জমে উঠেছে সাতক্ষীরার আমের বাজার* নিরাপত্তা জোরদারের দাবী ব্যবসায়ীদের*ভোক্তার অধিকার ক্ষুণ্ণ করলে কঠোর ব্যবস্থা: জেলা প্রশাসক (ভিডিও)

আবু সাইদ বিশ্বাস:সাতক্ষীরা: জমে উঠেছে সাতক্ষীরার আমের বাজার। চারিদিকে আম আর আম। আম কিনতে দেশের পাইকারী ব্যবসায়ীরা এখন সাতক্ষীরাতে ব্যস্ত সময় পার করছে। ধুম পড়ে গেছে আম কেনা বেচায়। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত আম চাষীদের কর্মব্যস্ততার যেন শেষ নেই। আম পাকতে শুরু করায় বেশ জোরেশোরেই আম পাড়া এবং বেচাকেনার উৎসব শুরু হয়েছে। বুধবার ব্যবসায়ীরা এ মৌসুমের আমের প্রথম চালান ঢাকাতে পাঠিয়েছে। প্রথম দিনে জেলা থেকে প্রায় ১০ ট্রাক গোবিন্দভোগ ও গোপালভোগ আম ঢাকাতে পাঠানো হয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান। ঢাকার শতাধীক ও সাতক্ষীরার সহ¯্রাধীক পাইকারী আম ব্যবসায়ী এখন ব্যস্ত সময় পার করছে আম প্রকিয়াজাত করণে। চলতি মৌসুমে কয়েক কোটি টাকার আম ক্রয়-বিক্রয় হবে বলে আম ব্যবসায়ীরা মনে করছেন। তবে বাজার মনিটার ও নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে উদ্বীগ্ন ব্যবসায়ীরা।

এবর আম পাড়া কোন নির্ধরিত দিন ক্ষণ ঠিক করা হয়নি। জেলা কৃষি খামারবাড়ির পক্ষ থেকে বিষমুক্ত আম সংগ্রহের জন্য গাছে পাকা শুরু করলেই আমই পাড়া যাবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন ,এ বছর গরমের তীব্রতায় আগেভাগেই আম পেকেছে। বুধবার সাতক্ষীরার বড় বাজারে গিয়ে সেই সত্যতা মিলল। বাজার জুড়ে আম। সারি সারি ভটভটি ও ভ্যান আম নিয়ে ছুটছে। ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে সাতক্ষীরার বাজারের গোপালভোগ ও গোবিন্দ ভোগ আম উঠতে শুরু করেছে। বড় জাতের গোবিন্দ ভোগ আম ১৫শ থেকে ২৫শ টাকা দরে মণ বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে গোপালভোগ আমের দাম তুলনা মুলক কম। বরাবরের মতো এবারও সবার আগে বাজারে উঠেছে সাতক্ষীরার আম। সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর বড়বাজারের আমের আড়তে গেলে চোখে পড়ে এই দৃশ্য। ভ্যানে করে ঝুড়ি ঝুড়ি আম নিয়ে আসছেন চাষিরা। ক্যারেট ভর্তি করছেন কেউ কেউ। কেউবা ব্যস্ত ট্রাক লোডে। আর লোড করা ট্রাক চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়।

ব্যবসায়ীরা জানান, চলতি মাসের ১৫ তারিখের পর থেকে হিমসাগর ও ২৫ তারিখের পর থেকে ল্যাংড়া আম বাজারে উঠতে পারে। একইভাবে ১৫ মের পর থেকেই ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আম রপ্তানির প্রস্তুতি নিচ্ছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কোয়ারেন্টাইন বিভাগ, বাংলাদেশ ফ্রুট অ্যান্ড ভেজিটেবল এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশন, রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ইসলাম এন্টারপ্রাইজও দীপ ইন্টারন্যাশনাল, হর্টেক্স ফাউন্ডেশন ও এফএওসহ সংশ্লিষ্ট চাষিরা।

আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবছর জেলায় আমের বাম্পার ফলন হয়েছে । সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি মৌসুমে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়েও জেলা থেকে প্রায় ১০০০ মেট্রিক টন আম বিদেশে রফতানি হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। গত বছর যার পরিমাণ ছিল ৭০০ মেট্রিক টন ।
তবে বাজার মনিটারিং এ সরকারের নেই তেমন তদারকি। চলতি মৌসুমে জেলাতে কোটি টাকার আম বেচা কেনার পরিকল্পনা থাকলেও বাজারে নেই কোন নিরাপত্তা কর্মী। ফলে চরম উদ্বিগ্নতার মধ্যে নগদ লেনদেন করতে হচ্ছে এ খাতে সংশ্লিষ্টদের।
বড় ধরণের কোন পাইকারী বাজার না থাকায় সুলতানপুর বড় বাজারের দীর্ঘ জান-জটের কবলে পড়তে হচ্ছে জনসাধারণকে। বাধ্য হয়ে ব্যবসায়ীরা বড়বাজারের দক্ষিণ পার্শ্বে মন্টু মিয়ার জমি ইজারা নিয়ে আম প্রক্রিয়া জাতের কাজ করছে। অর্ধশাধিক ব্যবসায়ী জমি ইজার নিয়ে আড়ত ঘর তৈরি করেছে। এখানে প্রতিদিন দুইশতাধী শ্রমিক আমের ক্যারট করে ট্রাক সাজাতে ব্যস্ত সময় পার করছে।
কয়েক জন ব্যসায়ীর সাথে কথা হয়,তারা জানান কয়েক বছর ধরে তারা সাতক্ষীরা থেকে আম কিনে ঢাকা সহ বিভিন্ন জেলাতে বিক্রয় করে। কিন্তু তারা যথেষ্ট নিরাপত্তা হীনতার মধ্যে সাতক্ষীরাতে অতিবাহিত করেন।
আবার জেলার অনেক আম ব্যবসায়ী বাজারের আড়তদারদের কাছে জিম্মি বলে অভিযোগ রয়েছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ আড়তদারদের কাছ থেকে দাদন নিয়ে ব্যবসা করার কারণে বাগানের সমস্ত আম উঠার পর আড়তদারদের কাছে সেই আম বিক্রি করতে বাধ্য হতে হয়। ফলে সিন্ডিকেটের কবলে পড়তে হয় জেলার গোটা আম ব্যবসায়ীদের।

একটি আম উৎপান থেকে চুড়ান্ত ভোগ পর্যন্ত কয়েকবার হাত বদল হয়। এতে আমের দামকয়েক গুণ বৃদ্ধি পায়। শুধু আড়তে আম উঠানোর করণে আড়তদারদের শতকরা আট টাকা হারে খরচ দিতে হয়। ব্যবসায়ীরা জানান, সাতক্ষীরাতে যে আমের মণ ২ হাজার টাকা ঢাকাতে তা বেড়ে দাড়ায় ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। আবার জেলার গ্রাম পর্যায়ে আমের মণ ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকায় জেলার পাইকারী বাজারে তা ২ হাজার থেকে ২২ শত টাকা। ফলে প্রকৃত চাষীরা আমের ন্যর্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ সূত্র জানান, জেলার সাতটি উপজেলায় চলতি বছর চার হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ১১৯৫ হেক্টর জমিতে, কলারোয়া উপজেলায় ৬০২ হেক্টর, তালা উপজেলায় ৭০৫ হেক্টর, দেবহাটা উপজেলায় ৩৬৮ হেক্টর কালিগঞ্জ উপজেলায় ৮০৫ হেক্টর, আশাশুনি উপজেলায় ১২৫ হেক্টর ও শ্যামনগর উপজেলায় ১৫০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। এরমধ্যে সাতক্ষীরা সদরে আমের বাগান রয়েছে ১৫৩০টি, কলারোয়ায় ১৩১০টি, তালায় ১৪৫০টি, দেবহাটায় ৪৭৫টি, কালিগঞ্জে ১৪২টি, আশাশুনিতে ১৯০টি ও শ্যামনগর উপজেলায় ১৫০টি আমের বাগান রয়েছে। সাতক্ষীরার মাটি ও আবহাওয়া আম চাষের অনুকূল হওয়ায় অন্য অঞ্চলে উৎপাদিত আমের চেয়ে সাতক্ষীরার আম বাজারে উঠতে থাকে সবার আগে।

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক কাজী আব্দুল মান্নান জানান, সাতক্ষীরার আম গুণে-মানে সুস্বাদু। অন্যান্য জেলার থেকে সাতক্ষীরার আম আগে পাকে। এ জেলার মাটি আম চাষের উপযোগী। গত চার বছর ধরে এ জেলার আম ইউরোপে রফতানি হচ্ছে। এবারও বাগান পরিচর্যা করা হচ্ছে বিদেশে আম পাঠানোর জন্য। তিনি জানান আম দ্রুত পাকানোর জন্যে যদি কেউ ফরমালিনের আশ্রয় নেয় তবে কয়োর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন জানান, সাতক্ষীরার আম সারা দেশে সুখ্যাতি রয়েছে। সুনাম ক্ষুণœ করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভোক্তার অধিকার ক্ষুণœ করে আম পাকাতে কেউ ফরমালিনের আশ্রয় নিলে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। মোবাইল কোর্ট বসিয়ে তাৎক্ষণিক সাজা কার্যকর করা হবে। সাথে থাকবে জরিমানার ব্যবস্থা।

Check Also

যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।