ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোট: সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রজ্ঞাপন আকারে জারির দাবিতে আগামীকাল (বুধবার) দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।
কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজুভাস্কর্য থেকে জাতীয় জাদুঘর পর্যন্ত এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হবে।
মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারীদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুর এ ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা গত ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করে আসছি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ৯ এপ্রিল আমরা মাননীয় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে ৭ মে পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করি। কিন্তু সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের ও কয়েকজন মন্ত্রীর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্রসমাজ আবার ফুঁসে উঠে। তারপর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কোটা বাতিলের ঐতিহাসিক ঘোষণা দিলে ছাত্রসমাজ আনন্দ মিছিল করে এবং প্রজ্ঞাপন জারির জন্য অপেক্ষা করে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের ২৭ দিন পার হলেও এখনও প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী দুই দুইবার কোটা বাতিলের ঘোষণা দেয়ার পরও এখনও প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি। আমরা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই আমরা প্রধানমন্ত্রীকে বলবো- আপনি অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করে ছাত্রসমাজের মধ্যে যে অস্থিরতা বিরাজ করছে তাদের শান্ত করুন।’
নুর বলেন, ‘আমরা ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছি। ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে প্রজ্ঞাপনের জন্য অপেক্ষা করেছি। কিন্তু প্রজ্ঞাপন জারির জন্য আবার রাজপথে নামতে বাধ্য করবেন না। আমরা আশা করছি আগামী দু’একদিনের মধ্যে প্রজ্ঞাপন পাব।’
এ সময় সংগঠনের যুগ্ম-আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, ‘ছাত্রসমাজের সঙ্গে নাটক শুরু হয়েছে। চক্রান্ত শুরু হয়েছে। আমরা বলে দিতে চাই ছাত্রসমাজ কোনো চক্রান্ত মেনে নেবে না। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলবো আপনি অতিদ্রুত প্রজ্ঞাপন জারি করে ছাত্রসমাজকে শান্ত করুন। তারা এখন ক্ষুব্ধ। নতুবা তারা আবার রাজপথে নেমে আসবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ ও অহিংস। সামনে যে আন্দোলন চলবে সেটিও শান্তিপূর্ণ হবে। আমরা বঙ্গবন্ধুর অহিংস আন্দোলনের চেতনায় বিশ্বাসী।’
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসান, মাহফুজ খানসহ কয়েক’শ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
গত ১১ এপ্রিল জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় নিজেদের চলমান আন্দোলন স্থগিত করেছিল কোটা সংস্কারের দাবিতে গঠিত প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।
এরপর দ্রুত কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারির দাবি তোলেন তারা। এই দাবিতে আন্দোলনে নামেন আন্দোলনকারীরা। কোটা বাতিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া ঘোষণা ৩০ এপ্রিলের মধ্যে বাস্তবায়নের প্রথম দফার আল্টিমেটাম ২৬ এপ্রিল দিয়েছিলেন তারা। এই সময়ের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি না হলে ১ মে থেকে ফের আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছিলেন তারা। এমন অবস্থায় ২৭ এপ্রিল কোটা সংস্কার আন্দোলনের ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীমের বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগ নেতাদের অনুরোধে ৭ মে পর্যন্ত আল্টিমেটামের সময় বৃদ্ধি করেছিলেন আন্দোলনকারীরা।