ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোট: বুধবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মালয়েশিয়ার ১৪তম সাধারণ নির্বাচন। এ নির্বাচনের ফলাফলই নির্ধারণ করে দেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ; আবার দেশটির প্রধানমন্ত্রীত্বের দায়িত্ব যেতে পারে ৯২ বছর বয়সী মাহাথির মোহাম্মদের হাতে। মাহাথির মালয়েশিয়ার সবচেয়ে বেশিদিন ক্ষমতায় থাকা নেতা; ১৯৮১ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি। কালকের নির্বাচনে তার লড়াই হবে ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতাসীন এককালের সহকর্মী নাজিব রাজাকের বিরুদ্ধে। নাজিব খুব সহজেই এবারের নির্বাচনি বৈতরণী পার হয়ে যাবেন বলে ধারণা করা হয়েছিল। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহে জনমত তার পক্ষ থেকে সরে গেছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান ‘ওয়ান মালয়েশিয়া ডেভেলপমেন্ট বেরহাদের’ প্রায় ৭০ কোটি ডলারের দুর্নীতি নিয়েই প্রশ্নের মুখে পড়েন নাজিব। গার্ডিয়ান লিখেছে, এমন কি যে গ্রামীণ এলাকাগুলোতে ক্ষমতাসীন বারিসান ন্যাসিওনাল জোটের সমর্থন বেশি বলে মনে করা হতো, সেসব স্থানেও নাজিব রাজাকের অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়েছে। আর মহাথিরের ভোটের জোর হিসেব করতে গিয়ে আল জাজিরা লিখেছে, মালয় নৃগোষ্ঠীর টান থাকবে মহাথিরের দিকে।.
নির্বাচন সংক্রান্ত প্রচার প্রচারণায় এগিয়ে রয়েছে মাহাথিরের নেতৃত্বাধীন বিরোধীরা। মাহাথির নিজে একসময় উমনোর প্রধান ছিলেন। এখন তিনি উমনোর জোট বারিসান ন্যাসিওনালের বিরুদ্ধে থাকা পাকাতান হারাপান জোটের নেতা। বারিসান ন্যাসিওনালের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো পাকাতান হারাপান জোটের (অ্যালায়েন্স অফ হোপ) নেতা মাহাথির মোহাম্মদ অবস্থান শক্তিশালী করতে হাত মিলিয়েছেন তার এককালের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পরবর্তীতে বিরোধী রাজনীতিতে যোগ দেওয়া আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে। আনোয়ার ইব্রাহিমকে সমকামের দায়ে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। ওই সময় ক্ষমতায় ছিলেন মাহাথির মোহাম্মদ। মাহাথিরকে বিরোধীরা তাদের নেতা হিসেবে গ্রহণ করলেও, তা তরুণ ভোটারদের হতাশাগ্রস্ত করেছে বলে মনে করে আল জাজিরা। তবে তাদের পর্যবেক্ষণ, মাহাথির মোহাম্মদ সুবিধা পাবেন মালয়দের ভোট পাওয়ার ক্ষেত্রে। তাদের অধিকার নিয়ে সরব ছিলেন মাহাথির। মালয়েশিয়ায় নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে মালয়রাই সংখ্যাগরিষ্ঠ ।
সাবেক নেতা ও সহকর্মী মাহাথির মোহাম্মদের সমালোচনা করে নাজিব রাজাক বলেছেন, ‘মাহাথির নিজেই নিজেকে একনায়ক বলেছেন। আর একনায়ক কখনও বদলায় না। তিনি তার সাবেক সহকর্মীদের ব্যবহার করার চেষ্টা করছেন। তেমনি তার সাবেক সহকর্মীরাও তাকে ক্ষমতার জন্য ব্যহার করছে। তাদের ভন্ডামি দেখলে দম বন্ধ হয়ে আসে।’ গত সপ্তাহে নাজিব উমনোর মোট ২ জন জ্যেষ্ঠ নেতাকে নেতাকে বহিষ্কার করেছেন। তাদের বহিষ্কারের পর আরেকজনকে একই পরিণতি ভোগ করতে হয়েছে, যিনি বিরোধীদের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। এরা সবাই মাহাথিরের এককালের ঘনিষ্ঠ সহকর্মী।
নির্বাচন পর্যবেক্ষক হতে ‘হিউম্যান রাইটস কমিশন অফ মালয়েশিয়ার’ আবেদন খারিজ করে দেয়া হলেও, পর্যবেক্ষণের সুযোগ পাবে ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, মালদ্বীপ, আজারবাইজান, কম্বোডিয়া, কিরগিজিস্তান ও তিমুর লেস্তে।। গার্ডিয়ান লিখেছে, তিমুর লেস্তে ব্যতীত বাকি দেশগুলোর গণতান্ত্রিক অবস্থা সুবিধাজনক নয়।
গার্ডিয়ান লিখেছে, এ বারের নির্বাচনে অস্বচ্ছ ও অগ্রহণযোগ্য প্রচেষ্টা চালানো হতে পারে জয় নিশ্চিতে। আর ভোট কেনাবেচা সবচেয়ে সহজ গ্রামীণ এলাকাগুলোতে। ওই এলাকার কৃষকরা নাজিব রাজাকের সরকারের কাছ থেকে বিপুল ভর্তুকি পেয়েছে এবং গ্রামীণ এলাকা হওয়ায় ওয়ানএমডিবি দুর্নীতি নিয়ে তাদের বিশেষ মাথা ব্যাথা নেই। ফলে তাদের ভোট প্রাপ্তির ক্ষেত্রে আশাবাদী হতে পারেন নাজিব রাজাক। তাছাড়া বারিসান ন্যাসিওনালকে সুবিধা এনে দিতে পারে সাম্প্রতিককালে পরিবর্তিত নির্বাচনি আসনগুলোর পরিবর্তিত সীমানা। নাজিবের নিজের দল উমনো জানিয়েছে, নির্বাচনে যদি তারা ১৩০টির কম আসন পায় তাহলে নির্বাচন পরবর্তীকালে নাজিবের নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। বর্তমানে ‘বারিসান ন্যাসিওনালে’ জোটের ২২২টি আসন রয়েছে।