নিজস্ব প্রতিনিধি ঢাকা: ‘একটা খবরের জন্য আমি এক পত্রিকার লোকদের জিজ্ঞেস করলাম এটা কোথায় কিভাবে পেলেন? তারা বললো কিছু করার নেই আমাদের দেয়া হয়েছে। আমাদের বাধ্য করা হয়েছে। এই হল আমাদের মুক্ত গণমাধ্যম। বর্তমান অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হলে যারা গণতন্ত্রের পক্ষে আছেন তাদের জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। একটি বিষয়কে সামনে নিয়ে কাজ করতে হবে। সেটা হল গণতন্ত্রকে মুক্ত করা। আমাদের স্পষ্ট কথা পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে হবে নির্বাচনের আগে’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (একাংশ) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (একাংশ)’ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। এসময় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার মুখে বলছে মুক্ত গণমাধ্যম। অথচ ভিন্ন ধরনের সেন্সরশিপ আরোপ করছে। পত্রিকায় কোন নিউজ যাবে আর কোন নিউজ যাবে না তা সরকারের লোকজন নির্ধারণ করে দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কথায় মনে হয় যেন তাদের (আওয়ামী লীগ) মতো ভালো মানুষ, গণতান্ত্রিক, মানবতাবান মানুষ আর নেই। অথচ কাজে এই ১০ বছরের মধ্যে ভয়ংকর সমাজ তৈরি করেছে তারা। এমন সমাজ তৈরি করছে যেখানে সাংবাদিকদের বিভক্ত করে দিয়েছে। এই ডাবল স্টান্ডার্ডটি আমাদের শেষ করতে হবে।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের একটি জাতীয় ঐক্য তৈরি করতে হবে। তা না পারলে আমরা এই ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্তি পাব না। যদি ঐক্যবদ্ধ হয় তাহলে মুক্তি পাব। সমগ্র গণতান্ত্রিক দল ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করতে হবে।’
আগামী নির্বাচন নিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা চালু করতে হবে, ভোটের আগে সংসদ ভেঙে দিতে হবে। সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে এবং ভোটের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, ‘আপনি তো এমনিতে সবাইকে জেলে ঢুকিয়ে দিচ্ছেন। খুলনা সিটি নির্বাচনে প্রচারণার জন্য বাইরের লোক গেলে গ্রেপ্তার করা হবে। নির্বাচনের কোন বিধিতে এটা আছে? নির্বাচনী আইনে আছে ভোটের ৪৮ ঘণ্টা আগে বহিরাগতরা থাকতে পারবে না।’
সরকারকে আহ্বান জানিয়ে ফখরুল বলেন, ‘আপনারা বসেন, কথা বলেন। সংকট সমাধান করেন। আমরা তো বলিনি আমাদের সব দাবি মেনে নিতে হবে। এটা না করে যদি নির্বাচনে যান, তাহলে জনগণ তা মেনে নেবে না। এবার ২০১৪ সালের মতো নির্বাচন মানুষ মেনে নেবে না। দেখেন কত গুম, খুন করবেন করেন। দেখি কতজনকে জেলে দিতে পারেন।’
গণমাধ্যমের বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ হলো মুক্ত গণমাধ্যম। শরীরে যেমন অক্সিজেন না থাকলে শরীর বাঁচে না, তেমনিভাবে মুক্ত গণমাধ্যম না থাকলে গণতন্ত্র বাঁচে না। পাকিস্তান আমলেও লেখার জন্য, কথা বলার জন্য সংগ্রাম করতে হয়েছে। যে বিষয়টি নিয়ে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, আমার স্বাধীনতা সেই চিন্তা থেকে যুদ্ধ করেছি। সেই চেতনা, আশা আকাঙ্ক্ষার কী অবস্থা আজকে।’ তিনি বলেন, ‘এখানে কথা বললে জেলে যেতে হয়, গুম হতে হয়। দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়। প্রতিদিন নিহত হচ্ছে। হুমকি-ধমকি দিচ্ছে সাংবাদিকদের। সাংবাদিকরা এক হলে সরকার টিকে থাকতে পারবে না। এরশাদকে ছয়দিনের মধ্যেই ফেলে দিয়েছিলেন। সাংবাদিকরা যদি চায় এ সরকার পড়ে যাবে।’
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, বিএফইউজের মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি কাদের গানি চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, সহসভাপতি শাহীন হাসনাত প্রমুখ।