ক্রাইমবার্তা রির্পোটঃ সুনামগঞ্জে পৃথকস্থানে ধান কাটতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন চার কৃষক। এ সময় আহত হয়েছেন অন্তত আরও তিনজন।মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে বজ্রপাত হলে এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে।আহত দুইজনকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে ও অপর এক জনকে জামালগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।জানা যায়, মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২টায় জামালগঞ্জের পাগনার হাওরে কমলা কান্ত তালুকদার (৫৫) নামের এক কৃষক বজ্রপাতে প্রাণ হারান।নিহত কমলাকান্ত তালুকদার উপজেলার ফেনারবাঁক ইউনিয়নের খোজারগাঁও গ্রামের প্রয়াত ইউপি সদস্য কৃষ্ণ কান্ত তালুকদারের ছেলে।একই সময়ে উপজেলার ভীমখালী ইউনিয়নের কলকত্বা গ্রামের পার্শ্ববর্তী হাওরে ধান কাঁতে গিয়ে হিরণ মিয়া (৩০) নামের আরও এক কৃষক মৃত্যু বরণ করেন। নিহত হিরণ উপজেলার কলকত্বা গ্রামের মৃত মুক্তার আলীর ছেলে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উপজেলার কলকতা গ্রামের পার্শ্ববর্তী হাওরে বোরো ধান কাটতে গেলে মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২টায় আকস্মিক ঝড়ের সঙ্গে বজ্রপাত পড়লে কৃষক হিরন ঘটনাস্থলেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে উপজেলার খোঁজারগাঁও ও কলকতা গ্রামে গিয়ে বজ্রপাতে নিহতদের পরিবারের প্রতি সরকারের পক্ষ থেকে সমবেদনা প্রকাশ করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম আল ইমরান। এ সময় আপদকালীন তহবিল থেকে হিরণের পরিবারকে নগদ ১০ হাজার টাকা ও দাফনের জন্য পৃথকভাবে আরও ১০ হাজার টাকা অনুদান প্রদান করেন।
অপরদিকে জেলার বিশ্বম্ভরপুরের খরচার হাওরে বোরো ধান কাঁটতে গিয়ে একই সময় মো. আলম (৫৫) নামের এক ধান কাটার শ্রমিক বর্জ্রপাত পড়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন। তিনি উপজেলার ধনপুর ইউনিয়নের মৃত সাইদুর রহমানের ছেলে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উপজেলার খরচার হাওরে অন্যান্য শ্রমিকদের সাথে ধান কাঁটতে গেলে ঝড়ের সঙ্গে বজ্রপাত পড়লে শ্রমিক আলম মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সমীর বিশ্বাস বজ্রপাতে শ্রমিক আলম নিহত হওয়ার বিষয়টি যুগান্তরকে নিশ্চিত করেন। এছাড়া সদর উপজেলার মোল্লাপাড়া ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামের আব্দুর রশিদ (৪৫) নামে আরও একজন নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে।
আজ শ্রমিক দিবসেও সারাদেশে বজ্রপাতে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত পাঁচজন।
মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত নিহতের এ ঘটনা ঘটে।
বজ্রপাতে মৃতদের মধ্যে রয়েছেন- সুনামগঞ্জে চারজন, গাইবান্ধায় দুইজন, সিলেটে দুইজন, বগুড়ায় দুইজন ও শেরপুরে একজন।
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সুনামগঞ্জে পৃথক স্থানে বজ্রপাতে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও দুইজন। মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে বজ্রপাতের এ ঘটনা ঘটে।
মৃতরা হলেন- সদর উপজেলার মোল্লাপাড়া ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামের আব্দুর রশিদ (৪৫), জামালগঞ্জ উপজেলার ফেনারবাক ইউনিয়নের খোজারগাঁও গ্রামের কমলাকান্ত তালুকদার (৬০), বিমখালি ইউনিয়নের কলকতা গ্রামের হিরণ মিয়া (৩৫), বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ধনপুর ইউনিয়নের মেরুয়াখলা গ্রামের সাইদুর রহমানের ছেলে আলম মিয়া (৫০)। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সদর থানা পুলিশের ওসি মো. শহিদুল্লাহ।
গাইবান্ধা প্রতিনিধি জানান, সাঘাটা উপজেলার কামারপাড়া গ্রামে বাড়ির পাশে বিলে ধান কাটতে যান আবদুস সালামের স্ত্রী বিলকিস বেগম (৩৫) ও ছেলে সোহেল রানা (১৮)। সকাল ৮টার দিকে বৃষ্টির মধ্যে হঠাৎ বজ্রপাতে তারা ঘটনাস্থলেই মারা যান। সোনাতলা থানা পুলিশের ওসি শরিফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সিলেট প্রতিনিধি জানান, কানাইঘাটে বজ্রপাতে দুই কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার বেলা ২টার দিকে উপজেলার বড়চতুল ইউনিয়নের বড়াই গ্রামের পাশের হাওরে বজ্রপাতে তাদের মৃত্যু হয়।
তারা হলো- কানাইঘাটের বড়াই গ্রামের করিম আলী ওরফে বতাইয়ের ছেলে তোফায়েল আহমদ তামিম ও ফখরুল ইসলামের ছেলে সালমান আহমদ। কানাইঘাট থানা পুলিশের ওসি আবদুল আহাদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বগুড়া প্রতিনিধি জানান, মেঘাখাদবো গ্রামের তবিবর শেখের ছেলে তমিজুর রহমান (৪৭) ও অজ্ঞাত আরও এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই মিজানুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
শেরপুর প্রতিনিধি জানান, শেরপুর সদর উপজেলার বউলি বিলে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে এক কৃষি শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। ধলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রহিজ উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এ ঘটনায় আহত দুইজনকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
এর আগে গত দু’দিনে সারাদেশে অন্তত ৩২ জনের প্রাণহানি হয়েছে।