিকে ওয়াশিংটন সফর শেষে যুবরাজ সালমান গুমর ফাঁস করে বলেন, যে ওয়াহাবিবাদকে পশ্চিমারা এখন সন্ত্রাসের আঁতুরঘর হিসেবে দেখছে, তারাই এক সময় সমাজতন্ত্র ঠেকাতে এর প্রচারে উৎসাহিত করেছিলেন। তিনি বলেন, গত শতকের সত্তরের দশকে স্নায়ু যুদ্ধের সময় পশ্চিমারাই ওয়াহাবিবাদের প্রচারে অর্থ ঢালতে সৌদি আরবকে অনুরোধ করেছিল। তার ভাষায়, মুসলিম দেশগুলো যেন সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রভাব বলয়ে চলে না যায় সে জন্যই পশ্চিমা মিত্র দেশগুলো সৌদি আরবকে অনুরোধ করেছিল। সেই অনুরোধে বিভিন্ন দেশে মসজিদ-মাদ্রাসায় অর্থ ঢেলে ওয়াহাবি মতাদর্শের বিস্তারে কাজ শুরু করে সৌদি আরব।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রভাব বলয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল পুরো বিশ্ব। ৯০-এর দশকে সোভিয়েতের পতনের পর স্নায়ুযুদ্ধের অবসান ঘটে। আফগানিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে সোভিয়েতবিরোধী লড়াইয়ে উগ্র মুসলিম গোষ্ঠীগুলোতে অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে মদদ জোগানোর অভিযোগ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে।
প্রথম সফরে সৌদি আরবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী : মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পরপরই প্রথম বিদেশ সফরে সৌদি আরবে এসেছেন মাইক পম্পেও। রাষ্ট্রীয় এ সফরে ইরানের বিরুদ্ধে নতুন হুশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি কাতারের বিরুদ্ধে আরোপিত অবরোধ প্রত্যাহারের জন্য সৌদি আরবের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সিআইএ প্রধান থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়া পম্পেও। রোববার সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল-জুবায়ের ও সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ আহ্বান জানান। আলজাজিরা ও সিএনএন।
মার্কিন কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছে, এ অবরোধের কারণে উপসাগরীয় দেশগুলোর অনৈক্যের সুযোগে ইয়েমেন ও সিরিয়ায় ইরান তাদের প্রভাব বাড়াচ্ছে বলেও সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি। পম্পেও বলেন, ‘বিশ্বে সন্ত্রাসবাদে মদদ দেয়ার সর্ব বৃহত্তম দেশ ইরান। মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে দেশটি। তাদের সমর্থন পেয়েই জঙ্গি ও প্রক্সি মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।’ ইরানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের হুশিয়ারিও দেন তিনি।
সন্ত্রসবাদে মদদ দেয়ার অভিযোগে ২০১৭ সালের জুনে কাতারের ওপর অবরোধ আরোপ করে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মিসর।