৮০ শতাংশ ভোট কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ

   ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোট: গাজীপুরে ৪২৫টির মধ্যে ৩৩৭ এবং খুলনায় ২৮৯টির মধ্যে ২৩৪ কেন্দ্র ঝুঁকিতে * ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের ভেতর থাকবে ১২ জন অস্ত্রধারীসহ ২৪ জন পুলিশ ও আনসার সদস্য এবং বাইরে থাকবে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির অতিরিক্ত টহল

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ৪২৫টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ৩৩৭টি এবং খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ২৮৯টির মধ্যে ২৩৪টি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

সেই হিসাবে দুই সিটিতে গড়ে ৮০ শতাংশ করে ভোট কেন্দ্র ঝুঁকিতে আছে। এর মধ্যে গাজীপুরে রয়েছে ৭৯ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং খুলনার ৮১ শতাংশ। এছাড়া গাজীপুরের ৮৮টি ও খুলনার ৫৫টি ভোট কেন্দ্রকে ঝুঁকিমুক্ত হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।আসন্ন গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের তালিকা তৈরি করেছে যথাক্রমে গাজীপুর পুলিশ এবং খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি)। ওই তালিকা নিজ নিজ রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে পুলিশ ও আনসারের অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য। তবে দুই সিটির সাধারণ ভোটাররা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়েছেন। আগামী ১৫ মে এ ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

আরও জানা গেছে, সর্বশেষ ২০১৩ সালে গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। পাঁচ বছরের ব্যবধানে দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের সংখ্যা বেড়েছে। গত নির্বাচনে গাজীপুরে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র ছিল মোট ভোট কেন্দ্রের ৬০ শতাংশ ও খুলনায় ছিল ৭৫ শতাংশ। এবার গাজীপুরে ১৯ শতাংশ ও খুলনায় ৬ শতাংশ কেন্দ্র ঝুঁকির তালিকায় যুক্ত হল।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানান, প্রার্থী বা প্রভাবশালীদের বাড়ির কাছাকাছি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্থাপিত কেন্দ্র, অতীতে যেসব ভোট কেন্দ্রে সহিংসতা হয়েছিল, যেসব ভোট কেন্দ্রে যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ এবং এলাকার গোয়েন্দা তথ্যসহ বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র চিহ্নিত করা হয়েছে। যদিও প্রশাসনিক ভাষায় এসব কেন্দ্রকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ উল্লেখ করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র পাহারায় পুলিশ ও আনসারের ২৪ জন সদস্য মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর মধ্যে ১২ জন অস্ত্রধারী ও বাকি ১২ জন লাঠিসহ অবস্থান করবেন। অপরদিকে সাধারণ ভোট কেন্দ্রে (ঝুঁকিমুক্ত) ২২ জন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য থাকবেন, যাদের মধ্যে রয়েছে ১০ জন অস্ত্রধারী।

এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের বাইরে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির টহল বেশি থাকবে। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ওই বৈঠকে ভোটের আগে-পরে মোট চার দিনের জন্য গাজীপুরের ৫৭টি ওয়ার্ডে পুলিশ ও এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের ৫৭টি মোবাইল ও ২০টি স্ট্রাইকিং ফোর্স, র‌্যাবের ৫৮টি টিম ও ২৯ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

আর খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ৩১টি ওয়ার্ডে মোতায়েন করা হবে পুলিশ ও এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের ৩১টি মোবাইল ও ১০টি স্ট্রাইকিং ফোর্স, র‌্যাবের ৩২টি টিম ও ১৬ প্লাটুন বিজিবি। বৈঠকের কার্যবিবরণীতে এ সিদ্ধান্ত উঠে এসেছে। ৩০ এপ্রিল এ কার্যবিবরণী পুলিশের আইজি, বিজিবি, র‌্যাব ও আনসারের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হয়েছে।গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ  বলেন, প্রার্থীর বাড়ির কাছের কেন্দ্র, যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ কয়েকটি দিক বিবেচনা করে গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) ও সাধারণ কেন্দ্রের তালিকা তৈরি করেছি। গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ও আশপাশ এলাকার নিরাপত্তায় অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হবে।

তবে খুলনা মেট্রো পলিটন পুলিশের এডিসি সোনালী সেন দাবি করেছেন, খুলনায় ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের সংখ্যা ২২৬টি। এসব কেন্দ্র ও সংশ্লিষ্ট এলাকায় গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। ওইসব কেন্দ্রে মোবাইল পেট্রোল বাড়ানো হবে।

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন : গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম ও বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের নিজ নিজ ওয়ার্ডের সবগুলো কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ। জাহাঙ্গীর আলমের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের তিনটি কেন্দ্রে সাড়ে ছয় হাজার ভোটার রয়েছেন। এ ওয়ার্ডের কানাইয়ায় তার বাড়ি। আর তার বর্তমান বাসভবন ছয়দোনার হারিকেন ফ্যাক্টরিতে। সেখানেই তিনি বাস করেন।

তার বাসভবন সংলগ্ন ভোট কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করা হয়েছে। অপরদিকে হাসান সরকারের ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের ১০টি কেন্দ্রে ভোটার রয়েছেন ৩৭ হাজার। এছাড়া গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান মেয়র বিএনপির সহসভাপতি এমএ মান্নান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খানের ভোট কেন্দ্র দুটিও ঝুঁকিপূর্ণের তালিকায় রয়েছে।

পর্যালোচনায় আরও দেখা গেছে, কাশিমপুর এলাকার ১ থেকে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ২৪টি কেন্দ্রের সবগুলোই ঝুঁকিপূর্ণ। ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ৮টি কেন্দ্রের ৬টি ঝুঁকিপূর্ণ ও ২টি সাধারণ। সাধারণ কেন্দ্র দুটি সারদাগঞ্জ মেরী গোল্ড হাইস্কুলে অবস্থিত। ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পাঁচটি কেন্দ্রের তিনটি ঝুঁকিপূর্ণ ও দুটি সাধারণ। এ কেন্দ্র দুুটি বাগবাড়ী হাক্কানিয়া সালেহীয়া আলিম মাদ্রাসায় অবস্থিত।

এছাড়া কাশিমপুরে অবস্থিত ৬ নম্বর ওয়ার্ড, কোনাবাড়ীর ১১ নম্বর ওয়ার্ড, বাসনের ১৩ নম্বর, ১৪ নম্বর ও ১৬ নম্বর ওয়ার্ড, সালনার ১৯ নম্বর, ২০ নম্বর, ২১ নম্বর ও ২২ নম্বর, জয়দেবপুরের ২৯ নম্বর, ৩০ নম্বর, ৩১ নম্বর, ৩২ নম্বর, ৩৩ নম্বর, ৩৪ নম্বর, ৩৫ নম্বর ও ৩৬ নম্বর এবং গাছা এলাকার ৩৮ ও ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের সবগুলো ভোট কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়া টঙ্গীর ৪৩ নম্বর, ৪৬ নম্বর, ৪৯ নম্বর, ৫০ নম্বর, ৫৩ নম্বর ও ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের সব কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ।

এর বাইরে ৭, ৮, ৯, ১০, ১২, ১৫, ১৭, ১৮, ২৩, ২৪, ২৫, ২৬, ২৭, ২৮, ৩৭, ৪০, ৪১, ৪২, ৪৪, ৪৫, ৪৭, ৪৮, ৫১, ৫২, ৫৫ ও ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডে ঝুঁকিপূর্ণের পাশাপাশি সাধারণ ভোট কেন্দ্র রয়েছে।

ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের তালিকা প্রসঙ্গে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবুর রহমান বলেন, ‘যে তালিকা পুলিশ করেছে, তা নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই। আমরা মনে করি নির্বাচনের পরিবেশ অত্যন্ত ভালো আছে। কোথাও সংঘাত-সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। এমন পরিস্থিতি ভোট গ্রহণ পর্যন্ত বজায় থাকবে বলে আশা করছি।

বিএনপি প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের নির্বাচনী এজেন্ট ও জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সোহরাব উদ্দিন বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের একটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। খুব শিগগিরই ওই তালিকা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দিয়ে ওইসব কেন্দ্রের নিরাপত্তা বাড়ানোর দাবি জানানো হবে।

খুলনা সিটি কর্পোরেশন : খুলনা সিটি কর্পোরেশন এলাকাভুক্ত ৭টি থানার মধ্যে খুলনা মহানগরীর দৌলতপুর থানাধীন ১ থেকে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ৪১টি ও আড়ংঘাটা থানাভুক্ত ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের ৪টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ।

খানজাহান আলী থানাধীন ২নং ওয়ার্ডের ১১ ও ১৩ নম্বর কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ এবং ৯ ও ১২ নম্বর কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ নয়। খালিশপুর থানাধীন ৭ থেকে ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের ৪৮টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ ও ২০টি ঝুঁকিপূর্ণ নয়।

সোনাডাঙ্গা থানাধীন ১৬ থেকে ২০ নম্বর ও ২৫-২৬ নম্বর ওয়ার্ডের ২০টি কেন্দ্র সাধারণ ও ৬০টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ। খুলনা সদর থানাধীন ২১-২৪ ও ২৭-৩০ নম্বর ওয়ার্ডের ৬৮টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ ও ১৯টি সাধারণ। লবণচরা থানাধীন ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের ১১টি ঝুঁকিপূর্ণ ও চারটি সাধারণ ভোট কেন্দ্র।ইসির সংশ্লিষ্টরা জানান, গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের যেসব ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, ওইসব ওয়ার্ডের ভোট কেন্দ্র সহিংসতার আশঙ্কা থাকে। ঢাকার দুই সিটি ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এর বড় উদাহরণ। আসন্ন গাজীপুর ও খুলনা সিটি নির্বাচনে এসব আলাদাভাবে নজরে রাখা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক এসএম কামাল হোসেন  বলেন, খুলনায় কখনও কোনো সাংঘর্ষিক নির্বাচন হয়নি। ১৫ মে’র নির্বাচন সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের গ্রেফতার করছে পুলিশ। তিনি বলেন, খুলনায় কোনো কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ নয়। তবে নির্বাচনের সময় সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজরা যদি বাইরে থাকে তাহলে কেন্দ্রগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হবে।

খুলনা সিটি নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু  বলেন, শুধু ভোট কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ নয়, নির্বাচনই ঝুঁকিপূর্ণ। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা যে কোনো কিছুর বিনিময়ে তাদের দলীয় প্রার্থীকে জয়ী করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও নিশ্চুপ।

তিনি অভিযোগ করেন, তাদের নির্বিঘ্নে প্রচার-প্রচারণা করতে দেয়া হচ্ছে না। নেতাকর্মীদের পুলিশ আটক করছে। রাতে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে হয়রানিমূলক তল্লাশি করছে। এই নির্বাচনে পুলিশ নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবে না বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।যুগান্তর

Check Also

যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।