ক্রাইমবার্তারিপোট: কালবৈশাখী ঝড় ও বজ্রপাতে দেশের ছয় জেলায় ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক মানুষ। এ সময় সহস্রাধিক ঘরবাড়ি লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। উপড়ে পড়েছে বহু গাছপালা ও বিদ্যুতের খুঁটি। ঝড়ের সঙ্গে শিলাবৃষ্টিতে বিভিন্ন স্থানে ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শুধু নীলফামারীতেই ঝড়ে গাছ ও ঘর ভেঙে পড়ে মা-মেয়েসহ সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
নীলফামারী : বৃহস্পতিবার রাতে জেলার ডোমার, ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার ওপর দিয়ে কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যায়। এতে এসব এলাকার অসংখ্য কাঁচা ঘরবাড়ি ও গাছপালা উপড়ে পড়ে। ঝড়ের সঙ্গে শিলাবৃষ্টি হওয়ায় বোরো ধান, পাট ও ভুট্টা ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জলঢাকা উপজেলায় ঝড়ের মধ্যে গাছ ভেঙে পড়ে মা-মেয়েসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন- মীরগঞ্জ ইউনিয়নের ব্যবসায়ী আশিকুর রহমান (২২), ধর্মপাল ইউনিয়নের খচিমাদা গ্রামের মা ছামিয়া বেগম (২৭) এবং তার আড়াই মাসের শিশুকন্যা। এ উপজেলায় ঝড়ের সময় অন্তত ৫০ জন আহত হন।
অন্যদিকে ডোমার উপজেলায় ঝড়ে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এরা হলেন- গোমনাতী ইউনিয়নের মৌজা গোমনাতীর দিনমজুর আবদুল গনি (৪০), কেতকীবাড়ী ইউনিয়নের দিনমজুর আফিজার রহমান (৪০), ভোগডাবুড়ি ইউনিয়নের খোদেজা বেগম (৫০) ও জমিরুল ইসলাম (১২)। স্থানীয়রা জানান, নিহতরা ঝড়ের সময় বাড়িতেই ছিলেন। প্রচণ্ড বাতাসে ঘর ভেঙে পড়লে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়।
ফুলবাড়ী ও নাগেশ্বরী (কুড়িগ্রাম) : ফুলবাড়ী ও নাগেশ্বরীতে বজ্রপাতে শ্রমিক লীগ নেতাসহ দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে ফুলবাড়ী উপজেলার ভাঙ্গামোড়ের নজর মামুদ গ্রামে স্থানীয় শ্রমিক লীগ নেতা আবদুল আউয়াল (২৩) মারা যান। নাগেশ্বরীতে বজ্রপাতে নিহত হন আজিজুল হক (৪৯)। তিনি উপজেলার কালীগঞ্জ ইউনিয়নের ফান্দিরভিটা গ্রামের সোলায়মান আলীর ছেলে।
নেত্রকোনা, মোহনগঞ্জ ও পূর্বধলা : সদর, মোহনগঞ্জ ও পূর্বধলা উপজেলায় শুক্রবার সকালে কালবৈশাখী ঝড়ে অন্তত ১০ ইউনিয়নের ৪০টি গ্রামের ছয় শতাধিক বাড়িঘর লণ্ডভণ্ড হয়েছে। এ সময় ঘরের চাপায় আমতলী ইউনিয়নের কাটাখালী গ্রামের কৃষক আবদুল মালেক (৬০) নিহত হয়েছেন। শিলাবৃষ্টিতে ২০ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধানের ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে পূর্বধলায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছেন ছয়জন। কয়েকশ’ গাছ ও বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়েছে। এতে ময়মনসিংহ-জারিয়া রেলপথে প্রায় তিন ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে।
চট্টগ্রাম : ফটিকছড়ি উপজেলায় বজ্রপাতে মোহাম্মদ মালেক (৫৫) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার উপজেলার বাগান বাজার ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের গজারিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। মালেক ওই এলাকার নুরু মিয়ার ছেলে।
হবিগঞ্জ ও নবীগঞ্জ : বানিয়াচংয়ে ঘূর্ণিঝড়ে অর্ধশত কাঁচা বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন অন্তত ১৫ জন। শুক্রবার ভোরে উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এদিকে নবীগঞ্জ উপজেলার করগাঁও ইউনিয়নের রাধানগর গ্রামে সকালে স্থানীয় হাওরে ধান কাটতে গিয়ে রঙ্গরাজ সরকার (৫০) নামে এক কৃষক ধান কাটতে গিয়ে বজ্রপাতে মারা গেছেন। তিনি ওই গ্রামের রসরাজ সরকারের ছেলে।
পরশুরাম ও ফুলগাজী (ফেনী) : শুক্রবার দুপুরে ফুলগাজীর জগৎপুরে বজ্রপাতে তাহমিনা পারভিন (১২) নামে ষষ্ঠ শ্রেণীর এক ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। এ সময় আরও একজন আহত হয়েছেন।
তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) : সকালে শাল্লা উপজেলায় ১০ মিনিটের কালবৈশাখী ঝড়ে শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এ সময় মারা গেছে ১৫টি গরু। এ ছাড়া গাছপালা ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
মহেশখালী : কক্সবাজারের মহেশখালীতে ঝড়ো হওয়ার কবলে পড়ে একটি যাত্রীবাহী ট্রলার নদীতে ডুবে যায়। পরে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ, কোস্টগার্ড ও স্থানীয়রা অভিযান চালিয়ে দুর্ঘটনাকবলিত ট্রলার থেকে যাত্রীদের উদ্ধার করেছে।
কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) : বজ্রপাতে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের শমশেরনগর রেলওয়ে স্টেশনের সিগন্যালিং প্যানেল বোর্ড বিকল হয়ে পড়ে। এতে চট্টগ্রাম-সিলেট চলাচলকারী দু’টি আন্তঃনগর ট্রেন ৬ ঘণ্টা বিলম্ব করে। এদিকে দু’দিনে ঝড়ে কমলগঞ্জে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের খুঁটি ভেঙেছে ৪১টি, হেলে পড়েছে ৩৪টি ও ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়েছে ১৯টি।
কাউনিয়া (রংপুর) : কাউনিয়া উপজেলায় বৃহস্পতিবার রাতে শিলাবৃষ্টিতে হারাগাছ সারাই ইউনিয়নসহ বেশ কিছু গ্রামে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
শ্রীনগর (মুন্সীগঞ্জ) : শ্রীনগরে বজ্রপাতে ছয় ছাত্র গুরুতর আহত হয়েছেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় উপজেলার কুকুটিয়া ইউনিয়নের পূর্ব নাগরভোগ গ্রামের খলিফাবাড়ীর খেলার মাঠ থেকে বাড়ি ফেরার পথে এ ঘটনা ঘটে। আহতরা হলেন- শাহাজালাল, সিফাত, সিজান, আল-আমিন, শওকত ও সোহেল।