নাটোর প্রতিনিধি
প্রতিদিন হাড়ভাঙ্গা খাটুনি। রাজমিস্ত্রির কাজ করে সারাদিনের ক্লান্তি। ঘরে বিদ্যুতের আলো নেই। তবুও থেমে থাকেনি নুরুজ্জামান শেখ। কুপির আলোতেই রাত জেগে পড়ালেখা করে সাফল্যের দেখা পেয়েছে। সে চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে। নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার দয়ারামপুর ইউনিয়নের তালতলা গোরস্থান পাড়ার লোকমান শেখের ছেলে নূরুজ্জামান শেখ। তালতলা গ্রামের কবর স্থান থেকে মেঠোপথ ধরে এগিয়ে মাঠের মধ্যে তিনটি পরিবারের বসবাস। সেখানেই নূরুজ্জামানের বাড়ি। পাঠকাঠির বেড়া টিনের ছাউনি দেয়া তিনটি ঘর। দরজাবিহীন ঘরের একটি তার। সেখানে চলতো তার পড়ালেখা। তিন ভাইয়ের মধ্যে সে দ্বিতীয়। বড় ভাই মাহমুদ বনপাড়া ডিগ্রী কলেজের বিএ এবং অপর ছোট ভাই নুরুন্নবী ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ালেখা করে। বাবা লোকমান শেখ নিজেও একজন দিনমজুর। তিন সন্তানকে দুবেলা দুমুঠো খাবার জোটাতে না পারলেও পড়ালেখা করে বড় হওয়া যায় এমন স্বপ্ন দেখাতেন। বাবার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে নূরুজ্জামান শেখ কোন ঘাটতি রাখেনি। ছোট থেকে বাবার কাজে সহযোগিতার পাশাপাশি নিজেও অন্যের বাড়িতে দিন মজুরের কাজ করতো। একটু বড় হয়ে বেছে নেয় রাজমিস্ত্রির কাজ। এমনকি রেজাল্টের দিনও রাজমিস্ত্রির কাজে ব্যস্ত থাকায় বন্ধুর মাধ্যমে মোবাইল ফোনে তার ফলাফল জেনেছে। সে পরীক্ষার পর থেকে ঢাকার সাভারে নবীনগরের খুরগাঁও এলাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করছে। কষ্টের মধ্য দিয়ে প্রাইমারি শেষ করে সে উপজেলার মিশ্রিপাড়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হয়। প্রত্যেক শ্রেণীতেই ভাল ফলাফল করতো সে। এ বছর ওই বিদ্যালয় থেকেই এসএসসি’তে জিপিএ ৫ পায় নুরুজ্জামান। তার স্বপ্ন ভাল কলেজে ভর্তি হয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করে সরকারি উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা হতে চায়। কিন্তু অর্থাভাব তার সে পথের একমাত্র বাধা। দৃঢ় প্রত্যয়ী নুরুজ্জামান কখনই পড়া লেখা বন্ধ করতে চায়না। এব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আঃ ওয়াহাব জানান, নুরুজ্জামান খুবই মেধাবী ছাত্র। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সে অনেক দুর এগিয়ে যাবে।
মামলা করায় বাদীকে হুমকি
নাটোরে ২৫ দিনেও অপহৃত মাদরাসা ছাত্রীর সন্ধান মেলেনি
নাটোর প্রতিনিধি
বড়াইগ্রামে মাদরাসা ছাত্রী চম্পা খাতুনকে (১৪) অপহরণের ২৫ দিন পেরিয়ে গেলেও তার কোন সন্ধানে মেলেনি। উল্টো মামলা করায় বাদীপক্ষকে হুমকি দিচ্ছে আসামীর পরিবার ও তাদের আতœীয় এক ইউপি সদস্য। এ ঘটনায় স্বজনেরা চম্পার জীবনহানীর আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। অপহৃত চম্পা খাতুন উপজেলার তালশো গ্রামের মৃত বাহার উদ্দিনের মেয়ে ও কুমারখালী দাখিল মাদরাসার ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র। মামলা ও অপহৃতের পরিবার সুত্রে জানা যায়, গত ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষের দিন চম্পা তার ভাতিজি মৌকে সাথে নিয়ে নানার বাড়ি থানাইখাড়া থেকে নগর বাজারে বেড়াতে যায়। এ সময় চম্পার প্রতিবেশী মামা মিনহাজুল তাদেরকে জোনাইলে মেলা দেখাতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে একটি অটো রিক্সায় উঠায়। পরে জোনাইল পার হয়ে বাগডোব নিয়ে গেলে তারা যেতে আপত্তি জানিয়ে গাড়ি থেকে নামার চেষ্টা করে। কিন্তু সেখানে আগে থেকে অবস্থান করা তালশো গ্রামের জাহিদুল ইসলামের ছেলে সবুজ ও তার সাথে থাকা লোকজন মিলে মৌকে অটো রিক্সা থেকে ফেলে দিয়ে মিনহাজুলের সহযোগিতায় চম্পাকে জোর পূর্বক তুলে নিয়ে চলে যায়। পরে অনেক চেষ্টা করে গত ২৫ দিনেও তার কোন সন্ধান মেলেনি। এ ব্যাপারে নাটোর কোর্টে মামলা করা হয়েছে। এদিকে, মামলা করায় মিনহাজুলের বড় ভাই ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান ও সুবজের স্বজনেরা চম্পার বিধবা মাসহ অন্যদের নানা ভাবে হুমকি দেয়ায় তারা চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন বলে জানান তারা। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বুধবার ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান হুমকি দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি ও তার ভাই এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয় বলে দাবী করেন। বড়াইগ্রাম থানার ওসি শাহরিয়ার খান জানান, এ ব্যাপারে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নাটোরে ১২ কেজি গাঁজাসহ আটক-৩
নাটোর প্রতিনিধি
নাটোরের গুরুদাসপুরে ১২ কেজি গাঁজাসহ আনোয়ার হোসেন ওরফে দুলাল (২৪), সুমন মিয়া (৩২) ও ময়নুল ইসলাম নামের তিন মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করেছে জেলা মাদকদব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। থানা পুলিশ সুত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার রাতে মাদকদব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে নাটোরের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক (ভারপ্রাপ্ত) আলমগীর পাশা ৪ জনকে আসামী করে গুরুদাসপুর থানায় মামলা করে ওই তিন আসামীদের হস্তান্তর করে। মঙ্গলবার বেলা দশটার দিকে উপজেলার কাছিকাটা টোল প্লাজায় ঢাকা মেট্রো ন-১৩-৭৯৭০ নম্বরের পিকআপে তল্লাসী চালিয়ে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা মুল্যের ১২ কেজি গাঁজাসহ ওই তিন জনকে আটক করা হয়েছে। অপর আসামী আরিফ (২৫) পালিয়ে যায়। পিকআপটি মহাসড়ক হয়ে বনপাড়া থেকে সিরাজগঞ্জের দিকে যাচ্ছিল। আটককৃতরা হলেন কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী কুরুশ ফেরুশা গ্রামের আফজাল হোসেনের ছেলে দুলাল, রংপুর জেলার সদর থানার আশরতপুর ঈদগাহ পাড়ার আবু বক্কার সিদ্দিকের ছেলে সুমন মিয়া ও মোজাম্মেল হকের ছেলে ময়নুল ইসলাম।
রিয়াজুল ইসলাম
নাটোর প্রতিনিধি