ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোট: শেরপুর, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, কুমিল্লা, সুনামগঞ্জে বজ্রপাতে অন্তত ১১জন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন আরো কমপক্ষে ও ৬ জন।
সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এ বজ্রপাতে তাদের মৃত্যু হয়েছে।
শেরপুর: শেরপুরে বজ্রপাতে স্কুলছাত্রীসহ চার জনের মৃত্যু হয়েছে।
সোমবার সকাল পৌনে ১০টা থেকে বেলা ১১টার মধ্যে এসব দুর্ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, সকালে প্রাইভেট পড়ে বাড়ি ফেরার পথে শারমিন নামে এক স্কুলছাত্রী গুরুতর আহত হয়। পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে নালিতাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
শারমিন নালিতাবাড়ী উপজেলার পাঘারিয়া মির্জাবাজার গ্রামের হাফেজ সোহেল মিয়ার মেয়ে। সে এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। এছাড়াও একই উপজেলার বাঘবেড় গ্রামে বজ্রপাতে এক ব্যক্তির দুইটি গরু মারা গেছে।
বেলা পৌনে ১১টার দিকে শেরপুর সদর উপজেলার হালগড়া গ্রামে আব্দুর রহিম নামে এক কৃষক মাঠে ধান কাটা অবস্থায় বজ্রপাতে মারা যান। তিনি উপজেলার হালগড়া গ্রামের আকু শেখের ছেলে। শেরপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাবিবুর রহমান গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে সকাল পৌনে ১০টার দিকে নকলা উপজেলার মোজারচর গ্রামে শহিদুল ইসলাম নামে এক যুবক মাঠ থেকে বাড়ি ফেরার পথে বজ্রপাতে মারা যান। শহিদুল ইসলাম নকলা উপজেলার মোজারচর গ্রামের ওয়াহেদ আলীর ছেলে।
নকলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক রবিউল ইসলাম গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অন্যদিকে, জেলার শ্রীবরদী উপজেলার বকচর গ্রামে সকাল ১১টার দিকে কুব্বত আলী নামে এক কৃষক ধান কাটার সময় বজ্রপাতে গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে শ্রীবরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত মো. আনিসুর রহমান তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
হবিগঞ্জ: হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের বৃন্দা চিত্তা হাওরে ধান কাটতে গিয়ে বজ্রপাতে দুই কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো ১ শ্রমিক।
আজ সোমবার সকাল ১০টায় এ ঘটনা ঘটে।
মৃতরা হলেন- কবিরপুর গ্রামের মৃত নাদু বৈষ্ণবের ছেলে অধীর বৈষ্ণব (২৭) ও তেলঘরি গ্রামের বীরেশ্বর বৈষ্ণবের ছেলে বসু বৈষ্ণব (৩২)। আহত ধানকাটা শ্রমিক তেলঘরি গ্রামের হরিচরণ বৈষ্ণবের ছেলে কৃষ্ণধন বৈষ্ণব (৩২)।
বানিয়াচং উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান লুত্ফুর রহমান জানান, সোমবার সকালে বজ্রসহ বৃষ্টি হচ্ছিল। এ সময় বৃন্দা চিত্তা হাওরে ধান কাটার সময় বজ্রপাতের শিকার হন তারা। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় অধীর বৈষ্ণব। গুরুতর আহত অবস্থায় বসু বৈষ্ণবকে নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে সেখানে তিনি মারা যান। আহত কৃষ্ণধন বৈষ্ণবকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজারে পৃথক স্থানে বজ্রপাতে মফিজ মিয়া (৩০) ও আবু সামাদ (১৫) নামে দুই দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো তিনজন।
সোমবার সকাল ও দুপুরে দুর্ঘটনা দু’টি ঘটে।
মৌলভীবাজার সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, দুপুরে শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওরে বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত হলে নৌকার মধ্যে থাকা মফিজের মৃত্যু হয়। মফিজ উপজেলার কালাপুর ইউনিয়নের বরুণা গ্রামের ইসলাম মিয়ার ছেলে।
এ ঘটনায় একই এলাকার রশীদ মিয়া (৩৬), রফিক মিয়া (৫০) ও নজির মিয়া (৬০) আহত হয়েছেন। তারা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
অপরদিকে সকালে সদর উপজেলার খলিলপুরে বাড়ির পাশে ধান ক্ষেতে কাজ করছিলেন সামাদ। এ সময় বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। সামাদ ওই এলাকার ফয়েজ উদ্দিনের ছেলে।
মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক অশোক ঘোষ গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
কুমিল্লা: কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে বজ্রপাতে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে।
সোমবার সকালে উপজেলার রায়কোট দক্ষিণ ইউয়িনের পূর্ব বামপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতের নাম রাহেনা বেগম (৪০)। সে ওই গ্রামের সিরাজুল হক চৌধুরীর স্ত্রী ও এক কন্যা সন্তানের জননী ছিলেন।
পরিবার ও এলাকাবাসীরা জানায়, সোমবার সকালে নিজেদের পুকুর পাড়ে আম কুড়াতে গেলে তার ওপর বজ্রপাত হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর মৃত্যুতে পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
নাঙ্গলকোট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আইয়ুব ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, যেহেতু বজ্রপাতে তাঁর মৃত্যু হয়েছে তাই আইনি কোন জটিলতা নেই। তবে নিহতের পরিবার যদি অভিযোগ করে তাহলে আমরা তদন্ত করে দেখবো।
সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার ছায়ার হাওরে ধান মাড়াই করার সময় বজ্রপাতে নবকুমার দাস (৬৫) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।
সোমবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। নবকুমারের বাড়ি উপজেলার নিয়ামতপুর গ্রামে।
নবকুমারের স্বজনরা গণমাধ্যমকে বলেন, ছায়ার হাওরে বোরো ধান মাড়াই করার সময় বজ্রপাতে আহত হন নবকুমার। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে পাশের দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
শাল্লা থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) সাইফুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, মরদেহ উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।
সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার নাটুয়ারপাড়া চরে বজ্রপাতে প্রাণ হারিয়েছে ১০ মহিষ। এ সময় আহত হয়েছে মহিষের বাথান দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা দুই রাখাল।
সোমবার ভোরে নাটুয়ারপাড়া ইউনিয়নের ঘোড়াগাছা চরে এ ঘটনা ঘটে।
আহত রাখাল নিবারণ ঘোষ ও নিমাই ঘোষকে শহীদ বগুড়া জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মহিষ বাথানের মালিক দুলাল ঘোষ জানান, যমুনার চরে ৪শ’ মহিষের একটি বাথান চড়াচ্ছিলেন ওই দুই রাখাল। সোমবার ভোরে বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত শুরু হয়। এতে ঘটনাস্থলেই বাথানের ১০টি মহিষ মারা যায়। এ সময় মহিষের রাখাল নিবারণ ঘোষ ও নিমাই ঘোষ গুরুতর আহত হয়।
তাদের উদ্ধার করে শহীদ বগুড়া জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তিনি আরও জানান, ১০ মহিষের মূল্য আনুমানিক ১০ লাখ টাকা।
নাটুয়ারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান চাঁন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।