ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোট: চট্টগ্রামে স্কুলছাত্রী তাসফিয়া আমিন (১৬) হত্যার চার দিন পেরিয়ে গেছে। এখনও কোনো কূলকিনারা করতে পারেনি পুলিশ। আর কোনো আসামিও গ্রেফতার হয়নি। তাসফিয়ার হাতে থাকা মোবাইল সেট ও আংটিও উদ্ধার করতে পারেনি।
তবে জিইসি মোড় থেকে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর ও পতেঙ্গা সড়কের যত সিসি ক্যামেরা রয়েছে সবটির ফুটেজ সংগ্রহ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। শনিবার সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেছে তারা। পুলিশ দাবি করছে, সেখান থেকেই তাসফিয়াকে বহনকারী সিএনজি অটোরিকশাটি শনাক্তের কাছাকাছি পৌঁছেছে তারা।
তাদের আশা, এটি শনাক্ত হলে চালককেও খুঁজে পাওয়া যাবে। চালককে পাওয়া গেলে পুরো ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন হবে। তাসফিয়ার হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও বিচার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন তাসফিয়ার বাবা মোহাম্মদ আমিন, চাচা রুহুল আমিনসহ পরিবারের সদস্যরা।
শনিবার বিকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন করেন তারা। এতে তারা অভিযোগ করেন, একটি মহল এটিকে আত্মহত্যা হিসেবে চালানোর পাঁয়তারা করছে। আর তাসফিয়ার বাবাকে ‘ইয়াবা ব্যবসায়ী’ আখ্যা দিয়ে ঘটনা ভিন্ন খাতে নেয়ার চেষ্টা করছে।
তাসফিয়া হত্যা মামলার প্রধান আসামি রিচ কিডস গ্রুপের সভাপতি ধনীর দুলাল আদনান মির্জার রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য রয়েছে আজ। পুলিশ আদনানের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেছে।
পুলিশ জানায়, তাসফিয়া হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করতে সিএমপির কর্ণফুলী জোনের সহকারী কমিশনার জাহেদুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি টিম কাজ করছে। মঙ্গলবার তাসফিয়া খুন হওয়ার আগে নগরীর গোলপাহাড় এলাকার চায়না গ্রিল নামক যে রেস্টুরেন্টে বন্ধু আদনানের সঙ্গে অবস্থান করে, সেই রেস্টুরেন্টের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ ছাড়াও জিইসির মোড় থেকে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর ও পতেঙ্গা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে পুলিশের লাগানো সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে।
এসব ফুটেজ পর্যালোচনা করে সেই সিএনজি অটোরিকশা শনাক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, সেই অটোরিকশাটি মোটামুটি শনাক্ত করা হয়েছে। সেটির মালিক কে, চালিয়েছিল কে- এসব জানার চেষ্টা চলছে। বিস্তারিত জানতে আরও কিছু সময় লাগবে।
সহকারী কমিশনার জাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘তাসফিয়া মৃত্যুর ঘটনা নিবিড়ভাবে তদন্ত করা হচ্ছে। আজও (শনিবার) জিইসি মোড় থেকে পতেঙ্গা ও বিমানবন্দর সড়কের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। এখন গোলপাহাড় এলাকার একটি রেস্টুরেন্ট থেকে বের হচ্ছি। আমরা অটোরিকশাটি শনাক্তের কাছাকাছি রয়েছি।’
মানববন্ধন চলাকালে তাসফিয়ার বাবা মোহাম্মদ আমিন বলেন, ‘আমার মেয়েকে আদনান ও তার সহযোগীরা হত্যা করেছে। আমি এ হত্যার বিচার চাই। পুলিশ এর চেয়ে জটিল মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটন করেছে। আমার মেয়ের হত্যাকারীদেরও পুলিশ দ্রুত চিহ্নিত করে গ্রেফতার করবে বলে আশা করছি।’
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমি আমার মেয়ের শোক কাটিয়ে উঠতে পারছি না। অথচ এরই মধ্যে কেউ কেউ ঘটনাকে ভিন্ন খাতে নিতে আমাকে ইয়াবা ব্যবসায়ী বানিয়ে দিচ্ছে। আমার বাড়ি টেকনাফ। তাই আমার বিরুদ্ধে এমন অপবাদ দিয়ে এসব বলা হচ্ছে। এটা হত্যারহস্য ধামাচাপা দেয়ার একটি ষড়যন্ত্র।’
তিনি বলেন, ‘আমার আমদানি-রফতানি ব্যবসা রয়েছে। আমার ‘আলী অ্যান্ড সন্স’ ও ‘আমিন এন্টারপ্রাইজ’ নামে দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বুধবার সকালে নগরীর পতেঙ্গায় নেভাল একাডেমির অদূরে ১৮ নম্বর ঘাট এলাকায় চোখ, নাক-মুখ থেঁতলানো অবস্থায় স্কুলছাত্রী তাসফিয়ার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
প্রথমে পরিচয় নিশ্চিত না হলেও দুপুরে পরিবারের সদস্যরা থানায় গিয়ে মরদেহ শনাক্ত করেন। আগের রাতে আদনান নামে এক ফেসবুক বন্ধু তাসফিয়াকে ডেকে নিয়ে সহযোগীদের দিয়ে নির্যাতনের পর হত্যা করেছে বলে অভিযোগ আছে।যুগান্তর