সুনামগঞ্জ:সুনামগঞ্জে পৃথক স্থানে বজ্রপাতে দুই কৃষক, দুই নারীসহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া এসব ঘটনায় চারজন আহত হয়েছেন। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে জেলার বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, দোয়ারাবাজার দিরাই ও জামালগঞ্জ উপজেলায় এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার দণি বাদাঘাট ইউনিয়নের পুরানগাঁওয়ের হযরত আলীর স্ত্রী শাহানা বানু (৩৫), একই উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের ক্ষিরদরপুর গ্রামের আব্দুর রহমানের মেয়ে সুরমা বেগম (২২)।
তাহিরপুর সদর ইউনিয়নের ভাটি তাহিরপুর গ্রামের মুক্তুল হোসেনের ছেলে কৃষক নূর হোসেন (২২) ও দোয়ারাবাজার উপজেলার মান্নারগাঁও ইউনিয়নের ডুববন্ধ গ্রামের আরশাদ আলীর ছেলে ফেরদৌস (১২) এবং দিরাই উপজেলার ৯নং কুলঞ্জ ইউনিয়নের টংগর গ্রামের মৃত ফজর আলীর ছেলে মুসলিম উদ্দিন (৭৫)।
এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্বম্ভপুর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের ক্ষিরদরপুর গ্রামে সুরমা বেগম (২২) মরিচক্ষেতে কাজ করা সময় আকস্মিক বজ্রপাতের শিকার হয়ে প্রাণ হারান। এ সয়ম লিলি নামের এক শিশু গুরুতরভাবে আহত হয়েছে।
স্থানীয় (ফতেহপুর) ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রনজিত চৌধুরী রাজন এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
প্রায় একই সময়ে বিশ্বম্ভপুর উপজেলার দক্ষিণ বাদাঘাট ইউনিয়নের পুরানগাঁও গ্রামে শাহানা বানু বাড়ির আঙিনায় কাজ করছিলেন। এ সময় বজ্রপাতে গুরুতর আহত হন তিনি। তাকে দ্রুত বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
বিশ্বম্ভরপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নব গোপাল বজ্রপাতে দুই নারীর মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
দুপুরে তাহিরপুর উপজেলার ভাটি তাহিরপুরের মুক্তুল হোসেনের ছেলে নুর হোসেন (২৮) গ্রামের পাশে শনিরহাওরে ধানক্ষেতে কাজ করছিলেন। এ সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। তাহিরপুর সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বজ্রপাতে দোয়ারাবাজার উপজেলায় ফেরদৌস (১২) নামে এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। দোয়ারাবাজার থানার ওসি সুশীল রঞ্জন দাস জানান, দুপুরে বাড়ির পাশের ডোবায় মাছ ধরছিল ফেরদৌস। এ সময় বজ্রপাত হয়ে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
একই সময় দিরাই উপজেলার ৯নং কুলঞ্জ ইউনিয়নে ধানের খলায় কাজ করার সময় বজ্রপাতে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মুসলিম উদ্দিন (৭০) নামের এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।
দিরাই থানার ওসি মোস্তফা কালাম এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
এছাড়া বজ্রপাতে জামালগঞ্জ উপজেলায় ধানের খলায় কাজ করার সময় তিনজন কৃষক আহত হয়েছেন।
আহতরা হলেন, ফেরারবাক ইউনিয়নের হঠামারা গ্রামের বাসিন্দা ওয়াহেদ আলীর ছেলে তৈয়বুর রহমান (১৭), একই গ্রামের আব্দুল আহাদের ছেলে আব্দুর রহমান ও সাহেব আলী ছেলে নবী হোসেন।
ফেনারবাক ইউপির সদস্য কে এম আব্দুর রহিম আহতের ঘটনার সত্যতা নিশ্চত করেছেন।
একদিনে জেলার বিভিন্ন স্থানে বজ্রপাতে দুই কৃষক,দুই নারীসহ ৫ জনের মৃত্যুর ঘটনায় গোটা জেলার সর্বত্র বজ্রপাত আতংক বিরাজ করছে।
আগৈলঝাড়া:
বরিশালের আগৈলঝাড়ায় বজ্রপাতে খোকন প্রামাণিক (৩০) নামের এক ধানকাটা শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের কাজিরগ্রাম সাজুরিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত খোকন প্রামাণিক কুষ্টিয়া জেলার খোকসা থানার বড়ইচাড়া গ্রামের আফতাব প্রমাণিকের ছেলে।
গৌরনদী মডেল থানার ওসি মুনিরুল ইসলাম মুনির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
হবিগঞ্জ:
হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে বজ্রপাতে এক কৃষক নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার দুপুরে হাওরে ধানকাটার সময় বজ্রপাতে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান।
নিহত কৃষক ওই উপজেলার মুরাদপুর গ্রামের বাসিন্দা জোবায়ের মিয়া (৩২)। জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কার্যালয় বিষয়টি নিশ্চিত করছেন।
কিশোরগঞ্জ:
কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে গাছ থেকে লিচু পাড়তে গিয়ে বজ্রপাতে ফাহিম মিয়া নামে এক মাদ্রাসাছাত্র মারা গেছে। এ সময় আহত হয় আরেকজন।
মঙ্গলবার সকালে উপজেলার সরারচর ইউনিয়নের মজলিশপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ জানায় পুলিশ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এছাড়া একই সময় জেলার নিকলী উপজেলার কুর্শা এলাকায় বজ্রপাতে আহত হয়েছেন আজিব মিয়া নামে এক কৃষক।
গৌরীপুর:
ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার সহনাটী ইউনিয়নের খামারজানি গ্রামের কৃষক আবুল কাসেম (৬৫) নামে এক ব্যক্তি ধানকাটার সময় বজ্রপাতে নিহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার সহনাটী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নেত্রকোনা:
হাওরে ধানকাটার সময় বজ্রপাতে ইসলাম উদ্দিন (৫৫) নামক এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে নেত্রকোনা জেলার খালিয়াজুরী উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের পাঁচগাও গ্রামে ঘটনাটি ঘটে।
গাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গৌরীপুর:
ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার ২নং গৌরীপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ শালীহর জামে মসজিদের মোয়াজ্জিন মো. রুস্তুম আলী মুনশী (৭০) ধানকাটার সময় বজ্রপাতে নিহত হয়েছেন।
জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত ডাক্তার সৈয়দা মাসরুবা তানজিন তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
শ্রীমঙ্গল:
মৌলভীবাজারে শ্রীমঙ্গলে বজ্রপাতে বরুনা এলাকার মফিজ মিয়া (৩০) ধানকাটা শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।
সোমবার দুপুরে শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালাপুর ইউনিয়নের বরুনা বাইক্কা বিল এলাকায় ধানকাটা অবস্থায় বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয়।
এ সময় তার সঙ্গে আরও তিন শ্রমিক আহত হয়েছেন। নিহত মফিজ উপজেলার কালাপুর ইউনিয়নের বরুণা গ্রামের ইসলাম মিয়ার ছেলে।
এ সময় একই এলাকার নজির মিয়া (৬০), রফিক মিয়া (৫০) ও রশীদ মিয়া (৩৬) আহত হয়েছেন। স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।
শাল্লা:
সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার হাওরে ধানকাটার সময় বজ্রপাতে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। নিহত কৃষক নব কুমার দাস (৬০) উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়নের নিয়ামতপুর গ্রামের মৃত-নন্দলাল দাসের ছেলে।
সোমবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে গ্রাম পার্শ্ববর্তী ছায়ার হাওরে ধানকাটার সময় বৃষ্টিপাতের সঙ্গে আকস্মিক বজ্রপাতের শিকার হয়ে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান নব কুমার।
শাল্লা থানার ওসি মো. দিলোয়ার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বানিয়াচং:
হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলায় হাওরে বজ্রপাতে দুই ধানাকাটা শ্রমিক নিহত এবং অপর এক শ্রমিক আহত হয়েছেন।
সোমবার সকাল ১০টায় উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের বৃন্দা চিত্তা ধান কাটতে গিয়ে তারা বজ্রপাতের শিকার হন।
নিহতরা হলেন- কবিরপুর গ্রামের মৃত নাদু বৈষ্ণবের ছেলে অধীর বৈষ্ণব (২৭) ও তেলঘরি গ্রামের বীরেশ্বর বৈষ্ণবের ছেলে বসু বৈষ্ণব (৩২)।
আহত ধানকাটা শ্রমিক তেলঘরি গ্রামের হরিচরণ বৈষ্ণবের ছেলে কৃষ্ণধন বৈষ্ণব (৩২)।
বানিয়াচং উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান লুৎফুর রহমান বিষিয়টি নিশ্চিত করেছেন।
হালুয়াঘাট:
হালুয়াঘাটে প্রাইভেট পড়ে বাড়ি ফেরার পথে বজ্রপাতে এক স্কুলছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে।
নিহত শারমিন আক্তার (১৬) উপজেলার ৩নং কৈচাপুর ইউনিয়নে রুহী পাগারিয়া গ্রামের সোহেল মিয়ার মেয়ে ও নিচপাড়া এসএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী।
নিহত শারমিনের পরিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নাঙ্গলকোট:
কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে আম কুড়াতে গিয়ে বজ্রপাতে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে।
নিহত রাহেনা বেগম (৪০) রায়কোট দক্ষিণ ইউয়িনের পূর্ব বামপাড়া গ্রামের ছেরাজুল হক চৌধুরীর স্ত্রী ও এক কন্যাসন্তানের জননী।
সোমবার সকালে উপজেলার ওই গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নাঙ্গলকোট থানার ওসি মোহাম্মদ আইয়ুব ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।
শেরপুর:
পৃথক বজ্রপাতে শেরপুরের চার উপজেলায় এক স্কুলছাত্রীসহ চারজন নিহত হয়েছেন। সোমবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা ১১টার মধ্যে এসব ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে বজ্রপাতে শারমিন (১৫) নামে এক স্কুলছাত্রী হয়েছে।
সে উপজেলার এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ও ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার পাঘারিয়া গ্রামের সোহেল মিয়ার মেয়ে।
এদিকে শেরপুর সদর উপজেলার হালগড়া গ্রামের বড়বাড়ির বাসিন্দা মৃত আবু শেখের ছেলে আব্দুর রহিম (৪০) নামে এক কৃষক মাঠে ধানকাটার সময় বজ্রপাতে নিহত হয়েছেন। সোমবার বেলা ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
এছাড়া সকাল পৌনে ১০টার দিকে নকলা উপজেলার মোজারচর গ্রামের মৃত ওয়াহেদ আলীর ছেলে শহিদুল ইসলাম (৩৫) নামে এক যুবক মাঠ থেকে ধান নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে বজ্রপাতে মারা যান।
অন্যদিকে জেলার শ্রীবরদী উপজেলার বকচর গ্রামের জমর উদ্দিনের ছেলে কৃষক কুব্বাছ আলী (৬০) সকাল ১১টার দিকে মাঠ থেকে গরু নিয়ে আসার সময় বজ্রপাতে নিহত হয়েছেন।