ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোট: ঢাকা: জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন স্থগিত চেয়ে করা রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদকের করা আপিলের (লিভ টু আপিল) ওপর শুনানি শেষ হয়েছে। আদেশের জন্য আগামী মঙ্গলবার দিন ধার্য করেছেন আদালত।
আজ বুধবার সকাল সোয়া ৯ টার পর থেকে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বিভাগের চার বেঞ্চে শুনানি শুরু হয়ে দুপুর ১ টার পর শুনানি শেষ হয়।
শুনানির সময় গতকালের মতো আজও আদালতে হট্টগোল হয়েছে।শুরুতেই বক্তব্য উপস্থাপন করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী। এর পর একে একে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, জয়নুল আবেদীন ও ব্যারিস্টার মাওদুদ আহমদ শুনানি করেন। পরে বক্তব্য দেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী খুরশিদ আলম খান।
সব শেষে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শুনানি শেষ হয়। তাঁর বক্তব্যের সময় আদালতে প্রচণ্ড হট্টগোল হয়। একপর্যায়ে বিরক্ত হয়ে আদালত এজলাস ছেড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। পরে জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের উপস্থিতিতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার শুনানি করা হয়। অসমাপ্ত শুনানির জন্য আজ বুধবার দিন ধার্য করা হয়।
শুনানিতে খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, আমার এ দীর্ঘ আইন পেশায় দেখেছি ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রে হাইকোর্টের আদেশে সুপ্রিম কোর্ট হস্তক্ষেপ করে না।
জয়নুল আবেদীন বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে যে সাজা দেয়া হয়েছে, স্বল্প সময়ের এমন সাজায় হাইকোর্টের দেয়া জামিনের বিরুদ্ধে দুদক বা রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করেছে এমন নজির নেই।
তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। আমরা তার সাথে দেখা করেছি। তার হাত-পা ফুলা। হাঁটাচলা করতে পারেন না। এমন অসুস্থ একজন মানুষের বিরুদ্ধে কেন তারা আপিলে এসেছেন এটা আদালতকে উপলব্ধি করা উচিত, ভেবে দেখা উচিত, বিবেচনা করা উচিত।
এছাড়া তিনি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের দু’টি মামলার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মো: নাসিমকে হাইকোর্ট ১৩ বছরের সাজা মামলায় জামিন দেন। তার বিরুদ্ধে দুদক ও সরকার আপিল করেনি। শেখ হাসিনা বিরুদ্ধে দুদকের মামলা হাইকোর্ট বাতিল করেছে। দুদক আপিল করেনি।
খালেদা জিয়ার পক্ষে আদালতে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এ জে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, খন্দকার মাহবুব হোসেন, মাহবুব উদ্দিন খোকন প্রমুখ সিনিয়র আইনজীবীরা।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদকের লিভ টু আপিল এবং খালেদা জিয়ার জামিন বহাল চেয়ে তার পক্ষে দায়ের করা অপর একটি আপিল আবেদনের ওপর শুনানির জন্য ৮ মে মঙ্গলবার শুনানির দিন নির্ধারণ করেছিলেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
গত ১৯ মার্চ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। একই সাথে খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন আদেশের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও রাষ্ট্রপক্ষকে আপিলের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া দুই সপ্তাহের মধ্যে মামলার সারসংক্ষেপ জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়ে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিল (আপিলের জন্য অনুমতি চেয়ে আবেদন) গ্রহণ করা হয়।
আদেশের পর ওই দিন খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের অনুরোধে প্রধান বিচারপতি বলেছিলেন, আমরা নিশ্চয়তা দিচ্ছি, ৮ মে এই মামলা শুনানির জন্য তালিকার শীর্ষে থাকবে। কোনো ধরনের মুলতবি ছাড়া বিরতিহীনভাবে শুনানি হবে। ৮ মে না হলেও ৯ মের মধ্যে এই মামলার নিষ্পত্তি করব।
গত ৮ ফেব্র“য়ারি বেগম খালেদা জিয়াকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালত এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার পরপরই বেগম খালেদা জিয়াকে আদালত থেকে গ্রেফতার করে পুরান ঢাকার সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি এখনো সেই কারাগারে আছেন। একই রায়ে খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অপর চার আসামিকে ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এরপর গত ২০ ফেব্র“য়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় নিম্ন আদালতের দেয়া সাজার রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার খালাস চেয়ে আপিল দায়ের করা হলে ১২ মার্চ চারটি যুক্তি আমলে নিয়ে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের হাইকোর্ট বেঞ্চ খালেদা জিয়াকে চার মাসের জামিন দেন। জামিন আদেশে আদালত বলেন, আদেশ দেয়ার সময় আমরা যেসব বিষয় বিবেচনা করেছি সেগুলো হলো- এক. সাজার পরিমাণ (বিচারিক আদালতে তাকে যে স্বল্প মেয়াদের সাজা দেয়া হয়েছে); দুই, মামলাটির বিচারিক আদালতের নথি এসেছে এবং এটি আপিল শুনানির জন্য পেপার বুক তৈরি হয়নি; তিন. বিচারিক আদালতে মামলা চলাকালে তিনি নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিয়েছেন, তিনি জামিনে ছিলেন ও জামিনের অপব্যবহার করেননি এবং চার. তার বয়স ও শারীরিক অসুস্থতার বিষয় বিবেচনা করা হলো। আদালত আরো বলেন, তিনি ৭৩ বছর বয়সী একজন নারী এবং দীর্ঘ দিন ধরে নানা রোগে আক্রান্ত। এসব বিবেচনা করে তাকে চার মাসের জামিন দেয়া হলো।