ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোট: সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার ব্যাংক হিসাবে চার কোটি টাকা জমার বিষয়ে তথ্য জানতে শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা নামে দুই ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।
রোববার সকাল সাড়ে ৯টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে তারা হাজির হন।
দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য জানান, সকাল ১০টা থেকে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়েছে। অভিযোগ অনুসন্ধান কর্মকর্তা ও দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছেন।
এর আগে গত ২৫ এপ্রিল মো. শাহজাহান ও নিরঞ্জন সাহাকে দুদকে হাজির হয়ে অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য দেয়ার জন্য নোটিশ পাঠানো হয়েছিল।
এ দুই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা ফারমার্স ব্যাংকে ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে ৪ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। পরে ওই টাকা ‘রাষ্ট্রের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির’ ব্যাংক হিসাবে জমা দেয়া হয়েছে।
সূত্রটি বলছে, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নামে সোনালী ব্যাংক সুপ্রিমকোর্ট শাখার একটি হিসাবে ওই টাকা জমা হয়েছে।
এ বিষয়ে যুগান্তরের পক্ষ থেকে খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, প্রধান বিচারপতির ব্যাংক হিসাবে যারা টাকা জমা দিয়েছেন, তাদের একজন মো. শাহজাহান। তার পিতার নাম মৃত আমির হোসেন। ফারমার্স ব্যাংকে ঋণ আবেদনে তিনি নিজের পেশা হিসেবে চাকরি ও ব্যবসা উল্লেখ করেছেন। তবে তার আবেদনে টিআইএন নম্বর উল্লেখ করা হয়নি।
২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর ঋণ হিসাব খোলার পর ৮ নভেম্বর প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নামে (সিনহার ব্যাংক হিসাবে) দুই কোটি টাকার পে-অর্ডারের জন্য আবেদন করেন। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পে-অর্ডার ইস্যু করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ (পে-অর্ডার নম্বর-০০৯২০৪৭)। পে-অর্ডারের পর এ হিসাবে আর কোনো লেনদেনও হয়নি।
দুদক সূত্র জানায়, সাবেক প্রধান বিচারপতিকে টাকা প্রদানকারী অপর ব্যক্তির নাম নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা। তার পিতার নাম গোলক চন্দ্র সাহা। ব্যাংকের ফরমে নিরঞ্জনের পেশা উল্লেখ নেই। উল্লেখ নেই টিআইএন নম্বরও।
২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর ঋণ হিসাব খোলার পর তিনিও ৮ নভেম্বর প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নামে দুই কোটি টাকার পে-অর্ডারের জন্য আবেদন করেন। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পে-অর্ডার ইস্যু করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ (পে-অর্ডার নম্বর-০০৯২০৪৬)। মো. শাহজাহানের মতোই নিরঞ্জন চন্দ্র সাহার হিসাবেও পে-অর্ডারের পর আর কোনো লেনদেন নেই।
ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে সরকারের সঙ্গে বেশ কিছু দিন টানাপড়েনের পর ২০১৭ সালের ১০ নভেম্বর সিঙ্গাপুর বসে বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে পদত্যাগ করেন সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা। পদত্যাগের আগে গত বছরের ১৩ অক্টোবর রাতে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন তিনি।
দেশ ছাড়ার আগে প্রধান বিচারপতি তার বাসভবনের সামনে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি অসুস্থ নই। আমি সম্পূর্ণ সুস্থ। বিচার বিভাগের স্বার্থে ফিরে আসব। ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে একটি মহল প্রধানমন্ত্রীকে ভুল বুঝিয়েছেন।’ তিনি তার এ বক্তব্যসংবলিত একটি লিখিত বিবৃতিও সাংবাদিকদের দিয়ে যান।
তার দেশত্যাগের পরের দিন ১৪ অক্টোবর সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন থেকে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে। এতে প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে দুর্নীতিসহ ১১টি অভিযোগ তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, ওই অভিযোগ ওঠার পর তার (এসকে সিনহা) কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি। এ কারণে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বসতে চাননি আপিল বিভাগের অন্য বিচারপতিরা। এসকে সিনহার বিরুদ্ধে ১১টি অভিযোগ উঠলে সেই অভিযোগের তদন্ত দুদক করবে বলে এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
যদিও দুদক থেকে সেই ১১টি অভিযোগের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কোনো অনুসন্ধান শুরু হয়নি। তবে দুই ব্যবসায়ী কর্তৃক তার হিসাবে ৪ কোটি টাকা জমার বিষয়ে একটি অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু হল।