মানবতাবিরোধী অপরাধীর সাথে তুরিন আফরোজের গোপন বৈঠকের অভিযোগ

ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোট: ঢাকা: একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার এক আসামির সঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার ড. তুরিন আফরোজ গোপনে বৈঠক করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনার জেরে ট্রাইব্যুনালের সব ধরনের মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি দিয়েছেন প্রসিকিউশন।
ড. তুরিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ওই আসামির কাছে মামলার স্পর্শকাতর কিছু তথ্য সরবরাহ করেছেন তিনি। অভিযোগ প্রমাণ হলে তাকে বিধি মোতাবেক বরখাস্ত করা হতে পারে। এ ছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপও নেওয়া হতে পারে। এছাড়া অভিযোগ প্রমাণিত হলে বার কাউন্সিল বাতিল করতে পারে তার পেশাদারি সনদ। এমনটিই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অভিযোগের বিষয়ে ব্যারিষ্টার তুরিন আফরোজ বলেন, অব্যাহতি দেওয়ার কোনো চিঠি আমি এখনও পাইনি। এছাড়া প্রসিকিউশন টিমে যোগদানের পর থেকে আমি যা কিছু করেছি, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে করেছি।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সিনিয়র প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম বলেন, তাকে (তুরিন আফরোজ) প্রথমে রংপুরের মামলা (ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে মামলা) থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর। এরপর তার বিরুদ্ধে প্রাপ্ত অভিযোগ পর্যালোচনা করে আজ (মঙ্গলবাব) সব মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তার কাছে থাকা সব নথিপত্র প্রসিকিউশনে জমা দেওয়ার লিখিত নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) এবং পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) মুহাম্মদ ওয়াহিদুল হককে গত ২৪ এপ্রিল গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন ট্রাইব্যুনাল তাকে কারাগারে পাঠান।
ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মতিউর রহমান। জানা গেছে, গত ১১ নভেম্বর ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে করা মামলাটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজকে। এর এক সপ্তাহ পর তিনি ওয়াহিদুল হককে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে সাক্ষাৎ করতে চান। তাকে যে কোনো দিন আটক করা হতে পারে বলেও তিনি কথোপকথনকালে জানান। প্রথমে নির্ধারণ হয় ১৯ নভেম্বর সন্ধ্যায় মুহাম্মদ ওয়াহিদুল হকের গুলশানের বাসায় তাদের সাক্ষাৎ হবে। এ সময় ড. তুরিন আফরোজ জানান, সহকারী ফারাবী বিন জহির অনিন্দকে নিয়ে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বোরকা পরে তারা দুজন ওয়াহিদুল হকের বাসায় যাবেন। পরবর্তী সময়ে সাক্ষাতের স্থান পরিবর্তন হয়। তারা গুলশানে অলিভ গার্ডেন নামের একটি রেস্টুরেন্টে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তারা প্রায় তিন ঘণ্টা মামলার নথিপত্র নিয়ে আলোচনা করেন। তখন মুহাম্মদ ওয়াহিদুল হককে তুরিন আফরোজের সহকারী ফারাবী বলেন, আপনি যে পদে ছিলেন, তাতে তো ২০-২৫ কোটি টাকা এমনিতেই ক্যাশ থাকার কথা। এ সময় ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ এবং তাকে গ্রেপ্তারের আদেশের অনুলিপি নিয়েও আলোচনা হয় বলে জানা গেছে।
তদন্ত সংস্থা জানায়, ওয়াহিদুল হক মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্য ছিলেন। ১৯৭৪ সালের ডিসেম্বরে দেশে ফিরে দুই বছর পর পুলিশে যোগ দেন। নব্বইয়ের দশকে তিনি জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার দায়িত্ব পান। এর পর গত শতকের শেষ দিকে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হন। একাত্তরের ২৮ মার্চ রংপুর ক্যান্টনমেন্টে পাঁচ থেকে ছয়শ নিরস্ত্র বাঙালি ও সাঁওতালের ওপর মেশিনগান দিয়ে গুলি চালিয়ে হত্যা ছাড়াও মানবতাবিরোধী নানা অপরাধের সঙ্গে ওয়াহিদুল হকের সম্পৃক্ততার তথ্য প্রাপ্তির পরই তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানায় সংশ্লিষ্ট তদন্ত সংস্থা।

Check Also

আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের খালিয়া রাস্তার বেহাল দশা।। বিপত্তিতে শতাধিক পরিবার।।দ্রুত সংস্কার দাবি 

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড খালিয়া গ্রামের সানাপাড়ার প্রায় শতাধিক পরিবার একটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।